Ajker Patrika

যশোর বোর্ডে অনলাইন প্রশ্নব্যাংকের কার্যক্রম স্থগিত, মিশ্র প্রতিক্রিয়া শিক্ষকদের

জাহিদ হাসান, যশোর 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

দেশে প্রথমবারের মতো শুরু হওয়া যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বোর্ডের অনলাইন প্রশ্নব্যাংক কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (৮ মে) বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল মতিনের স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। বোর্ডসংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এদিকে ২০১৯ সাল থেকে চলে আসা এ কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ায় শিক্ষকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। তাঁরা বলছেন, বোর্ডের প্রশ্নব্যাংকের কারণে মানসম্মত প্রশ্নপত্র প্রণয়ন হতো। মূল বই থেকে প্রশ্ন হওয়ায় গাইডনির্ভরতাও কমেছিল। এমনকি অভিন্ন এই প্রশ্নে প্রাকনির্বাচনী ও নির্বাচনী পরীক্ষা নেওয়াতে দুবার যশোর বোর্ড দেশসেরা হয়েছিল এসএসসিতে।

বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের জন্য খুলনা বিভাগের ১০ জেলার বাছাইকৃত দক্ষ শিক্ষকেরা প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করে প্রশ্নব্যাংকে জমা দিতেন। ওই শিক্ষকেরাই আবার তা সংযোজন-বিয়োজন (মডারেট) করতেন। পরে সেই প্রশ্নপত্র বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির বার্ষিক ও অর্ধবার্ষিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হতো। এতে শিক্ষার্থীরা মানসম্মত প্রশ্নের সঙ্গে পরিচিত হতো। এর প্রভাবে বোর্ড পরীক্ষায় তারা ভালো ফলাফল অর্জন করত। কিন্তু গতকাল বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের অফিস আদেশে বন্ধ হয় অনলাইন প্রশ্নব্যাংকের সেই কার্যক্রম। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, স্ব-স্ব বিদ্যালয় পরীক্ষার প্রশ্নপত্র (পাবলিক পরীক্ষা ছাড়া) নিজেরাই প্রণয়ন করবে। কোনো অবস্থাতেই অন্য কোনো উৎস থেকে সংগৃহীত প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেওয়া যাবে না মর্মে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত থাকায় যশোর শিক্ষা বোর্ড পরিচালিত প্রশ্নব্যাংকের সব কার্যক্রম স্থগিত করা হলো।

শিক্ষা বোর্ডের এই কার্যক্রম নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে শিক্ষকদের মধ্যে। পক্ষে-বিপক্ষে মতামত দিচ্ছেন অনেকে।

যশোর সদরের আমদাবাদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পারভেজ মাসুদ বলেন, ‘আসলে বোর্ডের প্রশ্নব্যাংকে মানসম্মত প্রশ্নপত্র প্রণয়ন হতো। ১০ জেলার সেরা শিক্ষক দিয়ে এই প্রশ্ন করা হতো। এতে মূল বই থেকে প্রশ্ন হওয়ায় গাইডনির্ভরতা কমেছিল শিক্ষার্থীদের মধ্যে। অনেক মফস্বলের শিক্ষার্থীরাও কোনো ক্যাডেট বা জিলা স্কুলের মতো শিক্ষকদের প্রশ্নে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পেত। এ ছাড়া শিক্ষক-শিক্ষার্থী উভয়েই সৃজনশীল প্রশ্নোত্তরে দক্ষ হয়ে উঠেছিল। পরীক্ষার কিছু সময় আগে বোর্ড অনলাইনে প্রশ্নপত্র দিয়ে দেওয়ায় ফাঁসের ঝুঁকি বা প্রবণতাও কমে গিয়েছিল। এই উদ্যোগটা আমার কাছে ভালোই ছিল।’

তবে যশোর জেলা শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বি এম জহুরুল পারভেজ বলেন, ‘প্রশ্নব্যাংকের প্রশ্নে পরীক্ষা নেওয়ায় আমাদের কোনো আপত্তি নেই। এর মাধ্যমে পরীক্ষা নেওয়ায় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা আয় করেছে শিক্ষা বোর্ড। সেই টাকায় দুর্নীতি করেছে। এখন বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা প্রশ্ন তৈরি করে পরীক্ষা নেবেন। প্রশ্ন তৈরি করতে শিক্ষকদের বই পড়তে হবে। এতে শিক্ষকেরা মানসম্মত প্রশ্ন তৈরি করতে পারবেন। হঠাৎ পদ্ধতি পরিবর্তন হওয়াতে কিছুটা সমস্যা হলেও আস্তে আস্তে এটা স্বাভাবিক হবে।’

বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক ড. আব্দুল মতিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এটা মন্ত্রণালয়ের সিন্ধান্ত। তাদের সিন্ধান্ত বাস্তবায়ন করেছি। একমাত্র যশোর বোর্ডই প্রশ্নব্যাংকের মাধ্যমে পরীক্ষা নিত। এটা আসলেই নান্দনিক উদ্যোগ ছিল। প্রশ্নব্যাংকের মাধ্যমে সেরা সেরা শিক্ষকেরা প্রশ্ন করত। এটা থেকে উপকৃত হতো শিক্ষার্থীরা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকেরা। এখন প্রশ্নব্যাংক বন্ধ হওয়াতে উপকৃত হবে গাইড ব্যবসায়ীরা।’

টাকা নেওয়া প্রসঙ্গে আব্দুল মতিন বলেন, ‘আমি নতুন এসেছি। শুনেছি ১০ টাকা করে নেওয়া হতো। সেটা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত