Ajker Patrika

গাজীপুরের কাপাসিয়া

সরকারি ওষুধ গুদামেই নষ্ট, বঞ্চিত রোগীরা

  • উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মজুত থাকা সরকারি বিপুল ওষুধ নষ্ট হয়ে গেছে।
  • সময়মতো রোগীদের না দেওয়ায় ওষুধের মেয়াদ উত্তীর্ণ।
আনিসুল ইসলাম কাপাসিয়া (গাজীপুর) 
কাপাসিয়া হাসপাতালের গুদামে থাকা মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ। ছবি: আজকের পত্রিকা
কাপাসিয়া হাসপাতালের গুদামে থাকা মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ। ছবি: আজকের পত্রিকা

গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মজুত থাকা সরকারি বিপুল ওষুধ নষ্ট হয়ে গেছে। সময়মতো রোগীদের মাঝে বিতরণ না করায় ওষুধগুলোর মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে বলে জানা গেছে। এতে সরকারি সম্পদের ক্ষতি হয়েছে; একই সঙ্গে সরকারি সেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছে হাজারো রোগী।

গতকাল রোববার দুপুরে হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, স্টোরে ওষুধ রাখার র‍্যাকগুলোতে কার্টনে সাজিয়ে রাখা রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ। কিছু ওষুধ স্টোরের মেঝেতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। যা মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে ব্যবহারের অনুপযোগী।

হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নিতে আসা জোসনা বেগম বলেন, ‘গত এক বছরে আমি কয়েকবার এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছি, কিন্তু তারা কোনো ওষুধ আমাকে সরবরাহ করতে পারেনি। অথচ জানতে পারলাম, হাসপাতালে বহু ওষুধ মেয়াদোত্তীর্ণ। যারা এই অন্যায় কাজ করেছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া দরকার।’

জানা যায়, এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সপ্তাহে পাঁচ দিন সিজারিয়ান অপারেশনের ব্যবস্থা রয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে বারিষাব ইউনিয়নের বেলায়েত হোসেনের স্ত্রীর সিজারিয়ান অপারেশন হয়। সেই অপারেশনে তাঁদের পাঁচ হাজার টাকার মতো চিকিৎসা ব্যয় হয়। তার মধ্যে আড়াই হাজার টাকার ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হয়েছে। এত ওষুধ মজুত থাকা সত্ত্বেও কেন রোগীদের সেবার কাজে ওষুধগুলো বিতরণ করা হয়নি, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমি এই হাসপাতালে দায়িত্ব গ্রহণ করেছি প্রায় এক মাস আগে। যোগদানের পর প্রায় ২০ লাখ টাকার ওষুধের চাহিদা দিয়েছি। আমার যোগদানের পর এই হাসপাতালে যত সিজারিয়ান অপারেশন হয়েছে, তার জন্য কোনো রোগীকে বাইরে থেকে কোনো ওষুধ কিনতে হয়নি। সকল ওষুধ এই হাসপাতাল থেকে সরবরাহ করেছি। এখন যেই ওষুধগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে স্টোরে রয়েছে, সেগুলো আমি যোগদানের আগেই মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছিল। পূর্বের যিনি দায়িত্বে ছিলেন, তিনি বর্তমানে গাজীপুরে সিভিল সার্জন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। শুনেছি, এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির গঠন করা হবে। কী পরিমাণ ওষুধ মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে স্টোরে জমা রয়েছে, তার একটি তালিকা করা হবে এবং তদন্ত প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হবে।’

গাজীপুর জেলার সিভিল সার্জন মো. মামুনুর রহমান ১৪ মার্চ ২০২২ থেকে ৯ মার্চ ২০২৫ পর্যন্ত কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মচারী বলেন, ‘ওষুধগুলো মূলত বাইরে বিক্রির জন্য স্টোরে জমা করে রাখা হয়েছিল। ৫ আগস্টের পর সারা দেশের মতো এই হাসপাতালের পরিবেশেরও পরিবর্তন হয়। যে কারণে এই ওষুধগুলো বিক্রির জন্য বাইরে বের করতে পারেনি। এত ওষুধ স্টোরে জমা ছিল, তা ব্যবহার করেও শেষ করতে পারেনি।’

স্টোরের দায়িত্বে থাকা আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘চলতি বছরের জানুয়ারির মাস থেকে আমি দায়িত্ব পালন শুরু করেছি। এর আগে দায়িত্বে ছিলেন মো. আব্দুর রাজ্জাক। তিনি আমাকে কোনো কিছু বুঝিয়ে দিয়ে যাননি।’

এ বিষয়ে কথা বলতে আব্দুর রাজ্জাকের মোবাইল নম্বর কল দিলেও সাড়া পাওয়া যায়নি।

গাজীপুরের সিভিল সার্জন মামুনুর রহমান বলেন, ‘আমি দায়িত্বে থাকাকালীন গত এক বছরে স্টোরের দায়িত্বে যিনি ছিলেন, তিনি অন্যত্র বদলি হয়ে যান। বদলি হওয়ার সময় স্টোরে কী পরিমাণ ওষুধ জমা রয়েছে, তার কোনো হিসাব দিয়ে যাননি। ফলে স্টোরে কী পরিমাণ ওষুধ রয়েছে, তার হিসাব রাখা সম্ভব হয়নি। বিষয়টি নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেখা হবে, কী পরিমাণ ওষুধ জমা রয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত