Ajker Patrika

পানিশূন্য নদীর বুকে আবাদ

  • বিলীনের পথে মানাস, চন্দ্রাবতীসহ কয়েকটি নদী
  • ২৩টি নদী থাকার কথা বলা হলেও বাস্তবে আছে ১৮টি
  • গতিপথ পরিবর্তন করতে শুরু করেছে যমুনা নদী
  • করতোয়া ও বাঙালী নদীর খননকাজ চলছে
  • নদীর পানিপ্রবাহ ফিরিয়ে আনতে পর্যায়ক্রমে খননের আওতায় আনা হচ্ছে: পাউবো
গনেশ দাস, বগুড়া 
আপডেট : ২৮ মার্চ ২০২৫, ০৮: ৪৬
পানিশূন্য করতোয়া নদীতে আবাদ করা হয়েছে বিভিন্ন ফসল। সম্প্রতি বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার উথলী এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
পানিশূন্য করতোয়া নদীতে আবাদ করা হয়েছে বিভিন্ন ফসল। সম্প্রতি বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার উথলী এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

শুষ্ক মৌসুমে পানিশূন্য থাকে বগুড়ার অধিকাংশ নদী। এ সময় নদীর বুকজুড়ে চাষ করা হয় বিভিন্ন ফসল। গতিপথ পরিবর্তন করতে শুরু করেছে যমুনাও। এর বুকে জেগে উঠেছে অসংখ্য বালুচর। সেখানেও চাষ করা হচ্ছে বিভিন্ন ফসল। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বলছে, বগুড়ার নদী ও খালগুলোতে পানি ধরে রাখতে খননকাজ শুরু করা হয়েছে। বিশ্লেষকেরা জানিয়েছেন, ৫০০ বছর আগে জেলায় নদী ছিল ১০০টি। বর্তমানে ২৩টি নদী বলা হলেও বাস্তবে আছে ১৮টি।

পাউবো বলছে, ৫০ বছর আগে যমুনা নদী বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলা থেকে ৪৫ কিলোমিটার পূর্ব দিয়ে প্রবাহিত হলেও গতিপথ পরিবর্তনের কারণে নদীটি এখন সারিয়াকান্দি উপজেলা সদর থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার পূর্ব দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যমুনা নদীর গতিপথ পরিবর্তনের কারণে ১৯৭৭ সাল থেকে নদী শাসন কাজ শুরু করা হলেও তা কোনো কাজে আসেনি। তবে সারিয়াকান্দি উপজেলা সদরকে ভাঙনের কবল থেকে রক্ষা করতে ২০০০ সালে নির্মাণ করা হয়েছে গ্রোয়েন বাঁধ। যমুনা নদীতেও বর্তমানে পর্যাপ্ত পানি নেই। বগুড়ার আরেকটি খরস্রোতা নদী বাঙালি। এতে দেশি প্রজাতির মাছ ধরে একসময় জীবিকা নির্বাহ করত অসংখ্য মানুষ। কিন্তু এখন সেই নদীতে পানি না থাকায় চাষ করা হয় ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসল। বর্ষাকালে নদীতে পানিপ্রবাহ থাকলেও আগের মতো মাছ থাকে না।

সারিয়াকান্দি উপজেলার জোরগাছা গ্রামের বাসিন্দা মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘৪০ বছর আগে বাঙালি নদীপারের মানুষকে মাছ কিনে খেতে হয়নি।’

বগুড়ার আরেকটি নদী করতোয়া। খরস্রোতা করতোয়া নদী এখন মরা খাল। বগুড়া শহরের মাঝ দিয়ে প্রবাহিত করতোয়া দখল-দূষণের কবলে পরে সৌন্দর্য হারাচ্ছে। তবে সম্প্রতি পাউবো করতোয়া নদীর ১৭ কিলোমিটার অংশ খননকাজ শুরু করেছে। এ ছাড়া নদীর শহর অংশ সৌন্দর্য ধরে রাখতে নদীর দুই পাড়ে দৃষ্টিনন্দন বাঁধ নির্মাণকাজ শুরু করেছে পাউবো। কিন্তু নদীর উজানের দিকে ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে শুষ্ক মৌসুমে এর বুকে ধান চাষ করছেন স্থানীয়রা।

পাউবো জানায়, বগুড়া জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীগুলো হচ্ছে যমুনা, বাঙালী, করতোয়া, নাগর, ইছামতী, গাংনাই, ভদ্রাবতী, সুখদহ, ডাকুরিয়া, মহিষাবান, মানাস, গজারিয়া, ইরামতী, চন্দ্রাবতী, বানিয়াজান, গাংনাই, বেলাই, হলহলিয়া ভোলকা। এ ছাড়া বেহুলার খাড়ি এবং নিরঞ্জন নামের দুটি নদী কাগজে-কলমে থাকলেও বাস্তবে এর কোনো চিহ্ন নেই। মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে মানাস, চন্দ্রবতী, ইরামতীসহ কয়েকটি নদী।

পাউবোর বগুড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বগুড়ার নদীগুলো পানিপ্রবাহ ফিরিয়ে আনতে পর্যায়ক্রমে খননের আওতায় আনা হচ্ছে। প্রতিবছরই নদীর খননকাজ চলে। এ বছর করতোয়া ও বাঙালি নদীর খননকাজ চলছে।’

নদী গবেষক ও বগুড়া সরকারি মজিবর রহমান মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ ড. বেলাল হোসেন বলেন, ‘এই অঞ্চলের অধিকাংশ বড় নদীর উৎপত্তি ভারত থেকে। ভারত বাংলাদেশের উজানে থাকায় তারা বাঁধ দিয়ে পানিপ্রবাহ বন্ধ করে দিয়েছে। এ কারণে দিনে দিনে নদীগুলোতে পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে মরা খালে পরিণত হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘গবেষণায় দেখা যায় ৫০০ বছর আগে এই অঞ্চলে ১০০টির বেশি নদী ছিল। ১০০ বছর আগেও ৩০টি নদীর অস্তিত্ব দেখা যায়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাসিনার আমলে গভর্নর হওয়ার প্রস্তাব পেয়েছিলাম: আহসান এইচ মনসুর

আলোচনায় ড. ইউনূসকে প্রধানমন্ত্রী দেখার আকাঙ্ক্ষা, আইনি পথ কী

এক দশক পর প্রকাশ্যে গায়িকা ডাফি, শোনালেন অপহরণ ও ধর্ষণের ভয়াবহ বর্ণনা

তিস্তায় বড় প্রকল্প নিয়ে সতর্ক থাকার তাগিদ

জাতীয় ঈদগাহে যাবেন না রাষ্ট্রপতি, ঈদুল ফিতরের নামাজ পড়বেন বঙ্গভবনে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত