Ajker Patrika

যশোরে ফুটপাত দখলে নিয়ে ইউএনওর মিনি পার্ক, দুর্ঘটনার শঙ্কা

মনিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি 
আপডেট : ২৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭: ৫১
Thumbnail image
মনিরামপুরের মোহনপুর বটতলায় আঞ্চলিক সড়কের গা ঘেঁষে পৌর মিনি পার্ক করা হয়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

যশোরের মনিরামপুরে সড়ক ও জনপদের (সওজ) জায়গায় পৌর মিনি পার্ক গড়ে তুলেছেন পৌরসভার প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিশাত তামান্না। যশোর-চুকনগর আঞ্চলিক মহাসড়কের মোহনপুর বটতলা মোড়ে ফুটপাতের ওপর এই পার্ক নির্মাণে পৌরসভার ব্যয় হয়েছে ৮ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। সওজের কর্মকর্তারা দাবি করছেন, তাদের অনুমতি ছাড়াই এই পার্ক নির্মাণ করা হয়েছে। এদিকে স্থানীয়দের অভিযোগ, ফুটপাতের ওপর বানানো এই পার্কের কারণে দুর্ঘটনার শঙ্কা আরও বেড়ে গিয়েছে।

চলতি মাসের ১৬ তারিখ আনুষ্ঠানিক পার্কটি উদ্বোধন করেন যশোরের জেলা প্রশাসক আজহারুল ইসলাম। গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিনে মোহনপুর বটতলা মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, যশোর-চুকনগর সড়কের পশ্চিম পাশে ফুটপাতের অংশে ড্রেন নির্মাণের জন্য মাটি তুলে রেখেছে পৌরসভা। ঠিক তার পূর্ব পাশে ফুটপাতের ওপর পিচের রাস্তা ঘেঁষে কংক্রিটের পিলার স্থাপন করে জায়গাটি দখলে নিয়েছে পৌরসভা। ওই অংশে পুরোনো একটি যাত্রী ছাউনি আছে। সেটিকে টাইলস দিয়ে নতুন করে সাজানো হয়েছে। এর পাশে ইটের গাঁথুনি দিয়ে শতাধিক ফুলগাছ লাগানো হয়েছে। এর পাশে সড়ক ঘেঁষে পিলার স্থাপন করা হয়েছে। একটা রড দিয়ে নির্মিত ৩ থেকে ৪ ফুট উচ্চতার পিলারগুলোর অবস্থা এরই মধ্যে বেশ নাজুক হয়ে পড়েছে। একটিকে ভেঙে পড়ে থাকতে দেখা গেছে।

মোহনপুর বটতলা মোড়ের স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই মোড়টি দুর্ঘটনা প্রবণ। এর মধ্যে এভাবে ফুটপাত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক দোকানি বলেন, ‘এখানে পার্কের কোনো উপকারিতা নেই। গত ১৫ দিনে কাউকে এখানে এসে সময় কাটাতে দেখিনি। বরং পার্কের নামে রাস্তার ওপর পিলার দেওয়া হয়েছে। বড় গাড়িগুলোকে সাইড দিতে ভ্যান, ইজিবাইক, মোটরসাইকেল বা সাইকেলের সরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা আরও বাড়ছে।’

ওই দোকানি বলেন, ‘মঙ্গলবার সকালে একটি ইঞ্জিন ভ্যান মাইক্রোবাসকে এগিয়ে দিতে সরে যাওয়ার কোনো জায়গা পায়নি। পরে মাইক্রোবাসটি পেছন থেকে এসে ভ্যানে ধাক্কা দিয়েছে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মনিরামপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজের এক শিক্ষক বলেন, মোহনপুর বটতলা মোড়ে যাত্রী ছাউনির সামনে বাস থামে না। যাত্রী ছাউনিটি অকেজো পড়ে আছে দীর্ঘদিন। আগে যাত্রী ছাউনিটা খোলা ছিল। তারপরও যাত্রীরা এখানে আসতেন না। এখন সেটাতে টাইলস বসিয়ে রং করে কয়েকটি ফুলের চারা লাগানো হয়েছে।

যশোরের জেলা প্রশাসক আজহারুল ইসলাম পার্ক উদ্বোধন করছেন। পাশে ইউএনও নিশাত তামান্না। ছবি: আজকের পত্রিকা
যশোরের জেলা প্রশাসক আজহারুল ইসলাম পার্ক উদ্বোধন করছেন। পাশে ইউএনও নিশাত তামান্না। ছবি: আজকের পত্রিকা

তিনি আরও বলেন, ব্যস্ততম এই সড়কের গা ঘেঁষে এখানে পার্কের কোনো কার্যকারিতা নেই। কিছু টাইলস আর ফুলের চারা লাগিয়ে ৮ লাখ ৬৪ হাজার টাকা খরচ দেখানো হয়েছে। এতে এত টাকা খরচ হওয়ার কথা না। মূলত পৌরসভার টাকা লোপাট করতে পার্কের নামে পথচারীদের ভোগান্তি বাড়ানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

মনিরামপুর পৌরসভার কার্যসহকারী আব্দুর রাশিদ তপু বলেন, ‘সওজের ৩ থেকে ৪ শতক জমির ওপর মিনি পার্ক করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে কোনো অনুমতি নেওয়া হয়নি। সওজ চাইলে পার্ক ভেঙে যে কোনো সময় তাদের জমি দখলে নিতে পারবে।’

সওজের জায়গায় পার্কের নামে লাগানো হয়েছে ফুলের চারা। ছবি: আজকের পত্রিকা
সওজের জায়গায় পার্কের নামে লাগানো হয়েছে ফুলের চারা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মনিরামপুর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী উত্তম মজুমদার বলেন, ‘ইউএনও জায়গাটি পছন্দ করেছেন। ওই স্থানে আমাদের একটি যাত্রী ছাউনি আছে। সেটা দীর্ঘদিন অবহেলিত ছিল। স্থানীয়রা ওই জায়গা দখলে নিয়ে ব্যবসা করতেন। যাত্রী ছাউনি সংস্কার করে মিনি পার্ক গড়লে জনসাধারণের ভালো হবে ভেবে ইউএনও এই উদ্যোগ নিয়েছেন।

উত্তম মজুমদার আরও বলেন, ‘টেন্ডারের মাধ্যমে পার্কের কাজ করা হয়েছে। পত্রিকায় টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়নি। জরুরি হওয়ায় আমাদের পৌরসভার এক ঠিকাদারকে দিয়ে ৮ লাখ ৬৪ হাজার টাকা ব্যয়ে মিনি পার্ক করা হয়েছে। এই টাকার মধ্যে যাত্রী ছাউনি টাইলস বসিয়ে সংস্কার করা হয়েছে। পার্কে টাইলস বসানো হয়েছে। বালু ফেলে ফ্লোর ঢালাই দেওয়া হয়েছে। ইটের গাঁথুনি দিয়ে ফুল বাগিচা করা হয়েছে। একটা ছাতা স্থাপন করা হয়েছে। সেগুলো রক্ষায় রাস্তার পাশ দিয়ে পিলার পুঁতে পার্ক ঘিরে দেওয়া হয়েছে।’ এদিকে সওজের কর্মকর্তারা বলছেন, যশোর-চুকনগর সড়কের পিচের অংশ বাদে দুই সাইডে যতটুকু জায়গায় মাটি ভরাট করা আছে তার পুরোটাই সওজের। সেই জায়গায় পার্ক করার সুযোগ নেই। পার্কের জন্য পৌরসভা কোনো অনুমতি নেয়নি।

ভেঙে পড়েছে পার্কের প্রাচীরের কংক্রিটের পিলার। ছবি: আজকের পত্রিকা
ভেঙে পড়েছে পার্কের প্রাচীরের কংক্রিটের পিলার। ছবি: আজকের পত্রিকা

সড়ক ও জনপদ (সওজ) অধিদপ্তর যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘আমাদের জায়গায় পার্ক গড়তে পৌরসভা কোনো অনুমতি নেয়নি। আমরা দ্রুত সরেজমিন পরিদর্শন করে এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেব।’

সওজের জায়গায় পার্ক করার প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে মনিরামপুর পৌরসভার প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিশাত তামান্না বলেন, ‘আমাদের পৌরসভায় পার্ক করার মতো জায়গা নেই। মোহনপুর বটতলা মোড়ে আমাদের একটি যাত্রী ছাউনি আছে। সেখানে যাত্রীরা বসে বিশ্রাম নেবেন। এ ছাড়া আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অনেকে ওই পথ দিয়ে মনিরামপুরে আসেন। এ জন্য জায়গাটার শোভা বাড়াতে মিনি পার্ক করা হয়েছে।’

ইউএনও আরও বলেন, ‘সওজ যদি মনে করে কখনো রাস্তা বাড়াবে, তখন সেটা দেখা যাবে। জায়গাটি পড়ে ছিল। আমরা সেটাকে দখলমুক্ত রাখতে পার্ক গড়েছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত