Ajker Patrika

ঈদে গরু বেচা নিয়ে দুশ্চিন্তায় খামারিরা

মেহেরাব্বিন সানভী, চুয়াডাঙ্গা
আপডেট : ০৪ জুলাই ২০২১, ১০: ৪৯
ঈদে গরু বেচা নিয়ে দুশ্চিন্তায় খামারিরা

এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে তিনটি গরু কিনে মোটাতাজা করেছেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার গাড়াবাড়িয়া গ্রামের মো. হান্নান। আশায় ছিলেন এবার কোরবানির ঈদে গরু তিনটি বেঁচে সংসারে কিছুটা হলেও সচ্ছলতা আনবেন। কিন্তু ঈদের আগেই সর্বাত্মক লকডাউনে সে আশায় গুড়ে বালি। বেশি দাম পাওয়া দূরে থাক, সব কটি গরু বিক্রি করতে পারবেন কি না, সেই শঙ্কায় আছেন তিনি।

শুধু হান্নান নন, দুশ্চিন্তায় আছেন তাঁর মতো আরও অনেক খামারি। সবার আশঙ্কা, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে মানুষ এবারও পশু কোরবানি কম দেবে। এতে হাটে পশু বিক্রিও কম হবে, যার প্রভাব পড়বে গরুর দামে।

গরু পালনকারীরা বলছেন, প্রতিবছর কোরবানির হাট শুরুর মাস দেড়েক আগে থেকেই দেশের বিভিন্ন এলাকার ব্যাপারীরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে গরু কেনেন। করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার আগ্রহী কোনো ব্যাপারীর দেখা নেই। এ ছাড়া কোরবানির আগমুহূর্তে জমজমাট হাট বসার সম্ভাবনাও কম। এ কারণে পালিত গরু বিক্রি করা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তাঁরা।

কথা হয় জীবননগর উপজেলার আন্দুলবাড়িয়ার খামারি মামুনের সঙ্গে। চিন্তিত এই খামারি বলেন, ‘পালন করা গরুর ন্যায্যমূল্য পাওয়া নিয়ে চিন্তায় আছি। গরুকে প্রতিদিন খাবার হিসেবে খৈল, ভুসি, কুঁড়ো ও কাঁচা ঘাস দিতে হয়। এতে একটি গরুর পেছনে দিনে খরচ পড়ে ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা। এরই মধ্যে প্রতিটি গরুর পেছনে অনেক টাকা বিনিয়োগ করতে হয়েছে। দাম না পেলে বড় লোকসান হবে। আর যদি এবার বিক্রি না হয়, তবে পথে বসতে হবে।’

চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের তথ্য অনুযায়ী, এবারের কোরবানির জন্য চুয়াডাঙ্গায় ১ লাখ ৫০ হাজার ২০২টি গবাদিপশু প্রস্তুত রয়েছে। এর মধ্যে গরু ৩৮ হাজার ৬৮৭টি, মহিষ ১৫২টি, ছাগল ১ লাখ ১০ হাজার ৫৫৮টি এবং ভেড়া ৮০৫টি। ঈদের আর মাত্র ১৭-১৮ দিন বাকি। অথচ এখনো ব্যাপারীদের দেখা নেই। 

ব্যবসা করতে না পারায় আক্ষেপ আছে ব্যাপারীদের মধ্যেও। হানুবাড়াদী গ্রামের গরু ব্যবসায়ী আবদুল্লাহ বলেন, ‘সারা বছরই আমরা গরু কেনাবেচার মধ্যে থাকি। কোরবানির আগের কিছুদিন সব থেকে বেশি ব্যবসা হয়। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে দুই মাস ধরে নিয়মিত হাট বসতে পারছে না। আর কোরবানির আগমুহূর্তে হাট বসার সম্ভাবনা খুবই কম। এই অবস্থায় বাজার খুবই মন্দা থাকবে। কোনোভাবেই ভালো ব্যবসা আশা করা যাচ্ছে না।’

কোরবানির ঈদে পশু বিক্রি নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকলেও খরচ কিন্তু থেমে নেই খামারিদের। বরং পশুখাদ্যের উচ্চমূল্যের কারণে বেড়েই চলেছে এই খরচ। ঘুঘরাগাছি গ্রামের বিশারত আলী বলেন, ‘ছয় মাস আগে এক বস্তা গমের ভুসির দাম ছিল ১ হাজার ১০০ টাকা। এখন তা বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৪০০ টাকা। আগে যে খৈলের দাম ছিল ৩০ থেকে ৩২ টাকা কেজি, করোনাকালে তা কিনতে হচ্ছে ৩৮-৪০ টাকা দরে। শুধু গমের ভুসি ও খৈল না, সব রকম গোখাদ্যের দাম গড়ে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ বেড়েছে। গরুর খাবারের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং ক্রেতার সংখ্যা কম হওয়ার আশঙ্কায় ও হতাশায় রয়েছি। এ ছাড়া অন্য বছর কোরবানির দুই মাস আগে থেকে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বাড়ি থেকে গরু নিয়ে যান। কিন্তু এ বছর তেমন কোনো ক্রেতা নেই।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত