Ajker Patrika

ডলার সংকটে আমদানিতে ভাটার শঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
আপডেট : ১৪ নভেম্বর ২০২২, ১৮: ৪৯
Thumbnail image

রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জের ব্যাংকগুলোতে দেখা দিয়েছে ডলারের সংকট। এতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পণ্য আমদানিতে ভাটা পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন আমদানিকারকেরা।

তাঁরা বলছেন, ডলারের অভাবে অনেক আমদানিকারক লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) খুলতে পারছেন না। এখন ভারত থেকে যেসব পণ্য আসছে তা অন্তত এক মাস আগে খোলা এলসির মাধ্যমে। নতুন করে এলসি খোলা যাচ্ছে না বলে মাসখানেক পর আমদানি অনেক কমে যাবে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের রাজশাহী শাখার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বাণিজ্যিক এলসি খোলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নিষেধ করা হয়নি। তাই এলসি খোলার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা নেই।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) হলো আন্তর্জাতিক বাজার থেকে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে আমদানিকারকের পক্ষ থেকে রপ্তানিকারককে মূল্য পরিশোধের নিশ্চয়তাপত্র। আমদানিকারকের পক্ষ থেকে রপ্তানিকারককে এই নিশ্চয়তাপত্র দেয় স্থানীয় কোনো ব্যাংক। নিশ্চয়তাপত্রের মাধ্যমে ব্যাংক পণ্যের মূল্য পরিশোধ করা হয় ডলারে। ডলার সংকটের কারণে গত মাসের শেষের দিক থেকে রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জের ব্যাংকগুলো আমদানিকারকদের পক্ষে কোনো এলসি ইস্যু করতে পারছে না। 

স্থলবন্দরের আমদানিকারক মো. মিজান গত মাসের শেষের দিক থেকেই অগ্রণী ব্যাংকের রাজশাহী শাখায় ঘুরছেন এলসি খোলার জন্য। কিন্তু ডলার সংকটের কারণে এলসি খুলতে পারেননি তিনি। মিজান বলেন, ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েই আমরা ব্যবসা করি। ব্যাংকে ঋণের সুদ ঠিকই বাড়ছে। কর্মচারীদের বেতনও দিতে হচ্ছে। কিন্তু ব্যবসা করতে পারছি না। মিজানের দাবি, তিনি একা নন, তার মতো আরও অনেক ব্যবসায়ী এলসি খুলতে পারছেন না। 

স্থলবন্দরের আমদানিকারক মো. মিজান বলেন, ব্যবসায়ীরা এক ব্যাংক থেকে তারা আরেক ব্যাংকে ছুটে বেড়াচ্ছেন। ব্যাংকে গিয়ে শুনছেন, ডলার নেই। এলসি খোলা যাচ্ছে না। গত মাসের শেষের দিক থেকেই অগ্রণী ব্যাংকের রাজশাহী শাখায় ঘুরছি এলসি খোলার জন্য। কিন্তু ডলার সংকটের কারণে এলসি খুলতে পারিনি। তাই ভারত থেকে নতুন পণ্যের অর্ডারই করতে পারছি না। একরকম বেকার হয়ে বসে আছি।’ 

রাজশাহী শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতি মাসুদুর রহমান রিংকু বলেন, ‘রাজশাহীর কোনো ব্যাংকেই এখন ডলার নেই। শুনছি, ব্যাংকগুলোর সব ডলার ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছে। তাহলে এখানকার ব্যবসায়ীদের কী হবে? আমরা ব্যবসায়ী সংগঠনের পক্ষ থেকে চলতি মাসের শুরুতেই এলসি সমস্যার সমাধানের দাবি জানিয়ে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দিয়েছি।’ 

সোনামসজিদ স্থলবন্দরের শুল্ক স্টেশনের উপকমিশনার প্রভাত কুমার সিংহ বলেন, ‘আগে প্রতিদিন এই বন্দর দিয়ে দিয়ে ভারত থেকে প্রায় ৩০০ ট্রাক মালামাল আসত। এখন গড়ে ২৫০ ট্রাক মালামাল আসে। এলসি খোলার পর প্রায় এক মাস লাগে পণ্য আসতে। এখন যেসব পণ্য আসছে সেগুলো অন্তত এক মাস আগের এলসির। আমরা শুনেছি নানা জটিলতায় ব্যবসায়ীরা এলসি খুলতে পারছেন না। এখন এলসি খোলা না গেলে তার প্রভাব আরও ২০-২৫ দিন পর দেখা যাবে। 

এ নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের রাজশাহী শাখার পরিচালক (প্রশাসক) মজিবুর রহমান বলেন, ‘আমাদের এখান থেকে এলসি নিয়ে কোনো বাধা নেই। আমরা এর বেশি কিছু বলতে পারব না। এ বিষয়ে ঢাকা থেকে আমাদের মুখপাত্র আরও ভালো বলতে পারবেন।’ 

এ বিষয়ে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘বাণিজ্যিক এলসি খোলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো নিষেধ নেই। বেসরকারি ব্যাংকগুলো নিজস্ব বৈদেশিক মুদ্রার মাধ্যমে এলসি খুলতে পারবে। নীতিমালা অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংক শুধু তদারকি করবে। এ ক্ষেত্রে জ্বালানি, সার ও খাদ্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক সব ধরনের সহায়তা দিয়ে আসছে এবং দিয়েও যাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত