Ajker Patrika

মৌ চাষ করে মাসে ৫০ হাজার টাকা আয় করে ১৬ বছরের আশিক

দুর্গাপুর (রাজশাহী) প্রতিনিধি
আপডেট : ১১ জানুয়ারি ২০২৪, ১৯: ৪০
মৌ চাষ করে মাসে ৫০ হাজার টাকা আয় করে ১৬ বছরের আশিক

অভাবে সংসারে টাকার জোগান না থাকায় অষ্টম শ্রেণিতে পড়াশোনা থেমে যায় আশিকুর রহমান আশিকের (১৬)। পরে দুলাভাইয়ের পরামর্শে এনজিও থেকে ৫০ হাজার ঋণ নেয় আশিক। কিনে ফেলে ২০টি মৌ-বাক্স। এরপর পুরোদমে মৌ চাষে আত্মনিয়োগ করে মেধা ও বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে এখন সে সফল। 

শূন্য থেকে লাখপতি আশিকের স্বপ্ন এখনো বহু পথ পাড়ি দেওয়ার। ১০টি থেকে আশিকের এখন মৌ-বাক্স প্রায় ১০০টি। প্রতি মাসে এখন তার আয় ৫০ হাজার টাকা। আশিকের বাড়ি রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার আলীপুর গ্রামে। তার বাবা আবু কালাম একজন দিনমজুর। অল্প বয়সে আশিকের সফলতা দেখে তার দেখানো পথে অনেকেই মধুর খামার গড়ে তুলেছেন। 

উপজেলার কাশিপুর গ্রামের একটি মাঠে গিয়ে দেখা যায়, মাঠজুড়ে শুধু সরিষা ফুল। ফুলে ফুলে মৌমাছিরা আনাগোনা করছে। মৌমাছি সরিষার ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে এসব বাক্সে জমা করছে। প্রতিটি বাক্সের উপরিভাগ কালো পলিথিন দিয়ে মোড়ানো। কালো পলিথিনের মোড়ক খুলে মৌ-বাক্স থেকে কাঠের ফ্রেমে ধরে থাকা মৌচাক বের করা হচ্ছে। এরপর মধু আহরণ যন্ত্র দিয়ে চাক থেকে মধু বের করে নিচ্ছেন আশিক। 

তরুণ আশিক জানায়, দুটি গ্রামের তিনটি মাঠে তার মৌ-বাক্স রয়েছে। প্রথমে ১০টি মৌ-বাক্স দিয়ে খামার শুরু করলেও এখন শতাধিক মৌ-বাক্স রয়েছে। প্রতি ১০ দিন অন্তর গড়ে সাড়ে তিন থেকে চার মণ মধু উৎপাদিত হচ্ছে তার। মধু বিক্রি করে প্রতি মাসে আয় করে ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা। শুরুতে দেশীয় মৌমাছি নিয়ে চাষ শুরু করে আশিক। পরে চায়না জাতের মৌমাছি কিনে আনে। এর পর থেকে তাকে আর ভাবতে হয়নি। দেশীয় জাতের মৌমাছির থেকে চায়না জাতের মৌমাছিতে অনেক মধু সংগ্রহ করতে সক্ষম। 

আশিক বলে, ‘পরিবারের পুরো ভার আমার কাঁধে। তাই অষ্টম শ্রেণিতে উঠে আর স্কুলে যাইনি। পরিবারে মা, বাবা ও ভাইবোন আছে। সংসারে অভাবের কারণে তখন পড়ালেখা বাদ দিয়ে নানা কাজে ঝুঁকে পড়ি। তবে অল্প বয়স হওয়ায় সেসব কাজে তেমন সফলতা পাইনি। পরে দুলাভাইয়ের পরামর্শে এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে মৌ-বাক্স কিনি। যদিও এ বিষয়ে আমার কোনো প্রশিক্ষণ ছিল না। তবে দুলাভাইয়ের পরামর্শ এবং আমার মেধা ও দক্ষতা কাজে লাগাই।’ 

সরিষাখেতে মৌচাকের পরিচর্যায় ব্যস্ত উদ্যোক্তা আশিকুর রহমান। দুর্গাপুরের কাশিপুর গ্রামে। ছবি: আজকের পত্রিকাআশিক আরও বলে, ‘সারা বছরই মধু সংগ্রহ করা হয়। এখন সরিষা থেকে মধু সংগ্রহ করা হচ্ছে। সরিষার প্রতি কেজি মধু খুচরা ৬০০ টাকা, আর পাইকারি ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। অনেকেই মাঠ থেকেই মধু কিনে নিচ্ছেন। প্রতি মাসে গড়ে ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকার মধু বিক্রি হচ্ছে।’ 

সরিষার মৌসুম শেষ হলে আশিক দিনাজপুর ও রংপুর জেলায় যাবে। সেখানে লিচু, কালিজিরা, ধনিয়া ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করবে। সরিষার ফুলের চেয়ে কালিজিরা ও ধনিয়া ফুলের মধুর দাম আরও বেশি বলে জানায় সে। 

দুর্গাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কুন্তলা ঘোষ বলেন, খুব অল্প বয়সে আশিক মৌ চাষে সফলতা দেখিয়েছে। এটা অন্যদের জন্য অনুপ্রেরণা জোগাবে। উপজেলা কৃষি বিভাগ মৌ চাষে নানা ধরনের পরামর্শ দিয়ে থাকে। মৌ চাষ লাভজনক হওয়ায় উপজেলায় অনেক বেকার যুবক মৌ চাষে আত্মনিয়োগ করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত