Ajker Patrika

হাসপাতালে গিয়েছিলেন চোখের বালুকণা সরাতে, হারালেন দৃষ্টিশক্তি

ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি 
আপডেট : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১: ৪৭
Thumbnail image

বৃদ্ধ মা–বাবা, ছোট দুই ভাই, স্ত্রী, তিন কন্যাসহ ৯ সদস্যের পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম মঞ্জুরুল হক (২৮)। বাড়ির পাশের একটি বাজারে আইপিএস মেরামত করে সংসার চালাতেন। সম্প্রতি বাঁ চোখে বালুকণা ঢুকলে চিকিৎসা নেন ময়মনসিংহের গৌরীপুরের একটি চক্ষু হাসপাতালে। কিন্তু সাধারণ এই ঘটনায় দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন তিনি। মঞ্জুরুলের বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার বড়হিত ইউনিয়নের মধ্যপালা গ্রামে। এ ঘটনায় গত মঙ্গলবার জেলা সিভিল সার্জন বরাবর লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ৭ সেপ্টেম্বর বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে বা চোখে বালুকণা ঢুকে যন্ত্রণা শুরু হয় মঞ্জুরুলের। পরদিন চিকিৎসা নিতে ময়মনসিংহের গৌরীপুরে মুকতাদির চক্ষু হাসপাতালে যান তিনি। সেখানে থাকা মাশরুফ ওয়াহিদ নামের একজন চিকিৎসক মঞ্জুরুলের চোখ দেখেন। এরপর ওই চিকিৎসক সহযোগীকে ডেকে বলেন সুঁই দিয়ে চোখে দুটি ফুটো করলেই ঠিক হয়ে যাবে। এরপর চিকিৎসকের কথামতো মঞ্জুরুলের চোখ ফুটো করা হয়। ব্যান্ডেজ নিয়ে বাড়ি ফেরার পর চোখে প্রচণ্ড রকম ব্যথা শুরু হলে পরদিন আবার চিকিৎসকের কাছে যান। তখন ওষুধপত্র পরিবর্তন করে ঠিক হয়ে যাওয়ার আশ্বাস দেন চিকিৎসক।

কিন্তু তাতেও কাজ না হওয়ায় ১৪ সেপ্টেম্বর মঞ্জুরুল তাঁর বাবাকে নিয়ে হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. এ কে এম এ মুকতাদিরকে তাঁর চোখ দেখান। ডা. মুকতাদির চোখ দেখে বলেন, এটি নষ্ট হয়ে গেছে। চোখ তুলে ফেলতে হবে, নয়তো অপর চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে যাবে। এ কথা শোনার পর হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরে বাংলাদেশ চক্ষু হাসপাতাল অ্যান্ড ইনস্টিটিউটের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ও কর্নিয়া কনসালট্যান্ট ডা. মো. আমিরুজ্জামানকে দেখান। ওই চিকিৎসক পরামর্শ দেন অপারেশন করলে হয়তো ঠিক হতেও পারে, না–ও হতে পারে। নিরুপায় হয়ে ১৯ সেপ্টেম্বর সারা জীবনের জমানো প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ করে চোখের অপারেশন করান ঠিকই, তবে দৃষ্টিশক্তি ফেরেনি মঞ্জুরুলের।

এদিকে এক চোখের দৃষ্টিশক্তি হারানো মঞ্জুরুল বলেন, ‘ডাক্তার যদি আমার একটা চোখ নষ্ট না করে আমাকে মেরে ফেলত, তাতেও আমার কোনো আক্ষেপ ছিল না। কারণ, আমি যে কাজ করে সংসার চালাই, সেটা আর করা সম্ভব না। ওই ডাক্তার শুধু আমাকেই অচল করে দেয়নি, আমার পুরো পরিবারকে ধ্বংস করে দিয়েছে।’

কান্নাজড়িত কণ্ঠে মঞ্জুরুলের বাবা মো. নূরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার সয়সম্পদ বলতে শুধু বাড়িভিটাটুকুই আছে। ৯ জনের পরিবারে একমাত্র কর্মক্ষম ছিল মঞ্জুরুল। তার উপার্জনেই চলত সংসার। আমাদের ধ্বংস করে দিয়েছে রে বাবা। আমার ছেলের সঙ্গে যা ঘটেছে, আমি এর বিচার চাই।’

এ ব্যাপারে চক্ষুবিশেষজ্ঞ ও সার্জন মাশরুফ ওয়াহিদের বাবা ও হাসপাতালটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. এ কে এম এ মুকতাদির বলেন, ‘ওই যুবকের চোখে একটি লোহার কণা ঢুকে গেছিল। চিকিৎসক চোখ থেকে সুঁই দিয়ে কণাটা বের করে দেয়। এরপর ওই যুবককে বলা হয় এক দিন পর যেন ফের হাসপাতালে এসে চোখ দেখায়। কিন্তু সে আসে চার দিন পর। এ অবস্থায় তার চোখে ইনফেকশন হয়ে যায়। এরপর আমি যখন দেখলাম, তখন সেই ইনফেকশন ছড়িয়ে চোখের অবস্থার চরম অবনতি হয়। তখন তাকে বলি এটার চিকিৎসা এখানে আর সম্ভব না। পরে আমার পরিচিত ঢাকায় একজন কর্নিয়া কনসালট্যান্টের কাছে আমি নিজে কল করে পাঠাই।’

ডা. মুকতাদির দাবি করে বলেন, ‘আমি ৪৭ বছর ধরে সুনামের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করে আসছি। চিকিৎসা ক্ষেত্রে আমার প্রতিষ্ঠানের কোনো ধরনের গাফিলতি আগেও ছিল না, এখনো নেই।’

এ প্রসঙ্গে ময়মনসিংহ জেলা সিভিল সার্জন মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নারীদের খেলায় আর নাক গলাবে না, দেশ ও বিশ্ববাসীর কাছে ক্ষমা চাইল ভাঙচুরকারীরা

বিয়ে করলেন সারজিস আলম

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে লড়ছে শ্রীলঙ্কা, ভারত-ইংল্যান্ড ম্যাচ কোথায় দেখবেন

ইতালি নেওয়ার কথা বলে লিবিয়ায় ফরিদপুরের ২ জনকে গুলি করে হত্যা

সাবেক শিক্ষার্থীর প্রাইভেট কারে ধাক্কা, জাবিতে ১২ বাস আটকে ক্ষতিপূরণ আদায় ছাত্রদলের

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত