Ajker Patrika

‘আওয়ামীপন্থীদের চাপে’ প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগ, ফল স্থগিত

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
আপডেট : ০১ মার্চ ২০২৪, ২০: ২৬
‘আওয়ামীপন্থীদের চাপে’ প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগ, ফল স্থগিত

ভোট গণনা শেষ। ফল ঘোষণার প্রস্তুতি চলছে। এমন সময় আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা দাবি করলেন ভোট পুনর্গণনার। কিন্তু প্রধান নির্বাচন কমিশনার তাতে রাজি নন। এ নিয়ে শুরু হয় হট্টগোল। একপর্যায়ে চাপের মুখে প্রধান নির্বাচন কমিশনার পদত্যাগ করেন। এতে নির্বাচনের ফল ঘোষণা স্থগিত হয়ে গেছে। 

রাজশাহী অ্যাডভোকেট বার সমিতির নির্বাচনে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে এ ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার পর আজ শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে বিএনপি-জামায়াতপন্থী আইনজীবীরা সংবাদ সম্মেলন করে এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন। 

তাঁরা দ্রুত ফল ঘোষণা করারও দাবি জানিয়েছেন। নগরীর সাহেববাজার জিরো পয়েন্ট এলাকার একটি হোটেলের সম্মেলনকক্ষে এই সংবাদ সম্মেলন করা হয়। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বরাবরই দুটি প্যানেলে রাজশাহী বার সমিতির নির্বাচন হয়ে থাকে। এবারও আওয়ামী আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেলে নির্বাচন হয়। মোট ২১টি পদের বিপরীতে দুই প্যানেলের একজন করে প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

আওয়ামী আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের সভাপতি প্রার্থী ছিলেন মো. ইব্রাহিম। আর সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ছিলেন সাইফুর রহমান খান রানা। বিপরীত প্যানেলে সভাপতি পদে আবুল কাশেম ও সাধারণ সম্পাদক পদে জমসেদ আলী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। 

নির্বাচনে মোট ভোটার ছিলেন ৬৮৩ জন। এর মধ্যে ৬৩৭ জন ভোট দেন। ভোট গ্রহণের পর রাতে গণনা শুরু হয়। ১১টি টেবিলে তিনজন করে ভোট গণনা শুরু করেন। এই তিনজনের মধ্যে দুই প্যানেল থেকে দুজন এবং নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে একজন ছিলেন।

গণনার পর বিভিন্ন টেবিল থেকে আসা ফল একত্র করছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শেখ জাহাঙ্গীর সেলিম। রাত সাড়ে ১০টার দিকে তিনি ফল ঘোষণার প্রস্তুতি নেন। এমন সময় আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা আবারও ভোট গণনার দাবি জানান। তখন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এতে অসম্মতি জানান। তিনি বলেন, ফল নিয়ে কোনো আপত্তি থাকলে তাঁরা তিন দিনের মধ্যে আপিল করতে পারবেন। তাঁর এ কথার পর শুরু হয় হট্টগোল।

বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা দাবি করেন, নির্বাচনে তাঁদের প্যানেলের সভাপতি, সম্পাদকসহ ১৯ জন বিজয়ী হয়েছেন। শুধু সদস্য পদে আওয়ামীপন্থী দুজন বিজয়ী হয়েছেন। এ কারণে আওয়ামীপন্থীরা জটিলতার সৃষ্টি করছেন। এ সময় দুই পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কিও শুরু হয়। একপর্যায়ে আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা লাথি দিয়ে ব্যালট বক্স ভেঙে ফেলেন অভিযোগ করেন তাঁরা। এ সময় তাঁরা প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগ দাবি করতে থাকেন।

চাপের মুখে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ফল ঘোষণা না করে রাত ১টার দিকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। এর আগে, তিনি জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদকে ফোন করেন। পরে জেলা প্রশাসক একজন কর্মকর্তাকে পাঠালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ব্যালটগুলো অন্য একটি বক্সে ঢুকিয়ে তাঁর হাতে তুলে দেন। ব্যালট বক্সটি এখন জেলা প্রশাসকের ট্রেজারি শাখায় রয়েছে। 

এ ঘটনার পর আজ সকালে সংবাদ সম্মেলন করেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী আবুল কাশেম, রাজশাহী মহানগর সভাপতি আইনজীবী এরশাদ আলী ঈসা, মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আইনজীবী শফিকুল হক মিলন, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী পারভেজ তৌফিক জাহেদীসহ বিএনপিপন্থী অন্য আইনজীবীরা। 

তাঁরা দাবি করেন, ২১টি পদের মধ্যে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ১৯টিতেই তাঁদের প্যানেলের প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। টেবিলে টেবিলে ভোট গণনার সময় থাকা তাঁদের প্যানেলের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে তাঁরা এই ফল জেনেছেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনারও এই ফল ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তখন আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা দেখেন যে সভাপতি পদে তাঁদের প্রার্থী মাত্র তিন ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হচ্ছেন। তাই তাঁরা ফল পুনর্গণনার দাবি জানান।

একপর্যায়ে নির্বাচনের ফল কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে থাকেন। এই পরিস্থিতিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার পদত্যাগ করেন। তাঁরা এসব ঘটনার প্রতিবাদ জানান। একই সঙ্গে সুষ্ঠুভাবে ভোটের ফল প্রকাশের আহ্বান জানান তাঁরা। 

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের সভাপতি প্রার্থী মো. ইব্রাহিম বলেন, ‘এটা আমাদের বার সমিতির অভ্যন্তরীণ বিষয়। এসব নিয়ে মন্তব্য করা ঠিক না।’ 

বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরা অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তারা সংবাদ সম্মেলন করে কী অভিযোগ তুলেছে, সেটাও জানি না। আগে দেখি, তারপর আমরা কথা বলব।’ 

পদত্যাগ করা প্রধান নির্বাচন কমিশনার শেখ জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, ‘ফল ঘোষণার আগমুহূর্তে আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরাই হট্টগোল করেছেন। তাঁরা অযৌক্তিকভাবে ভোট পুনর্গণনার দাবি জানান। তা না করার কারণে তাঁরা ব্যালট বক্স ভেঙে দেন। আমাকে পদত্যাগের জন্য চাপ দেন। আমি পদত্যাগ করে ব্যালট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ট্রেজারি শাখায় দিয়ে দিয়েছি। এখন এ বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে জেলা প্রশাসন। আমি এসবের মধ্যে নেই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত