Ajker Patrika

চুরির অপবাদে কিশোরকে রাতভর নির্যাতন, ২ ইউপি সদস্য গ্রেপ্তার

নেত্রকোনা প্রতিনিধি
আপডেট : ১২ আগস্ট ২০২৩, ১৬: ৪৯
Thumbnail image

নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় চুরির অপবাদে এক কিশোরের মাথা ন্যাড়া করে নির্যাতনসহ তার পরিবারের কাছ থেকে জরিমানা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে ওই গ্রামের মাতব্বরদের বিরুদ্ধে। মারধরে আহত কিশোরকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। 

বিষয়টি জানাজানি হলে ওই সালিসের দুই মাতব্বর স্থানীয় ইউপি সদস্য সবুজ মিয়া ও আবু তাহেরকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল শুক্রবার তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। 

আজ শনিবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন কেন্দুয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার হোসাইন মোহাম্মদ ফারাবী। গত মঙ্গলবার রাতে উপজেলার বলাইশিমুল ইউনিয়নের সরাপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। 

ভুক্তভোগীর পরিবার ও স্থানীয়রা বলছে, সোমবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে সরাপাড়া বাজারে মায়ের জন্য মোবাইল ফোনে মিনিট কার্ড কিনতে যায় ওই কিশোর। এ সময় দোকান বন্ধ থাকায় দোকানিকে ডাকাডাকি করে সে। পরে ওই দোকানের পাশের এক চা দোকানি তাকে চোর সন্দেহে পেছন থেকে জাপটে ধরেন এবং গ্রাম ও বাজারের লোকজনকে ডেকে আনেন। 

পরে বলাইশিমুল ইউপির ৩ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য সবুজ মিয়া, সাবেক ওয়ার্ড সদস্য হাদিস মিয়া, আবু তাহেরসহ আরও কয়েকজনের নেতৃত্বে রাতভর ওই কিশোরকে নির্যাতন করা হয়। চুরির বিষয়টি স্বীকার করতে ওই কিশোরকে হত্যা করে, বস্তায় ভরে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন মাতব্বরেরা। একপর্যায়ে জান রক্ষায় চুরির বিষয়টি স্বীকার করতে বাধ্য হয় ওই কিশোর। 

পরদিন বিষয়টি নিয়ে বাজারে সালিস করেন ইউপি সদস্য সবুজ মিয়া, আবু তাহেরসহ অন্যরা। বিচারে চুরির দায়ে ওই কিশোরের মাথা ন্যাড়া করাসহ ১০টি বেত্রাঘাত ও দুই হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এ ঘটনায় ভয়ে ও লজ্জায় তার পরিবারের লোকজন ঘরবন্দী হয়ে পড়ে।

একপর্যায়ে বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে প্রশাসনের নজরে আসে। পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে ওই কিশোরকে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। 

ভুক্তভোগী কিশোর বলছে, ‘এক আত্মীয়ের অসুখের খোঁজখবর নেওয়ার জন্য সোমবার রাত প্রায় ১২টার দিকে মা আমাকে মিনিট কার্ড কেনার জন্য বাজারে পাঠায়। বাজারে গিয়ে দেখি দোকান বন্ধ। ভেতরে লোক আছে কি না জানার জন্য ডাকাডাকি করতেছিলাম। এই সময় পেছন থেকে চায়ের দোকানদার মতিউর আমাকে জাপটে ধরে চোর বলে চিৎকার শুরু করে।’ 

কিশোর আরও বলে, ‘গ্রাম ও বাজারের লোকজন, সবুজ মেম্বার, হাদিস মেম্বার, আবু তাহেরসহ আরও বেশ কয়েকজন রাতভর আমারে মারধর করে।’ 

ভুক্তভোগী কিশোরের মা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বাজারে ১২টা-১টা পর্যন্ত দোকান খোলা থাকে। মিনিট কার্ড আনার জন্য আমার ছেলেকে বাজারে পাঠাইছি। কিছুক্ষণ পর শুনি আমার ছেলেকে চোর ভেবে আটক করছে। বাজারে ছুটে গিয়ে বলার পরও আমার কোনো কথাই তারা শোনেনি। রাতভর আমার ছেলেকে মারধর করেছে তারা। জান বাঁচাইতে চুরির কথা স্বীকার করেছে আমার ছেলে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ভাঙা ঘরে থাকি। চালের ওপর পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখছি। চুরির অপবাদ দিয়ে ছেলেডারে ইচ্ছামতো মারছে তারা। বিচার কইরা মাথাডা ন্যাড়া করছে। লজ্জায় মুখ দেখাতে পারতেছি না। পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা ধরছিল, কাকুতি মিনতি করে, আরেকজনের কাছ থেকে হাওলাত করে দুই হাজার টাকা দিছি।’ 

ভুক্তভোগী কিশোরের মা বলেন, ‘টাকার জন্য ছেলেডার চিকিৎসাও করাতে পারছি না। এই ঘটনার পর থেকে দুঃখে-ক্ষোভে ও লজ্জায় ছেলেডা কারও সাথে কথা কয় না, ভাতও খায় না। আমার ছেলেডারে সবুজ মেম্বার, হাদিস মেম্বার, আবু তাহেরসহ কয়েকজনে মিলে মেরে শেষ করে দিছে। আমি এই ঘটনার সঠিক বিচার চাই।’ 

চা দোকানি মতিউর রহমান জানান, বাজারে প্রায়ই চুরি হয়। সে জন্য তিনি সতর্ক থাকেন। টিনের শব্দ পেয়ে ওই দোকানে গিয়ে কিশোরকে দেখতে পেয়ে ধরে ফেলেন তিনি। পরে সবাইকে খবর দেন। বিচারের রায়ে তিনি দুটি বেত্রাঘাত করেছেন। কিন্তু এতে তিনিও মনে কষ্ট পেয়েছেন বলে দাবি করেন। 

যেই দোকানের সামনে থেকে ওই কিশোরকে আটক করা হয় সেই দোকান মালিক আজকের পত্রিকাকে জানান, ঘটনার সময় তিনি দোকানে ছিলেন না। খবর পেয়ে বাজারে আসেন। তাঁর দোকানের দরজায় তালা লাগানো ছিল। দোকান ঘরের বেড়ার একটি টিন খোলা ছিল বলে দাবি করেন তিনি। 

এ বিষয়ে সহকারী পুলিশ সুপার হোসাইন মোহাম্মদ ফারাবী বলেন, এ ঘটনায় ইউপি সদস্য সবুজ মিয়া ও আবু তাহেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। বিস্তারিত তথ্য তথ্য বিকেলে জানানো হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত