Ajker Patrika

খুলনায় নতুন চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্য

কাজী শামিম আহমেদ, খুলনা
খুলনায় নতুন চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্য

খুলনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি, সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা কাজী আমিনুল হকের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষতি না করার শর্তে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অজ্ঞাত স্থানে আত্মগোপনে থাকা কাজী আমিনুল সাংবাদিকদের কাছে এ অভিযোগ করেছেন। 

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর খুলনায় এ রকম চাঁদাবাজি শুরু হওয়ার আরও কয়েকটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। পুলিশের কার্যক্রম না থাকার সুযোগে এটি হচ্ছে বলে মনে করছেন নগরবাসী। 

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, বিএনপির কতিপয় নেতা এসব চাঁদাবাজির সঙ্গে যুক্ত। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে এ অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। 

রূপসা সেতুসংলগ্ন লবণচরা বোখারিপাড়ায় বসবাস করেন ব্যবসায়ী কামাল হোসেনের পরিবার। তাঁর স্ত্রী সরকারি কর্মকর্তা। ৫ আগস্ট দুর্বৃত্তরা তাঁর বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করে। ব্যবহৃত প্রাইভেট কারটি আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার আগে নগদ ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় একটি চক্র। চারটি দোকান ভাঙচুর করে ভাড়াটেদের কাছ থেকেও মোটা অঙ্কের চাঁদা নেওয়া হয়। বর্তমানে মোটা অঙ্কের চাঁদা চেয়ে হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ী কামাল হোসেন। 

এ ছাড়া ৪ আগস্ট খুলনার স্থানীয় দৈনিক দেশ সংযোগ অফিসে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। পরের দিন পত্রিকার সম্পাদক মাহবুবুল আলম সোহাগের অফিস কক্ষটি দখলে নেওয়া হয়। ফলে এক সপ্তাহ ধরে পত্রিকাটির প্রকাশনা বন্ধ থাকে। গত রোববার ওই অফিস কক্ষে লাগানো তালার চাবি ফেরত দেওয়া হলে পত্রিকাটি আবার প্রকাশনা শুরু করে। এ জন্য দখলদারেরা প্রথমে ২ লাখ এবং পরে ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। 

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, খুলনা বড় বাজারের আড়তদার সহিদুল ও কালামের কাছ থেকে নগদ ৩ লাখ টাকা চাঁদা নিয়েছেন বিএনপির পরিচয়দানকারী কতিপয় নেতা। 

ব্যবসায়ী সরোয়ার কাজীর কাছে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা চাওয়া হয়েছে। টুটুল নামের এক দোকানদারের কাছ থেকে নিয়েছেন ১ লাখ টাকা। এ ছাড়া শহরের নিক্সন মার্কেটের এক দোকানে ৫ লাখ টাকা চেয়ে তালা দেওয়া হয়েছে। ওই এলাকায় আরও কয়েকটি দোকানে তালা মেরে চাঁদা পরিশোধ করে সমাধান করতে বলা হয়েছে। ঢাকার আলোচিত সাবেক সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের খুলনার ৪ নম্বর ঘাটের গুদামেও তালা দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। 

স্থানীয় লোকজন জানান, জব্বার মার্কেটে ইমারত মিয়ার ৫টি দোকানে তালা দিয়েছেন বিএনপির এক নেতা। সেই সঙ্গে একটি দোকান তাঁকে লিখে দিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া কৃষ্ণ নামের একজন খুদে ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকা নিয়েছেন ওই নেতা। আড়তদার তোতা মিয়ার আড়তে তালা দিয়ে ৫ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতা সেলিম মুন্সির স্টেশন রোডের দোকানেও তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। 

এসব চাঁদাবাজির ঘটনার সঙ্গে বিএনপির কতিপয় নেতার জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। তবে খুলনা মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব শফিকুল ইসলাম তুহিন বলেন, ‘সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, মাদক ব্যবসায়ী বিএনপির লোক নয়। তারা যেই হোক না কেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’ 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, থানাগুলোতে সীমিত আকারে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পুরোপুরি দায়িত্ব পালন করার পর নাশকতা, লুটপাটকারী ও চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত