Ajker Patrika

দাদন কারবারির অত্যাচারে অতিষ্ঠ অসহায় মানুষ, ডিসি অফিসে লিখিত অভিযোগ

কামারখন্দ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি
দাদন কারবারির অত্যাচারে অতিষ্ঠ অসহায় মানুষ, ডিসি অফিসে লিখিত অভিযোগ

সিরাজগঞ্জের কামারখন্দে সুদ কারবারির অত্যাচারে নিঃস্ব হচ্ছেন অসহায় মানুষ। সুদের টাকা দিতে ব্যর্থ হলে করা হয় মারধর। সুদসহ আসল টাকা ফেরত দেওয়ার পরেও টাকা দাবি করছেন ওই এলাকার হীরাসহ তাঁর চার সহযোগী। এমনকি টাকা না পেয়ে বাড়ি ছাড়ার করার মতো অভিযোগ উঠেছে তাঁদের বিরুদ্ধে। উপজেলার রায়দৌলতপুর ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামে গ্রামের অর্ধশতাধিক এই নির্যাতনের শিকার। 

এদিকে দাদন ব্যবসায়ীর নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে আজ সোমবার দুপুরে জেলা প্রশাসক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। লিখিত অভিযোগের অনুলিপি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও কামারখন্দ থানায় দেওয়া হয়েছে বলে জানান তাঁরা। 

সরেজমিনে রসুলপুর গ্রামে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার ধলেশ্বর গ্রামের মৃত নেজাবত আলী মোল্লার ছেলে হীরা মোল্লার তিন সহযোগী মিলে গড়ে তোলেন দাদনের (সুদ) ব্যবসা। তাঁর অন্য সহযোগীরা হলেন, গোপালপুর গ্রামের মৃত সোহরাব আলীর ছেলে আমিরুল, বাড়াকান্দি গ্রামের ছাখাওয়াতের ছেলে মাসুদ ও ধলেশ্বরের আবু সাইদ। 

তাদের কাছে ১ লাখ টাকা ঋণ চাইলে তার বিপরীতে দেওয়া হয় ৭০ হাজার টাকা। এ ছাড়া প্রতি সপ্তাহে ২ হাজার ৫০০ টাকা সুদ দিতে হয়। কিস্তিতে নগদ টাকাসহ সুদ পরিশোধ করলেও নতুন করে তাঁরা টাকা দাবি করে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। 

এদিকে টাকা পরিশোধ করার পরেও রানা মন্ডল নামের এক ভ্যান চালককে তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয়রা দাদন ব্যবসায়ী হীরা, মাসুদ ও আমিরুলকে আটক করে। কিন্তু কৌশলে মাসুদ পালিয়ে যান। এরপর স্থানীয়রা হীরা ও আমিরুলের ভিডিও বক্তব্য নিয়ে তাদেরকে ছেড়ে দেন। 

স্থানীয় দাদন কারবারির হাত থেকে রক্ষা পেতে পরামর্শ করছেন রসুলপুর গ্রামের ভুক্তভোগীরা। ছবি: আজকের পত্রিকারানা মন্ডল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘৭০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলাম। টাকা পরিশোধ করেছি। কিন্তু হঠাৎ করে কল দিয়ে তারা আমাকে বলছে, ‘‘টাকা দেও না কেন?’ ’ আমি বললাম, টাকা তো আমিরুল ভাইয়ের কাছে পরিশোধ করেছি। তখন আমাকে তারা গালাগালি শুরু করে। এরপর কাজ থেকে ফেরার পথে আমাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তখন এলাকাবাসী হীরা, আমিরুল ও মাসুদকে আটক করে।’ 

সেলিম নামের এক ভ্যানচালক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ভ্যান গাড়ি হারিয়ে যাওয়ার পরে আরেকটি ভ্যান কেনার জন্য তাদের কাছে থেকে ৩০ হাজার টাকা চাই। কিন্তু ৩০ হাজার টাকার ৪ হাজার টাকা সুদ সঙ্গে সঙ্গে কেটে নিয়ে আমাকে ২৬ হাজার টাকা দেয়। কিছুদিন সুদ ও টাকা দেওয়ার পরে আবার নতুন সেই গাড়িটিও হারিয়ে যায়। পরে ঢাকা চলে যাই। ঢাকা থেকে আসার পরে আমাকে তাঁরা বাঁশতলা একটি দোকানে আটকিয়ে রেখে মারধর করে। সুদসহ ৫০-৬০ হাজার টাকা পরিশোধ করার পরেও তারা আমার কাছে নতুন করে টাকা দাবি করছে।’ 

মশিউর রহমান নামের আরেক ভুক্তভোগী বলেন, ‘জামতৈল যাওয়ার জন্য বের হই। ধলেশ্বর তালতলা বাজারে পৌঁছালে তারা আমাকে থামিয়ে একটি কক্ষে নিয়ে যায়। সেখানে টাকা দাবি করে। আমি সুদসহ টাকা পরিশোধের বিষয়টি বললে আমাকে তারা মারধর করে এবং জোড়পূর্বক একটি চেকে স্বাক্ষর নেয়। স্বাক্ষর নিয়ে ১৮ লাখ টাকার মামলা দেয়।’ 

ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী গোলাম মওলা বলেন, ‘কৃষক, ভ্যানচালক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীসহ প্রায় ৫০ জন হীরাদের কাছে টাকা নিয়েছে। বেশির ভাগ মানুষ সুদসহ তাদের টাকা ফেরত দিয়েছে। এরপরও তারা টাকা দাবি করে। তাদের জন্য ভ্যান চালকেরা ঠিকমতো বের হয়ে কাজ করতে পারে না। যেখানে পায় সেখানেই চড়থাপ্পড় মারে। তাদের অত্যাচারে ৫-৬টি পরিবার বাড়ি থেকে পালিয়েছে। এ ছাড়া আরিফুল নামের এক ছেলেকে শারীরিকভাবে আঘাত করে। এ জন্য তার কিডনিতে সমস্যা হয়েছে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘আমি ৬৭ হাজার টাকা নিয়েছিলাম দুই লাখ টাকার বেশি টাকা পরিশোধ করেছি। এরপরও তারা টাকা দাবি করছে। টাকা না দিতে চাইলে তারা আমাকে মারধর করে এবং জোড় করে চেকের ওপরে স্বাক্ষর নিয়ে রাখে।’ 

উপজেলার রায়দৌলতপুর ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামে গ্রামের অর্ধশতাধিক এই নির্যাতনের শিকার। ছবি: আজকের পত্রিকারায়দৌলতপুর ইউনিয়নের পরিষদের ১,২, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মহিলা মেম্বার শিউলি বেগম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘রসুলপুর এলাকার কৃষক, ভ্যানচালক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা সহজ সরল না বুঝে টাকা নিয়েছে। হীরা, মাসুদ, আমিরুল ও সাইদ মানুষকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে। ওদের অত্যাচারে এলাকার অনেক মানুষ পলাতক।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচনের সময় আমি ১ লাখ টাকা ঋণ চেয়েছিলাম। ১ লাখ টাকার পরিবর্তে তারা আমাকে ৭০ হাজার টাকা দিয়েছিল। পরে সুদসহ ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা পরিশোধ করেছি।’ 

রায়দৌলতপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ আকন্দ বলেন, ‘সুদ যারা নেয় এবং যারা দেয় তারা দুজনেই সমান অপরাধী। রসুলপুর গ্রামের মানুষ যে হীরাদের দ্বারা অত্যাচারিত হয়েছে এটা আমি জানি না। আমাকে কেউ জানায়নি। তবে উভয় পক্ষ আসলে বিষয়টি নিয়ে কম বেশি করে দেওয়া যাবে।’ 

এদিকে এ বিষয়ে জানতে দাদন (সুদ) ব্যবসায়ী হীরার ব্যবহৃত মোবাইল কল দেওয়া হয়। এ সময় তিনি সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর তিনি ‘পরে কথা বলব’ বলে কল কেটে দেন। এরপর একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেনি। 

হীরার আরেক সহযোগী আমিরুল বলেন, ‘হীরা আমার স্কুল জীবনের বন্ধু। এ জন্য রসুলপুর গিয়েছিলাম তবে এসব কাজের সঙ্গে আমি জড়িত না। কেন যে আমাকে এ কাজে জড়িয়েছে বিষয়টি বুঝতে পারছি না।’ 

কামারখন্দ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুর নবী প্রধান বলেন, ‘অনুলিপির কপিটি অফিশিয়ালি এখনো হাতে পাইনি। হাতে পাওয়ার পর বিষয়টি জানানো যাবে।’ 

কামারখন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মেরিনা সুলতানা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ডিসি স্যারের কাছে আবেদন দিলে ওইটা আমার কাছে তদন্তের জন্য আসবে। তখন তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিয়ের আসরে কনে বদল, মেয়ের জায়গায় মা

মির্জা ফখরুলের কাছে অভিযোগ, ১৬ দিনের মাথায় ঠাকুরগাঁও থানার ওসি বদলি

বদলির পর ঠাকুরগাঁওয়ের ওসির পোস্ট: ‘বুঝলে বুঝ, না বুঝলে খেয়ে নে তরমুজ’

এক ফ্যাসিস্ট নেত্রীর পাল্লায় পড়ে পুলিশ খারাপ হয়েছিল: এসপি

কাশ্মীর নিয়ে ভারতের সঙ্গে দ্বন্দ্বের প্রসঙ্গ বাংলাদেশের কাছে তুলল পাকিস্তান

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত