Ajker Patrika

সরকারি খামারের গরু বিক্রির নিলামে সিন্ডিকেট, তদন্তও দায়সারা 

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
সরকারি খামারের গরু বিক্রির নিলামে সিন্ডিকেট, তদন্তও দায়সারা 

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার রাজাবাড়ীহাটে অবস্থিত আঞ্চলিক দুগ্ধ ও গবাদি উন্নয়ন খামারের ৪০টি গরু বিক্রির নিলামে অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি খামারের কর্মকর্তাদের বাঁচাতে দায়সারা তদন্ত করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। 

আজ মঙ্গলবার প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি খামারে গিয়ে এই তদন্ত করে। তদন্ত কমিটির প্রধান ছিলেন নাটোর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. গোলাম মোস্তফা। 

এর আগে গত মঙ্গলবার সরকারি এ খামার থেকে ৪০টি গরু নিলামে বিক্রি করা হয়। এই নিলামে অংশ নিতে প্রায় ৪০০ জন ব্যাংক ড্রাফটের মাধ্যমে জামানত জমা দেন। কিন্তু এলাকার একটি প্রভাবশালী চক্র কাউকেই নিলামে অংশ নিতে দেয়নি। কেউ অংশগ্রহণ করতে গেলে তাঁকে বাধা দেওয়া হয়। এভাবে সরকার নির্ধারিত সর্বনিম্ন মূল্যের চেয়ে মাত্র ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা বেশি দিয়ে গরুগুলো কিনে নেয় সিন্ডিকেটটি। এই সিন্ডিকেটের হোতা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি সালমান ফিরোজ ফয়সাল ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। 

সূত্র জানায়, মোট ৪০টি গরুর মধ্যে এই সিন্ডিকেটই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় হাতিয়ে নেয় ৩০টি গরু। দ্বিতীয়বার নিলাম করার পর গরু বিক্রি করে যে লাভ হয়, সে টাকার অর্ধেক হারিয়ে গেছে বলে সিন্ডিকেটের অন্য সদস্যদের কাছে দাবি করেন সালমান ফিরোজ ফয়সাল। এভাবে লাভের টাকাও আত্মসাতের চেষ্টা করেন সাবেক এই ছাত্রলীগ নেতা। নিলামে আসা অন্য ১০টি গরুর মধ্যে ৫টি নেন খামারের কর্মকর্তারাই। কয়েকদিন ধরে এই গরুগুলো খামারেই রাখা ছিল। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেছেন, বাকি ৫টি গরু জনপ্রতিনিধি ও পুলিশ-প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। তবে তা পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। 

এ বিষয়ে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা সালমান ফিরোজ ফয়সাল বলেন, সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে সামান্য বেশি দরে গরু কিনতে খামার কর্তৃপক্ষই তাঁদের সহযোগিতা করেছে। তাঁদের সহযোগিতা ছিল বলেই প্রথম দফায় গরু কেনার পর একই স্থানে তাঁরা দ্বিতীয় দফায় নিলামে বাকি গরুগুলো বিক্রি করেছেন। 

নিলামে নামমাত্র মূল্যে কর্মকর্তাদেরই ৫টি গরু কেনার বিষয়টি অস্বীকার করেন খামারের উপপরিচালক ডা. আতিকুর রহমান। তবে নিলামের দিন খামারের অস্থায়ী চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী কামরুজ্জামান বাদশাকেই নিলামে গরু কিনতে দেখা গেছে। বাদশা ওই সিন্ডিকেটের হয়েই সব গরু কিনছিলেন। এ নিয়ে ১১ অক্টোবর গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে বিষয়টি প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মো. এমদাদুল হক তালুকদারের নজরে আসে। পরে তাঁর নির্দেশনায় সেদিনই বিষয়টি তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে দেন অধিদপ্তরের প্রশাসন শাখার উপপরিচালক ডা. মো. মাহবুবুল আলম ভুঁঞা। 

তদন্ত কমিটির সূত্র জানিয়েছে, ‘মঙ্গলবার নিলামের সময় কোনো সিন্ডিকেট ছিল কি না সেটুকুই তদন্ত করেছে কমিটি। তদন্ত কমিটি অমিত হাসান নামের এক কৃষকের সঙ্গে কথা বলেছে। এই অমিত সিন্ডিকেটের বাইরে নিলামে অংশ নিলে তাঁকে বাধা দেওয়া হয়েছিল। তদন্ত কমিটির কাছে তিনি তা জানিয়েছেন। তবে সিন্ডিকেটকে সহযোগিতা করা এবং কর্মকর্তাদেরই ৫টি গরু কেনার বিষয়টি তদন্ত করেনি কমিটি। এভাবে দায়সারা তদন্ত করা হয়েছে।’ 

কর্মকর্তাদেরই গরু কেনার বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির প্রধান ডা. গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘গরু নিলাম করার সময় কেউ বাধাগ্রস্ত হয়েছেন কি না শুধু এটুকু তদন্তের জন্য আমি এসেছি। আর কিছু আমি দেখব না।’ 

সিন্ডিকেটের হয়ে খামার কর্মচারী বাদশার গরুর দাম হাঁকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা তদন্ত করেছি। সুপারিশসহ অধিদপ্তরে একটা প্রতিবেদন দিয়ে দেব। সেখান থেকে পরে সবকিছুই জানা যাবে। এখন আর বলব না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইতিহাস দরজায় কড়া নেড়ে বলছে, ১৯৭১ থেকে পাকিস্তান কি শেখেনি কিছুই

‘আমাদের মরদেহ বাড়িতে নিয়ো না’

কৃষি ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের খামারবাড়ি অবরোধের ঘোষণা

মারধর করে ছাত্রলীগ কর্মীর পিঠে পাড়া দিয়ে অটোরিকশায় শহর ঘোরাল ছাত্রদল, সঙ্গে উচ্চ স্বরে গান

যশোরে আত্মগোপনে থাকা আ.লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বাড়িতে পুলিশের অভিযান

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত