Ajker Patrika

ইউপি নির্বাচন করা সেই ভিক্ষুক এবার সংসদ সদস্য হতে চান

সাইফুল আলম তুহিন, ত্রিশাল (ময়মনসিংহ)
আপডেট : ১৩ আগস্ট ২০২৩, ১৫: ০৩
Thumbnail image

ভিক্ষাবৃত্তি করে দিন যাপন করেন ষাটোর্ধ্ব মো. আবুল মুনসুর। স্থানীয় চেয়ারম্যানের কাছে গিয়েছিলেন হতদরিদ্রদের জন্য আসা যে কোনো একটি সুবিধা পেতে। কিন্তু সে সময় কার্ড বা কোনো সুবিধা না পেয়ে সিদ্ধান্ত নেন অসহায় মানুষ যাতে সুবিধাবঞ্চিত না হয়, সে জন্য নিজেই প্রার্থী হবেন। 

ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার বৈলর ইউনিয়ন পরিষদের গত নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ৩৭৭টি ভোটও পেয়েছিলেন। এবার তিনি প্রার্থী হতে চান জাতীয় সংসদ নির্বাচনের। সে কারণে উপজেলা ঘুরে ঘুরে নিজের পোস্টার নিজেই দেয়ালে সাঁটিয়ে করছেন জনসংযোগ। 

ত্রিশালের আলোচিত সেই ‘ভিক্ষুক’ চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে গত ছয় দিন ধরে নিজের প্রচারণার পোস্টার লাগাচ্ছেন। উপজেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে হাজার খানিক পোস্টার লাগিয়েছেন বলে দাবি করেছেন তিনি। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এবং স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে এর সত্যতাও পাওয়া যায়। 

ভাসমান জীবনযাপন করা মো. আবুল মুনসুর ফকির বৈলর ইউনিয়নের বড় পুকুরপাড়ের বাসিন্দা। মানুষের দেওয়া টাকা-চাল, খাবারেই চলে তাঁর জীবন। সুযোগ পেলে অসহায়-দরিদ্র মানুষের সেবা করবেন বলে বিভিন্ন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। 

সরেজমিনে দেখা যায়, এক হাতে পোস্টারের ব্যাগ, আরেক হাতে আঁঠার বালতি নিয়ে বিভিন্ন এলাকার ঘুরছেন। গুরুত্বপূর্ণ জনবহুল জায়গার দেয়ালে সাঁটাচ্ছেন নিজের প্রচারণার পোস্টার। 

তাঁর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ কাজে আর্থিক সহযোগিতা পেয়েছেন স্থানীয় কিছু বাসিন্দার। তিনি অন্যের সহযোগিতায় চলায় নিজের নামের শেষে উপাধি লাগিয়েছেন ‘ফকির’। 

স্থানীয়রা বলছেন, প্রত্যেক চেয়ারম্যান ও সদস্য প্রার্থী নির্বাচন সামনে রেখে বিপুল পরিমাণ টাকা খরচ করেন, সেখানে অসহায় এই প্রার্থী কোনো টাকা খরচ না করেই গত ইউপি নির্বাচনে পেয়েছিলেন ৩৭৭ ভোট। অংশগ্রহণকারী আরও কয়েকজন প্রার্থী তাঁর চেয়ে কম ভোট পেয়েছিলেন। 

ইউপি নির্বাচনে ত্রিশালের আলোচিত এই ব্যক্তিকে ভোট দিয়ে অনিয়ম, দুর্নীতি ও নির্বাচনে অর্থের প্রভাবের বিরুদ্ধে নীরব প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন ভোটারেরা। নিজেই ঘুরে ঘুরে উপজেলার বিভিন্ন দেয়ালে পোস্টার সাঁটাচ্ছেন মুনসুর ফকির।

স্থানীয় অলহরী গ্রামের বাসিন্দা মোরশেদ আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অনেক জনপ্রতিনিধিই এখন আর জনগণের কথা চিন্তা করে না। জনগণকে ব্যবহার করে তারা টাকার পাহাড় গড়ে। এতে সরকারের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয় সাধারণ মানুষ। মুনসুর ফকিরও এ রকম একজন বঞ্চিত মানুষ। কোনো সুযোগ-সুবিধা না পেয়ে নিজেই নেমেছেন জনপ্রতিনিধি হওয়ার মিশনে।’ 

বৈলর ভরাডোবা গ্রামের মো. কবির মিয়া বলেন, ‘আমরা এর আগে অনেক লোককে ভোট দিয়েছি। এলাকার তেমন কোনো কাজ হয়নি। এবার ফকিরকে ভোট দেব, এটা আমাদের মনের একটা তৃপ্তি।’ 

গতবারের মতো এবারও ভোর থেকে রাত পর্যন্ত পাড়া-মহল্লা, হাট-বাজারে একাই পোস্টার সেঁটে সামনের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এমপি পদে প্রার্থী হওয়ার জানান দিচ্ছেন আবুল মুনসুর ফকির। গত ইউপি নির্বাচনে ষাটোর্ধ্ব এই ব্যক্তি স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিলেন। প্রতীক ছিল চশমা। তখন এটাকে পাগলামি ভেবে নিজের সন্তান ও আত্মীয়রাও দূরে ছিলেন। 

এবার সংসদ সদস্য নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বিষয়টিকেও অনেকেই যেখানে পাগলামি মনে করলেও স্থানীয় অনেক বাসিন্দা এটিকে নির্বাচনে টাকার ছড়াছড়ি ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে নীরব প্রতিবাদ হিসেবে মনে করছেন এবং তাঁকে উৎসাহ দিচ্ছেন। 

বৈলর ইউনিয়নের বাসিন্দা তানভীর আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘জানি মুনসুর ফকির জয়লাভ করবে না। তার পরও এবার তাঁর সঙ্গে আছি। অনেকের সঙ্গে থেকে তো দেখলাম, এলাকার রাস্তাঘাটের তেমন উন্নতি হয়নি। কাজ করতে গিয়ে পদে পদে ভোগান্তি।’ 

কথা হলো সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থী আবুল মুনসুর ফকিরের সঙ্গে। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার মতো অসহায় মানুষের ডাকে সাড়া দিয়ে যাঁরা পাশে আছেন, তাঁদের কথা আমি সারা জীবন মনে রাখব। জনগণকে কিছু দিতে বা করতে না পারলেও অবৈধভাবে টাকা উপার্জন করা যে পাপ, তা আমি বলে যাব সব সময়।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘আর যদি আপনারা আমাকে এমপি বানান, তাহলে সরকারি সব মালামাল যে পাওয়ার যোগ্য, তাঁর হাতে তুলে দেব। কোনো গরিব আর সরকারি সুযোগ-সুবিধার বাইরে থাকবে না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত