Ajker Patrika

গার্ডার ছাড়াই সেতু ঢালাই, ভেঙে ফেলার আগেই ধসে পড়ল খালে

পিরোজপুর ও নেছারাবাদ প্রতিনিধি
পিরোজপুরের নেছারাবাদে ভাদুরা খালে ধসে পড়া নির্মাণাধীন সেতু। ছবি: আজকের পত্রিকা
পিরোজপুরের নেছারাবাদে ভাদুরা খালে ধসে পড়া নির্মাণাধীন সেতু। ছবি: আজকের পত্রিকা

নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার ও কার্যাদেশ অনুযায়ী কাজ না করায় পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলায় খালের ওপর নির্মাণাধীন একটি সেতু ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। সে অনুযায়ী গতকাল মঙ্গলবার সেতুটি ভাঙতে যান শ্রমিকেরা। কিন্তু ভাঙার কাজ শুরুর আগেই সেতুটি ভেঙে খালে পড়ে যায়।

পৌনে ৬ কোটি টাকার প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ঠিকাদার ছিলেন পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মিরাজুল ইসলাম। তিনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইফতি ইটিসিএল প্রাইভেট লিমিটেডের কর্ণধার।

ঠিকাদার মিরাজুল পিরোজপুর-২ (কাউখালী, ভান্ডারিয়া ও নেছারাবাদ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন মহারাজের ছোট ভাই। দুই ভাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। মিরাজুল আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে গা ঢাকা দিয়েছেন। এতে তাঁর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বাস্তবায়নাধীন একাধিক প্রকল্প বন্ধ হয়ে যায়।

জানা গেছে, উপজেলার পূর্ব জলাবাড়ি ইউনিয়নের ভাদুরা খালের ওপর সেতুটি ভেঙে ফেলতে যায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ। তবে সংস্থাটি কাজ শুরু করার আগেই গতকাল সন্ধ্যায় সেতুটি ধসে পড়ে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন কয়েক গ্রামের বাসিন্দারা।

পিরোজপুর এলজিইডি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পূর্ব জলাবাড়ি খ্রিষ্টানপাড়া থেকে মাদ্রা বাজার সড়কের ওপর একটি প্যাকেজে ২২ ও ১৫ মিটার দৈর্ঘ্যের দুটি গার্ডার সেতু নির্মাণের জন্য ২০২১ সালের ২৯ ডিসেম্বর মেসার্স ইফতি ইটিসিএলকে কার্যাদেশ দেয় পিরোজপুর এলজিইডি। যার চুক্তিমূল্য ছিল ৫ কোটি ৭৩ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর ব্রিজ দুটির নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক মিরাজুল ইসলাম নিজে কাজ না করে একজন সাবঠিকাদার দিয়ে কাজ করাচ্ছিলেন। এ সময় নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার ও কার্যাদেশ না মানায় স্থানীয় লোকজন কাজে বাধা দেন।

পরে আরেক সাবঠিকাদার গত বছরের শেষদিকে গার্ডার ছাড়াই ভাদুরা খালের ওপরের সেতুটির ছাদ ঢালাই দেয়। এর কিছু দিন পরে ঢালাই দেওয়া অংশে ফাটল দেখা দেয়। তখন স্থানীয় বাসিন্দাদের আপত্তির মুখে এলজিইডি তদন্ত করে সেতুটির ঢালাই দেওয়া অংশ ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও এলজিইডির কর্মকর্তাদের যোগসাজশে সেতু নির্মাণে অকল্পনীয় দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার হয়েছে।

পিরোজপুরের নেছারাবাদে ভাদুরা খালে ধসে পড়া নির্মাণাধীন সেতু। ছবি: আজকের পত্রিকা
পিরোজপুরের নেছারাবাদে ভাদুরা খালে ধসে পড়া নির্মাণাধীন সেতু। ছবি: আজকের পত্রিকা

নির্মাণাধীন সেতুতে ফাটল ধরার বিষয়ে জানতে চাইলে সাবঠিকাদার খোকন মিয়া বলেন, শ্রমিকেরা ঢালাই শেষে চলে গেলে কে বা কারা সেন্টারিং খুলে ফেলায় সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এখন ঠিকাদার মিরাজুল ইসলাম অগ্রিম টাকা তুলে নেওয়ায় কাজ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না।

এ বিষয় নেছারাবাদের উপজেলা প্রকৌশলী মো. রায়সুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, কাজ নিয়ম অনুযায়ী না করার কারণে পুরো স্লাব (ছাদ) ভেঙে নতুনভাবে নির্মাণকাজ করতে হবে। গার্ডার নির্মাণ না করেই ছাদ ঢালাই দেওয়ায় সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। তাই এটি ভাঙার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিন্তু মূল ঠিকাদারকে পাওয়া না যাওয়ায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জমকালো দোতলা বাড়িতে দূতাবাস, সামনে সারি সারি কূটনৈতিক গাড়ি—৭ বছর পর জানা গেল ভুয়া

অবশেষে রাজি ভারত, ‘জিতেছে বাংলাদেশ’

বেনজীরের এক ফ্ল্যাটেই ১৯ ফ্রিজ, আরও বিপুল ব্যবহার সামগ্রী উঠছে নিলামে

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতাকে শুভেচ্ছা জানাতে বিমানবন্দরে পলাতক আসামি

বাংলাদেশ ব্যাংকে নারীদের শর্ট স্লিভ ড্রেস ও লেগিংস নিষেধ, পরতে হবে ‘শালীন’ পোশাক-হিজাব

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত