Ajker Patrika

বোমা নিয়ে খেলার সময় বিস্ফোরণে শিশু নিহত, আহত দুই সহোদর

­যশোর প্রতিনিধি
আপডেট : ১৯ মে ২০২৫, ১৯: ৪৭
বিস্ফোরণে তছনছ হয়ে যাওয়া ঘর। ছবি: আজকের পত্রিকা
বিস্ফোরণে তছনছ হয়ে যাওয়া ঘর। ছবি: আজকের পত্রিকা

যশোরে ঘরের মধ্যে লাল স্কচটেপে মোড়ানো বোমা নিয়ে খেলার সময় বিস্ফোরণে এক শিশু নিহত এবং তার দুই ভাইবোন আহত হয়েছে। আজ সোমবার সকালে শহরের শংকরপুর জমাদ্দারপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহত শিশুর নাম খাদিজা (৭)। আহত হয়েছে সজীব (৫) ও আয়েশা (৩)। তারা জমাদ্দারপাড়ার শাহাদাত ও সুমি খাতুন দম্পতির সন্তান।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, ওই দম্পতি হকারির পাশাপাশি ভাঙারির ব্যবসা করেন। আজ সকালে প্রতিদিনের মতো দুজনে কাজের সন্ধানে যান। আধপাকা টিনের বাড়িতে ছিল তিন শিশু। সবার ছোট আয়েশা ঘরের এক কোণে ঘুমিয়ে ছিল। খাদিজা ও সজীব ঘরে লাল স্কচটেপে জড়ানো বলের মতো একটি বস্তু নিয়ে খেলছিল। একপর্যায়ে এটি বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। পরে আশপাশের লোকজন দৌড়ে এসে দেখে, রক্তাক্ত অবস্থায় কান্নাকাটি করছে তিন ভাইবোন। সেখান থেকে তাদের উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থা গুরুতর হলে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে খাদিজা ও সজীবকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে খাদিজার মৃত্যু হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ আছে আয়েশা।

খাদিজার দাদি মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘বাচ্চা তিনটা রেখে বাইরে কাজে গেছিল তাদের মা-বাবা। তার মধ্যে কীভাবে কী হয়ে গেল কিচ্ছু বুঝতে পারছি না।’

এদিকে বোমাটি কীভাবে পাওয়া গেল, তা নিয়ে রহস্য তৈরি হয়েছে। স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, খাদিজার বাবা সুজন মারা যাওয়ার পর সুজনের ছোট ভাই শাহাদাতের সঙ্গে তাঁর স্ত্রী সুমির বিয়ে হয়। শাহাদাত মাদকাসক্ত। তিনি স্থানীয় সন্ত্রাসী মুসার সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। তিনি বোমাটি গোপনে ঘরের মধ্যে রেখেছিলেন।

তবে সুমি বলেন, ‘বাড়ির সামনে খেলার মাঠে কলাগাছের গোড়াতে কেউ বোমা রেখেছিল। সেটা সকালে তারা (শিশুরা) কুড়িয়ে পেয়ে ঘরের ভেতরে নিয়ে যায়। সকালে বের হওয়ার সময় দেখি, তারা হাতে লাল টেপ দিয়ে মোড়ানো বলের মতো কিছু একটা নিয়ে খেলা করছে। আমি দেখে বুঝেছিলাম, বল নিয়ে তারা খেলা করছে। পরে শুনি আমার সন্তানেরা বোমার আঘাতে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে।’

ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনীর সদস্যদের অবস্থান। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনীর সদস্যদের অবস্থান। ছবি: আজকের পত্রিকা

কান্নাজড়িত কণ্ঠে সুমি বলেন, ‘আমার নাড়িছেঁড়া ধন এভাবে প্রাণ হারাবে, সেটা কখনো বুঝতে পারিনি। এক মেয়েরে তো হারালাম, আরেক সন্তান মুমূর্ষু অবস্থায় আছে। আগে যদি জানতাম ওদের হাতে বোমা, তাহলে কি আর খেলতে দিতাম? কারা আমার এই সর্বনাশটা করল?’

বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা বাড়িসহ আশপাশের এলাকা ঘিরে রেখেছেন। ঘরের ভেতরের মেঝে রক্তাক্ত হয়ে আছে। উৎসুক জনতা ভিড় করছে বাড়িতে। খবর পেয়ে বেলা ১১টার দিকে যশোরের পুলিশ সুপার রওনক জাহানসহ পুলিশ ও সেনা কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। দুপুর ১২টার দিকে ঘটনাস্থলে আসে সেনাবাহিনীর বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট।

যশোর ক্যান্টনমেন্টের ৫৫ পদাতিক ডিভিশনের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের অধিনায়ক ক্যাপ্টেন রিফাত বলেন, ‘আমরা ঘরে তল্লাশি করেছি। সেখানে টিনের কৌটা, লাল টেপ ও কাচ পাওয়া গেছে। এরপর আমরা স্থানীয়দের কথামতো বাড়ির সামনে খেলার মাঠে তল্লাশি করি। সেখানে কিছু পাইনি। বোমাটি স্থানীয়ভাবে তৈরি করা। দুর্বৃত্তরা কোথাও নাশকতা ঘটানোর জন্য এটি রেখেছিল।’

এ বিষয়ে যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কাজী বাবুল হোসেন বলেন, কীভাবে ককটেলটি এখানে রাখা হয়েছিল, সেটা পুলিশ খতিয়ে দেখছে। শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন এবং পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জামায়াতের অফিসে আগুন নেভাতে গিয়ে কোরআন শরিফ দেখেননি, দাবি ফায়ার সার্ভিসের

দিনাজপুরে নিহত মাইক্রোবাস-আরোহীদের সবাই সরকারি কর্মকর্তা

ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স: রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে আসন নেই সাবেক প্রধানমন্ত্রীর

ফরিদপুরে গাড়ির চাকায় ছিন্নভিন্ন অজ্ঞাত ব্যক্তি, অক্ষত শুধু পায়ের জুতা

নুসরাত ফারিয়ার গ্রেপ্তার বিব্রতকর: উপদেষ্টা ফারুকী

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত