Ajker Patrika

রাবি শিক্ষার্থীদের রেললাইন অবরোধ, ট্রেন চলাচল বন্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
আপডেট : ১২ মার্চ ২০২৩, ১৭: ১৭
রাবি শিক্ষার্থীদের রেললাইন অবরোধ, ট্রেন চলাচল বন্ধ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের একটি অংশ রেললাইনের ওপর অবস্থান নিয়েছেন। ফলে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের সঙ্গে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ছাড়া অন্য সব জেলার ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে কোনো ট্রেন ঢুকছে না। কোনো ট্রেন রাজশাহী থেকে বেরও হতে পারছে না। 

রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের ব্যবস্থাপক আবদুল করিম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে ২০০ থেকে ২৫০ শিক্ষার্থী শুয়ে-বসে আছেন। ট্রেন যাওয়ার কোনো উপায় নেই। তাই রাতে রাজশাহী থেকে ঢাকামুখী ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেনটি ছেড়ে যেতে পারেনি। রাত ১১টা ২০ মিনিটে ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশে রাজশাহী ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল।’ 

এদিকে রেললাইন অবরোধ করে থাকায় ঢাকা থেকে রাজশাহী হয়ে একটি মেইল ট্রেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ যেতে পারেনি। ট্রেনটি নাটোরের আবদুলপুর জংশনে আটকে আছে বলে জানিয়েছেন ব্যবস্থাপক আবদুল করিম। 

শনিবার (১১ মার্চ) রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতানুল ইসলাম জানান, এই সংঘর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। রাত ১২টায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ৮৬ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে একজন ছাড়া সবাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তবে কারও অবস্থা গুরুতর নয়। 

উল্লেখ্য, শনিবার সন্ধ্যায় বগুড়া থেকে মোহাম্মদ পরিবহনের একটি বাসে রাজশাহী আসছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের এক শিক্ষার্থী। বাসে সিটে বসাকে কেন্দ্র করে গাড়িচালক শরিফুল ও তার সহযোগী রিপনের সঙ্গে তাঁর কথা-কাটাকাটি হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বিনোদপুর বাজারে বাস থেকে নামার সময় তাঁদের আবার কথা-কাটাকাটি হয়। এ সময় বিনোদপুর বাজারের একজন ব্যবসায়ী বাস চালকের পক্ষ নিয়ে কথা বলেন। তখন সেখানে উপস্থিত আরও কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে তাঁদের হাতাহাতি হয়। 

সংঘর্ষের পর রেললাইন অবরোধ করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী।খবর পেয়ে সেখানে যান বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া। এ সময় ব্যবসায়ীরা তাঁর মোটরসাইকেলটি ভাঙচুর করেন। ধাওয়া দিয়ে তাঁকে ক্যাম্পাসের ভেতরে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। এতে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা আবাসিক হল থেকে বের হয়ে বিনোদপুর গেটের পাশে অবস্থান নেয়। আর ব্যবসায়ীরা অবস্থান নেয় রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কে বিনোদপুর বাজারে। অন্ধকারের মধ্যে পরস্পরের দিকে ইট পাটকেল ছোড়াছুড়ি চলতে থাকে। শত শত শিক্ষার্থীর ভিড়ের মধ্যে পড়া ইটে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়। ওপারে ব্যবসায়ীদের অন্তত ১০ জন আহত হয়। 

পরিস্থিতি সামাল দিতে সন্ধ্যার পরেই ঘটনাস্থলে বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য আসেন। কিন্তু প্রথমে তাঁরা কোনো অ্যাকশনে যাননি। পরে আসে র‍্যাবের ১২০ জন সদস্য। এ ছাড়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সাত প্লাটুন সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। বিজিবি সদস্যরা বর্তমানে বিনোদপুর বাজারে অবস্থান করছেন। 

সন্ধ্যার পর থেকে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কে বিনোদপুর বাজারের সামনে দিয়ে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ আছে। রাত সাড়ে ১০টায় পরিস্থিতি আরেক দফা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের বাইরে বের হয়ে মহাসড়কে চলে আসে। তারা আবারও দোকানপাটে আগুন দিতে শুরু করে। এ সময় পুলিশ টিয়ার সেল ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। এখন আবার ক্যাম্পাসের ভেতরে শিক্ষার্থী এবং বাইরে মহাসড়কের ওপরে পুলিশ অবস্থান করছে। মাঝে মাঝে ক্যাম্পাসের ভেতর থেকে মহাসড়কে পেট্রল বোমা উড়ে এসে পড়ছে। 

রাজশাহী নগর পুলিশের কমিশনার আনিসুর রহমান বলেন, ‘যেহেতু তারা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী, তাই বিষয়টি স্পর্শকাতর। এ জন্য পুলিশের সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হয়েছে। ব্যবসায়ীদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের ভেতরে অবস্থান করছে। পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে।’

আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত