Ajker Patrika

মুচলেকার পরও ছুটি ছাড়া বিদেশে প্রধান শিক্ষক

বড়াইগ্রাম (নাটোর) প্রতিনিধি 
মুচলেকার পরও ছুটি ছাড়া বিদেশে প্রধান শিক্ষক

মুচলেকা দিয়েও বিনা ছুটিতে বিদেশ যাওয়া বন্ধ করেননি নাটোরের লালপুর উপজেলার ওয়ালিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মাওলানা আব্দুস সাত্তার। আবারও ছুটি না নিয়েই সৌদি আরব গেছেন তিনি। এমনকি যাওয়ার আগে তাঁর দায়িত্ব কাউকে বুঝিয়েও দেননি।

জানা গেছে, প্রতিবছরই তিনি হজ মৌসুমে মোয়াল্লেম হিসেবে হাজিদের বহর নিয়ে সৌদি আরবে যান। ২০১৯ সালে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠায় তিনি আর কখনো এভাবে হজে যাবেন না মর্মে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে মুচলেকা দিয়ে রক্ষা পান। কিন্তু মুচলেকা দিয়েও সেটি মানেননি ওই শিক্ষক। তিনি হজের পাশাপাশি এখন ওমরাহর দায়িত্বও নিয়েছেন।

বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা বলছেন, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে থাকা অবস্থায় তিনি (আব্দুস সাত্তার) ১২ ডিসেম্বর ওমরার বহর নিয়ে সৌদি আরব গেছেন। কিন্তু তাঁর অনুপস্থিতকালে দায়িত্ব পালনের জন্য কাউকে বলে যাননি। অথচ এখন প্রতিষ্ঠানে নবম শ্রেণির রেজিস্ট্রেশন, এসএসসি-২৫ ব্যাচের ফরম পূরণসহ যাবতীয় কাজ চলমান। পরে গত রোববার সহকারী শিক্ষক রফিকুজ্জামানকে সাময়িক দায়িত্ব দিয়েছেন পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও লালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

বিদ্যালয় সূত্র জানা গেছে, নিয়মিত প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক অবসরে যাওয়ায় জ্যেষ্ঠ সহকারী শিক্ষক হিসেবে মাওলানা আব্দুস সাত্তারকে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। আব্দুস সাত্তার বেশ কয়েক বছর ধরে মুয়াল্লিম হিসেবে ওমরাহ ও জিলহজ মাসে হজ কাফেলা নিয়ে সৌদি যান। অন্য বছরের মতো এ বছরও তিনি ছুটি ছাড়াই ৪৭ জনের একটি কাফেলা নিয়ে হজে গেছেন। তিনি বর্তমানে সৌদি আরবে অবস্থান করছেন বলে বিদ্যালয়টির একাধিক শিক্ষক জানিয়েছেন।

বিদ্যালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ সহকারী শিক্ষক বলেন, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুস সাত্তার ব্যবসা করেন। তিনি মুয়াল্লিম হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে ওমরাহ ও হজ কাফেলা নিয়ে সৌদি যান। এ নিয়ে ২০১৯ সালে অভিযোগ হলে তিনি আর মুয়াল্লিম হিসেবে সৌদিতে যাবেন না মর্মে জেলা শিক্ষা অফিসে মুচলেকা দিয়ে আসেন। এবার আবারও ছুটি না নিয়ে কাউকে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব না দিয়ে তিনি সৌদিতে অবস্থান করছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘স্কুলটির প্রধান ও সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য থাকলেও নানা জটিলতায় স্থায়ী নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না। জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে যাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তিনি ধর্মীয় শিক্ষক হলেও বিদ্যালয়ের দায়িত্বে বরাবরই ফাঁকিবাজ। তিনি প্রতিবছর মোয়াল্লেম হিসেবে হজে ও নানান সময় ওমরায় যান। বুঝি না, এই ছুটির কোনো বিধান আছে কি না।’

তাঁরা আরও বলেন, ‘বিধিমোতাবেক একজন দায়িত্ববান শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক করলে আমাদের মনে হয়, বিদ্যালয়টি বাঁচত।’

সাময়িক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক রফিকুজ্জামান বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক লিখিতভাবে ছুটি না নিয়েই সৌদিতে অবস্থান করছেন। দাপ্তরিক কাজ চালিয়ে নিতে তাঁর ফিরে না আসা পর্যন্ত আমাকে সাময়িকভাবে দায়িত্ব দিয়েছে কমিটি।’

জানতে চাইলে লালপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ওয়াজেদ আলী মৃধা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে অপরজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি দেশে ফিরলে বিধিমোতাবেক বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বিদ্যালয়ের সভাপতি ও লালপুর ইউএনও মেহেদী হাসান বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুস সাত্তার সৌদিতে অবস্থান করছেন। এই অবস্থায় তাঁর ফিরে না আসা পর্যন্ত বিদ্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য জ্যেষ্ঠতম সহকারী শিক্ষককে সাময়িক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি ফিরে এলে বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

লুটপাটে শেষ ৫ কোটির প্রকল্প

‘ওরা সোনার তৈরি, আমরা মাটির’, কারখানার ভেতর আত্মহত্যার আগে শ্রমিকের ফেসবুক পোস্ট

দিনাজপুরে হিন্দু নেতাকে অপহরণ করে হত্যা: ভারত সরকার ও বিরোধী দল কংগ্রেসের উদ্বেগ

যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৫ হাজার শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল, বেশির ভাগই ভারতীয়, আছে বাংলাদেশিও

আজ থেকে ৫০০ টাকায় মিলবে ১০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত