Ajker Patrika

সিরাজদিখানে দুটি সেতুতে বাতি জ্বলে না, ঝুঁকিতে রাতের চলাচল

আব্দুল্লাহ আল মাসুদ, মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি
সিরাজদিখানে ইছামতী ও ধলেশ্বরী নদীর ওপর নির্মিত দুটি সেতুর ল্যাম্পপোস্টে জলে না কোনো আলো।  ছবি: আজকের পত্রিকা
সিরাজদিখানে ইছামতী ও ধলেশ্বরী নদীর ওপর নির্মিত দুটি সেতুর ল্যাম্পপোস্টে জলে না কোনো আলো। ছবি: আজকের পত্রিকা

মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার চিত্রকোট ইউনিয়নের মরিচা এলাকায় ইছামতী নদীর ওপর এবং তুলসীখালী এলাকায় ধলেশ্বরী নদীর ওপর নির্মিত দুটি গুরুত্বপূর্ণ সেতুর একটি আংশিক, আরেকটি পুরোপুরি অন্ধকারে থাকে। দীর্ঘদিন ধরে এসব সেতুর ল্যাম্পপোস্টে বাতি থাকলেও কোনো আলো জ্বলছে না। ফলে সন্ধ্যার পর এলাকা দুটি ডুবে যায় ঘোর অন্ধকারে। এতে বাড়ছে দুর্ঘটনা, ছিনতাই ও মাদকসংক্রান্ত অপরাধের ঝুঁকি।

এ ছাড়া ঢাকা-দোহার-নবাবগঞ্জ মহাসড়কের বিভিন্ন অংশেও পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা নেই। অথচ এই রুটটি পদ্মা সেতুর বিকল্প পথে রূপ নিয়েছে এবং প্রতিদিন হাজারো যানবাহন ও পথচারী এই সেতু দুটি ব্যবহার করছে।

সোমবার (২১ জুলাই) রাত ৮টার দিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, চিত্রকোট ইউনিয়নের মরিচা এলাকার ইছামতী নদীর ওপর নির্মিত সেতুর কিছু অংশ এবং তুলসীখালী এলাকার ধলেশ্বরী নদীর ওপর সেতুর পুরো এলাকাই অন্ধকারে ঢাকা। কোথাও বাতি ঝুলে আছে, কিন্তু কাজ করছে না। সেতু দুটি ও আশপাশের পুরো এলাকা ঘোর অন্ধকার, যা যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে।

ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, গোপালগঞ্জ, বাগেরহাট, খুলনাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ এ পথেই যাতায়াত করে থাকে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ২০০৫ সালের ১২ অক্টোবর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া মরিচা ও তুলসীখালী এলাকার সেতু দুটি উদ্বোধন করেন। বর্তমানে এসব সেতুর নিরাপত্তাহীনতা ও আলোর অভাব জননিরাপত্তাকে চরম ঝুঁকিতে ফেলেছে।

তুলসীখালী গ্রামের বাসিন্দা ইকবাল হোসেন বলেন, ‘সন্ধ্যার পর সেতু এলাকায় চলাচল করাটা খুব রিস্কি। মাদকসেবীরা দল বেঁধে এখানে ঘোরাফেরা করে। এ ছাড়া ছিনতাই ও অসামাজিক কার্যকলাপ বেড়েছে। অনেক সময় নারীরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থেকে এমন কাজ করে, যা এলাকাবাসীর জন্য অপমানজনক। তাই এখানে বাতিগুলো সচল করার দাবি জানাচ্ছি।’

চিত্রকোট ইউনিয়নের বাসিন্দা নিতাই চন্দ্র দাস বলেন, এক মাস আগে রাতে ঢাকা থেকে সিএনজি অটোযোগে বাড়ি ফেরার সময় তুলসীখালী সেতুর ওপর ছিনতাইকারীরা থামিয়ে আমার সবকিছু নিয়ে যায়। এখন তো সেতুতে বাতিও জ্বলে না। ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা আরও বেড়েছে।

স্থানীয়রা জানান, সন্ধ্যার পর থেকে বিভিন্ন এলাকার উঠতি বয়সী ছেলেরা মোটরসাইকেল এনে এই সড়কে প্রতিযোগিতা করে। পাশাপাশি মাদক সেবন ও বিক্রি চলে প্রকাশ্যেই। এমনকি অনেক সময় অসামাজিক কর্মকাণ্ডেও জড়িয়ে পড়ে একশ্রেণির তরুণ-তরুণী। এসব কারণে সেতু দুটি অপরাধপ্রবণ এলাকায় পরিণত হয়েছে। ফলে সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে নারী ও পরিবার নিয়ে চলাচলকারীরা পড়েন চরম নিরাপত্তাহীনতায়।

বাসচালক মো. নাসির হোসেন বলেন, রাতে এই সেতুগুলো পার হতে গেলে খুব সতর্ক থাকতে হয়। আলো না থাকায় বিপরীত দিক থেকে কিছু এলে বোঝা যায় না। প্রায়ই দুর্ঘটনার উপক্রম হয়।

নবাবগঞ্জের বাসিন্দা মোটরসাইকেলচালক তানভীর আহমেদ বলেন, ভোরে বা রাতে সেতু পার হওয়া দুঃস্বপ্ন। হঠাৎ সামনে কুকুর বা মানুষ চলে আসে। কিছুদিন আগে আমার এক বন্ধুর মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ ছিনতাই হয়েছে এখানেই।

শেখরনগর তদন্তকেন্দ্রের ইনচার্জ (আইসি) মো. তাজুল ইসলাম বলেন, তুলসীখালী ও মরিচা সেতু এলাকা দীর্ঘদিন ধরেই একটি অপরাধপ্রবণ স্থান হিসেবে পরিচিত। বিশেষ করে রাতে ওই এলাকাগুলোতে আলো না থাকায় অপরাধের আশঙ্কা আরও বেড়ে যায়।

সড়ক ও জনপথ (সওজ) কেরানীগঞ্জ উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ বলেন, তুলসীখালী ও মরিচা এলাকার সেতু দুটিতে এর আগেও আমরা নতুন ট্রান্সফরমার ও ল্যাম্পপোস্টের বাতি স্থাপন করেছিলাম। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই সেগুলো চুরি হয়ে যায়। আমাদের ধারণা, আবারও বৈদ্যুতিক তার, যন্ত্রাংশ কিংবা বাতিগুলো চুরি হয়েছে। ওই এলাকায় রাতের বেলায় পরিবেশ খুব একটা নিরাপদ নয়। মাদকসেবী ও অপরাধীদের চলাফেরা রয়েছে, এমনকি পুলিশের টহলও খুব কম। এসব কারণে বারবার স্থাপন করা সরঞ্জাম চুরি হয়ে যাচ্ছে এবং আলোর ব্যবস্থা সচল রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে।

তিনি আরও বলেন, তবু আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছি। ইতিমধ্যে ইলেকট্রিশিয়ান পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যাতে দ্রুত বাতিগুলো মেরামত করে চালু করা যায়। আমরা চাই, সেতুগুলো সব সময় আলোকিত থাকুক, যেন মানুষ নিরাপদে চলাচল করতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত