Ajker Patrika

মানবতার নিঃস্বার্থ সেবায় পরিতোষ

আবুল কাসেম, সাতক্ষীরা 
সাইকেলে বাঁধা থাকে হারিকেন। সকাল ৭টায় বাড়ি থেকে বের হন। সারা দিন মানুষের চুল-দাড়ি কেটে রাতে ফেরেন বাড়িতে। ছবি: আজকের পত্রিকা
সাইকেলে বাঁধা থাকে হারিকেন। সকাল ৭টায় বাড়ি থেকে বের হন। সারা দিন মানুষের চুল-দাড়ি কেটে রাতে ফেরেন বাড়িতে। ছবি: আজকের পত্রিকা

ষাট বছরের বেশি সময় ধরে মাত্র ২-৫ টাকার বিনিময়ে চুল কেটে মানুষকে সেবা দিয়ে চলেছেন সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার কৃষ্ণনগরের পরিতোষ রায়। বয়স ৭৫ পেরোলেও হারিকেন আর কাঁচি নিয়ে প্রতিদিন ভোরে বের হন তিনি। বয়সের ভারে ন্যুব্জ হলেও মানসিক দৃঢ়তায় তিনি এখনো দাপিয়ে বেড়ান পুরো এলাকা। কখনো রাস্তায়, কখনো কারও বারান্দায় বা উঠানে বসেই কাটেন মানুষের চুল ও দাড়ি।

অভাব-অনটন কিংবা অর্থের লোভ তাঁকে স্পর্শ করেনি কখনো। এলাকার বাসিন্দাদের মতে, মানবতার এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন পরিতোষ রায়। তাই তাঁকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি তুলেছেন স্থানীয়রা।

কখনো রাস্তায়, কখনো কারও বারান্দায় বা উঠানে বসেই কাটেন মানুষের চুল ও দাড়ি। ছবি: আজকের পত্রিকা
কখনো রাস্তায়, কখনো কারও বারান্দায় বা উঠানে বসেই কাটেন মানুষের চুল ও দাড়ি। ছবি: আজকের পত্রিকা

পরিতোষ রায়ের স্ত্রী কমলা রায় বলেন, ‘সকাল ৭টায় বাড়ি থেকে বের হন চুল কাটতে। সাইকেলে বাঁধা থাকে সেই হারিকেন, যেটা তিনি সারা জীবনই কাছে রাখেন। কখনো রাস্তায়, কখনো বাড়ির বারান্দায় আবার কখনো কারও উঠানে তিনি চুল-দাড়ি কাটেন। অনেকে আবার টাকাও দেন না। কিন্তু চুল কেটে কারও কাছ থেকে টাকা চেয়ে নিয়েছেন এমন নজির নেই।’

কৃষ্ণনগর গ্রামের বাসিন্দা স্কুলশিক্ষক আহমেদ আলী বলেন, ‘পরিতোষ কাকা ৬০ বছর ধরে চুল কাটছেন। আমার ছোটবেলায় দেখেছি, আমার চুল কাটিয়ে বাবা ওনাকে ৫ টাকা দিয়েছে। ২৫-৩০ বছর পরেও উনি এখনো ৫ টাকায় চুল কাটছেন। এত কমদামে আর কেউ চুল কাটে কি না, জানা নেই। একটি চকলেটের দাম ৫ টাকারও বেশি, সিএনজিতে ন্যূনতম ১০ টাকা ভাড়া, সেখানে ৫ টাকায় চুল কাটা বিস্ময়কর। এ ছাড়া চুল কাটাতে ওনার কাছে হিন্দু-মুসলিম ভেদাভেদ নেই। এমনকি খুবই অসুস্থ রুগীকেও উনি চুল কেটে দেন।’

কৃষ্ণনগর বাজারের ব্যবসায়ী নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘আমি ৩০ বছর ধরে পরিতোষ কাকার কাছে চুল কাটি। ওনার চুল কাটার সুনাম আছে। কখনো দেখিনি কারও কাছে উনি টাকা চেয়েছেন। টাকা দিলেও কাটে, না দিলেও কাটে। প্রবীণ মানুষ। ওনার কাছ থেকে চুল কাটা শিখে দেশের বিভিন্ন জায়গায় অনেকে সেলুন দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিদ্যুৎ না থাকলেও সমস্যা নেই। পরিতোষ বাবু তার নিজস্ব হারিকেন জ্বালিয়ে চুল কেটে দেন। তার মধ্যে কষ্ট বলে কিছু নেই। উনি সব সময় চুল কাটতে প্রস্তুত।’

কখনো রাস্তায়, কখনো কারও বারান্দায় বা উঠানে বসেই কাটেন মানুষের চুল ও দাড়ি। ছবি: আজকের পত্রিকা
কখনো রাস্তায়, কখনো কারও বারান্দায় বা উঠানে বসেই কাটেন মানুষের চুল ও দাড়ি। ছবি: আজকের পত্রিকা

এক ছেলে ও দুই মেয়েসন্তানের জনক পরিতোষ রায় বলেন, ‘এটা আমার বাপ-দাদার মহান পেশা। পাকিস্তান আমল থেকে আমি এটা করি। ৬০-৬২ বছর ধরে আমার চুল কাটার বয়স। আর রাতের হিসাব আলাদা। অনেকবার সারা রাত ধরে চুল কেটেছি। হিন্দু-মুসলমান জাতির খেদমত আমি করি। ২-৫ টাকা যা দেয়, তাতেই আমি খুশি।’

বয়সের ভারে ন্যুব্জ হলেও মানুষের প্রতি ভালোবাসায় ক্লান্তিহীন মানুষটিকে সরকারি বা বেসরকারি স্বীকৃতি দেওয়া উচিত বলেই মনে করেন এলাকাবাসী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কৌশলে বিনিয়োগ সরাচ্ছে বহুজাতিক কোম্পানি

বিমান বিধ্বস্ত: এক ঘণ্টা পর উদ্ধার হন পাইলট, তখনো বেঁচে ছিলেন

মোহাম্মদপুর থানায় ভুক্তভোগীকে হেনস্তা: চার পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার, ৩ ছিনতাইকারী গ্রেপ্তার

‘ওসি হয়েও আমার কম দামি ফোন, দামি ফোন নিয়ে ঘুরলে ছিনতাই তো হবেই’, ভুক্তভোগীকে মোহাম্মদপুরের ওসি

রংপুরের ১০ কিমি সড়কে ৩৬৫ টন পাথর উধাও

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত