Ajker Patrika

যশোরে শহরজুড়ে সহিংসতার ক্ষতচিহ্ন

যশোর প্রতিনিধি
যশোরে শহরজুড়ে সহিংসতার ক্ষতচিহ্ন

শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের পর গত সোমবার যশোরে রীতিমতো তাণ্ডব চালায় বিজয় মিছিলে থাকা বিক্ষুব্ধ জনতা। শহরজুড়ে তাদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয় বিভিন্ন স্থাপনা, আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। সেখানে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। সহিংসতায় প্রাণ হারান ২৪ জন।

এই কয়েক দিন শহর থমথমে থাকলেও গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। তবে শহরে এখনো তাণ্ডবের দগদগে ক্ষত দৃশ্যমান রয়েছে। এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনাগুলোর মালিক আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা আত্মগোপনে থাকায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে পুঁজি করে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তরা এসব ঘটিয়েছে।

সোমবার বিকেল ৪টার দিকে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের মালিকানাধীন পাঁচ তারকা হোটেল জাবির ইন্টারন্যাশনালে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। শহরের চিত্রা মোড়ে অবস্থিত ১৪ তলা হোটেলটি পুরো পুড়ে যায়। এতে সেখানে থাকা এক বিদেশি অতিথি, কর্মচারী, আন্দোলনকারীসহ মোট ২৪ জন নিহত হন। অগ্নিদগ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ২৩ জন। খুলনা ও যশোরের সাতটি ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের কর্মীরা টানা ৭ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।

শহরের অন্য প্রান্তে কাজীপাড়া কাঁঠালতলায় শাহীনের বাড়ি, ব্যক্তিগত রাজনৈতিক কার্যালয়েও ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। তাঁর হোটেলে আক্রমণের পর একদল দুর্বৃত্ত শহরের রেলসড়কে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহিত কুমার নাথের ছেলে পার্থপ্রতিম নাথের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নাথ কম্পিউটারে লুটপাট চালায়। দোকান ও তিনটি গুদামে থাকা কম্পিউটার, ল্যাপটপ, এসি, রাউটার ও আমদানি করা যন্ত্রাংশ লুট করে নিয়ে যায়।

পার্থপ্রতিম বলেন, ‘২৪ বছর ধরে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানটি সাজিয়েছি। মাথায় জাতীয় পতাকা বেঁধে ও হাতে লাঠি নিয়ে দুর্বৃত্তরা প্রকাশ্যে ৪ কোটি টাকার বেশি মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে। সেনাবাহিনীকে খবর দিলে শেষ দিকে গাড়ি আসে কিন্তু লুটপাট ঠেকানো যায়নি। ব্যাংকের কাছে আমার কোটি কোটি টাকা ঋণ। আমরা নিঃস্ব হয়ে রাস্তায় বসে গেলাম।’

এই প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি মোহিতের ব্যক্তিগত অফিস ও তাঁর মালিকানাধীন দৈনিক প্রজন্মের ভাবনা পত্রিকা অফিস ভাঙচুর করে ১০টি কম্পিউটার লুট করে নিয়ে গেছে বলেও পার্থপ্রতিম জানান। একই জায়গায় অবস্থিত মদের পরিবেশক সুকুমার কুমারের এফএল শপও ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে।

শহরের বকুলতলা মোড়ে দেশের সর্ববৃহৎ শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভাঙচুর করা হয়েছে। লুট করে নিয়ে গেছে ম্যুরালের পাশের নিরাপত্তা বেষ্টনী। এ ছাড়া চারখাম্বা মোড়ে শেখ রাসেলের ভাস্কর্যটি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। লুট হয়ে গেছে বেষ্টনী। বকুলতলায় হযরত গরীব শাহ রহ. মাজার শরিফেও দুর্বৃত্তরা হামলা ও লুটপাট করেছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শুধু যশোর শহর নয়, সদর উপজেলাজুড়েই নৈরাজ্য, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। তিন দিন ধরে এসব ঘটনা ঘটলেও কাউকে ঠেকাতে দেখা যায়নি। পুলিশের কর্মবিরতি থাকায় তারাও মাঠে নেই। জেলায় থানা ও ফাঁড়িগুলো তালাবদ্ধ দেখা গেছে।

এ নিয়ে কথা হলে যশোরের পুলিশ সুপার মাসুদ আলম বলেন, আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আর কোনো হামলার ঘটনা যাতে না ঘটে সে জন্য পুলিশ সজাগ আছে। সমাজের অংশীজনদের সঙ্গে নিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক করতে পুলিশ কাজ শুরু করেছে। হামলার যে ঘটনাগুলো ঘটেছে, সেগুলোকে বিচ্ছিন্ন হিসেবে দেখে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি। সেই সঙ্গে বলেন, প্রতিটি ঘটনার তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আস্থায় বাজিমাত ইসলামী ব্যাংক

চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ডে গেছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ

‘ফের ধর্ষণচেষ্টার ক্ষোভে’ বাবাকে খুন, ৯৯৯-এ কল দিয়ে আটকের অনুরোধ মেয়ের

আ. লীগের ক্লিন ইমেজের ব্যক্তিদের বিএনপির সদস্য হতে বাধা নেই: রিজভী

১৫ স্থাপনায় পাকিস্তানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, আকাশেই ধ্বংসের দাবি ভারতের

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত