Ajker Patrika

ডুমুরিয়ার পাবদা মাছ যাচ্ছে কলকাতায়

গাজী আব্দুল কুদ্দুস, ডুমুরিয়া (খুলনা) 
আপডেট : ৩১ জুলাই ২০২২, ১৬: ৩৩
Thumbnail image

দেশি প্রজাতির পাবদা মাছ চাষ করে ডুমুরিয়া উপজেলার হাসানপুর গ্রামের আলাউদ্দিন জোয়াদ্দার (৩৮) দৃষ্টান্তমূলক সাফল্য অর্জন করেছেন। তাঁর খামার থেকে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে সরাসরি কলকাতার বাজারে যাচ্ছে পাবদা মাছ।

জানা যায়, ২০২১ সালে হাসানপুর গ্রামের একটি মসজিদের ছয় একর জলাশয় বছরে ৪ লাখ ৮৫ হাজার টাকায় ইজারা নেন আলাউদ্দিন জোয়াদ্দার ও তাঁর বন্ধু বেনজির জোয়াদ্দার। এরপর তাঁরা সেখানে পাবদা মাছের চাষ শুরু করেন। আগের অভিজ্ঞতা ও উপজেলা মৎস্য অফিসের পরামর্শে ওই বছর ফুলতলার এক ব্যবসায়ী টিটো মোল্যার মাধ্যমে বগুড়া থেকে ৩ লাখ ৯০ হাজার পাবদা মাছের পোনা এনে চাষ শুরু করেন। একই সঙ্গে ১০ হাজার পিস রুই, কাতলা ও মৃগেল মাছও ছাড়েন। বছর শেষে সর্বমোট ৫০ লাখ টাকার মাছ বিক্রি করেন তিনি। এতে আলাউদ্দিন জোয়াদ্দারের ৩২ লাখ টাকা খরচ হলেও লাভ হয় ১৮ লাখ টাকা।
 
পাবদা মাছ সাধারণত চার মাসে উৎপাদন করা যায়। একই পুকুরে বছরে দুবার এই মাছ উৎপাদন ও বিক্রি করা সম্ভব। ওই শিক্ষাকে কাজে লাগাতে চলতি বছরের মার্চে পুকুর তৈরি শেষে এক একরের নার্সিং পুকুরে ২৫ দিন বয়সী ৫ লাখ ৮ হাজার পাবদার পোনা ছাড়েন আলাউদ্দিন জোয়াদ্দার। দেড় মাস পরে ওই পাবদাগুলো পাশেই চার একরের বড় জলাশয়ে ছাড়েন। একই পুকুরে ৫ লাখ পারশে, ৫ হাজার ভাংগন ও ১০ হাজার পিস রুইজাতীয় সাদা মাছও ছাড়া হয়। নিয়ম মেনে সব ধরনের খাবার ও ওষুধ দেওয়ার পাশাপাশি পুকুরের পানিতে অক্সিজেন সরবরাহ ঠিক রাখতে সার্বক্ষণিক পাঁচটি এয়ারেটর চালানো হয়। তা ছাড়া পুকুর পরিচর্যায় চারজন সার্বক্ষণিক থাকেন।

এ বিষয়ে আলাউদ্দিন জোয়াদ্দার বলেন, ‘২০১৬ সাল থেকে বিভিন্ন জাতের মাছসহ পাবদা চাষের অভিজ্ঞতা নিয়েই ২০২১ সালে বড় আকারে পাবদার চাষ শুরু করি। প্রতি কেজি পাবদা উৎপাদনে ১৮০ টাকা খরচ হলেও বিক্রি হয় ২৩০ টাকায়। এ বছরের প্রথম ৪ মাসে ২০ লক্ষাধিক টাকা খরচ হলেও গত ২ দিনে ১৩ লাখ টাকার পাবদা বিক্রি করেছি। আশা করছি, এখনো ৩০ লক্ষাধিক টাকার পাবদা বিক্রি করতে পারব। তা ছাড়া আগামী ২০ দিনের মধ্যে নার্সিং পুকুর থেকে দেড় মাস বয়সী ৫ লাখ নতুন পাবদা বড় পুকুরে ছাড়ব। আড়াই মাস পরে সেগুলোও বিক্রি হবে। এভাবে বছরে দুবার পাবদা চাষ অব্যাহত রাখব।’

আলাউদ্দিন জোয়াদ্দার আরও বলেন, মৎস্য খামার থেকে পাবদা ধরে সঙ্গে সঙ্গেই বরফ দিয়ে বাক্সবন্দী (কসকেট) করে ট্রাকে করে যশোর-বেনাপোল সীমান্ত হয়ে পাবদা মাছগুলো সরাসরি কলকাতার বিভিন্ন বাজারে যায়। এমন ঘটনা দেখতে গতকাল শনিবার সকালে খুলনা মৎস্য অধিদপ্তরের বিভাগীয় উপপরিচালক তোফাজ উদ্দিন আহমেদসহ একটি প্রতিনিধিদল এখানে আসেন। মাছ ধরা শেষে দুপুরে ২৩০ টাকা কেজি দরে ব্যবসায়ী টিটো মোল্লা ৮০ মণ পাবদা কিনে প্যাকেটজাত করে ট্রাকে তুলে ভারতের কলকাতার উদ্দেশে যাত্রা করেন।

পাবদা ব্যবসায়ী টিটো মোল্লা বলেন, ‘আমি বগুড়া ও ময়মনসিংহ থেকে পাবদার রেণু পোনা এনে এই এলাকার চাষিদের কাছে বিক্রি করি। পাশাপাশি মাছের খাবার-ওষুধও সরবরাহ করি। পরে চার মাসের মাথায় তাঁদের খামার থেকেই মাছ কিনে যশোরের বাগাছড়া এলাকার কেবিসি কোম্পানির মাধ্যমে কলকাতায় নিয়ে বিক্রি করি। সেখানে পাবদার ভালো চাহিদা রয়েছে।’ 

উপজেলা সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবু বকর সিদ্দিক আজকের পত্রিকাকে বলেন, গলদা-বাগদা-রুইজাতীয় মাছের এলাকা বলে খ্যাত ডুমুরিয়ায় আজ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বর্তমানে পাবদা চাষে দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছেন আলাউদ্দিন জোয়াদ্দার। তাই তাঁকে স্বীকৃতি দিয়ে এ বছর মৎস্য সপ্তাহের দৃষ্টিনন্দন কার্ডে বড় কাতলা মাছসহ আলাউদ্দিনের ছবি ছাপানো হয়েছে।

খুলনা জেলা মৎস্য অফিসার জয়দেব পাল বলেন, ‘মানুষের পুষ্টির চাহিদা পূরণ, বেকার সমস্যার সমাধান, আর্থিক সমৃদ্ধি ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের লক্ষ্যে আমরা পাবদা চাষকে উৎসাহ দিচ্ছি।’ 

সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বলেন, ‘আমি মন্ত্রী থাকাকালে দেশি প্রজাতির মাছ চাষে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছিলাম। আজ খুব ভালো লাগছে যে, আমাদের ডুমুরিয়ার আলাউদ্দিন পাবদা চাষ করে ব্যতিক্রমী সাফল্য পেয়েছে। তার সাফল্য দেখে এলাকার বেকার যুবকেরা মাছ চাষে এগিয়ে আসবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ঋণের ১৩০০ কোটির এক টাকাও দেননি হলিডে ইনের মালিক

নারীদের খেলায় আর নাক গলাবে না, দেশ ও বিশ্ববাসীর কাছে ক্ষমা চাইল ভাঙচুরকারীরা

ইতালি নেওয়ার কথা বলে লিবিয়ায় ফরিদপুরের ২ জনকে গুলি করে হত্যা

গণ–সমাবেশে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিলেন বিএনপি নেতা

হেফাজতে যুবদল নেতার মৃত্যু, সেনা ক্যাম্প কমান্ডারকে প্রত্যাহার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত