Ajker Patrika

মাগুরার চার উপজেলা

ময়লার ভাগাড়ের নিচে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন

  • কোথাও কোনো স্মৃতিফলক ও স্মৃতিস্তম্ভ নেই।
  • সরকারি অনেক জায়গা বেদখল হয়েছে।
  • কিছু জায়গা ব্যবহার করা হচ্ছে ডাস্টবিন হিসেবে।
ফয়সাল পারভেজ, মাগুরা 
Thumbnail image
মাগুরার সবচেয়ে বড় বধ্যভূমি শহরের ঢাকা রোডের লাল ব্রিজসংলগ্ন এলাকায়। অথচ সেখানে কোনো স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়নি। ফেলা হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা। ছবিটি সম্প্রতি তোলা। আজকের পত্রিকা

মাগুরা জেলার চারটি উপজেলায় রয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ের গণকবর ও বধ্যভূমি। তবে নেই সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা। কোথাও দালানকোঠা উঠেছে, কোথাও রয়েছে ময়লার ভাগাড়। মহান মুক্তিযুদ্ধের এসব স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণে নেই কোনো সরকারি উদ্যোগ।

মাগুরার এই চার উপজেলা হলো সদর, শ্রীপুর, মহম্মদপুর ও শালিখা। শতাধিক বধ্যভূমি ও গণকবর বিচ্ছিন্নভাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে এসব এলাকায়। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় বধ্যভূমি আছে শহরের ঢাকা রোড এলাকার প্রাইমারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে (পিটিআই)। পাকিস্তানি বাহিনীর সবচেয়ে বড় ক্যাম্প ছিল এখানে। মাগুরার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখানে প্রতিদিন শতাধিক মানুষকে নির্যাতন ও হত্যা করে মাটিতে পুঁতে রাখা হয়েছে। তাঁদের ভাষ্য, এটি মাগুরার সবচেয়ে বড় গণকবর। অথচ সরেজমিনে দেখা গেছে, পিটিআইয়ের মাঠের চারপাশে সারি সারি দালানকোঠা। পুরো পিটিআইয়ের কোথাও লেখা নেই, সেখানে বধ্যভূমি রয়েছে।

এ ছাড়া পারনান্দুয়ালি ক্যানেল, পিটিআই, ইসলামপুরপাড়ার মধুমতি ডাকবাংলো, নবগঙ্গা নদীর পাড়, ফটকি নদের পাড়, খামারপাড়া, ওয়াপদা এবং তালখড়িতে বধ্যভূমি ও গণকবর রয়েছে। একই সঙ্গে শালিখার ছয়ঘরিয়া, হাজরাহাটির চিত্রা নদীর পাড়, মহম্মদপুরের টিটিডিসি হল এলাকায়ও রয়েছে বধ্যভূমি। স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী এবং তাদের দোসর রাজাকাররা নিরীহ বাঙালি ও মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করে গণকবর দিয়েছে এসব এলাকায়। এর মধ্যে মাগুরা শহরের অদূরে ঢাকা রোডের লাল ব্রিজসংলগ্ন বাঁধ এবং পল্লী বিদ্যুৎ এলাকার নালায় শত শত মানুষকে হত্যা করে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়ার ইতিহাসও মাগুরার মুক্তিযোদ্ধাদের জানা। সেখানেও কোনো স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়নি। এই এলাকা পরিণত হয়েছে ময়লার ভাগাড়ে।

শালিখা উপজেলার আড়পাড়ার বাজারের পাশে ফটকি নদের তীরে ডাকবাংলো এলাকায় শরণার্থী এবং মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে এনে হত্যা করার ঘটনা ঘটেছিল। এখন সেখানে ডাকবাংলো থাকলেও আশপাশ ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। পুরো উপজেলা শহরের ময়লা এখন এখানে ফেলা হয়। এটিও সংরক্ষণ করা হয়নি। অপর দিকে শালিখা উপজেলার ছয়ঘরিয়া নামক স্থানে রাস্তার দুই পাশে গণকবরে শায়িত রয়েছেন ৬ মুক্তিযোদ্ধা। তাঁদের পরিচয় এখনো জানা যায়নি।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আকরাম হোসেন জানান, মাগুরার কোনো গণকবরই সংরক্ষণ করা হয়নি। কামারখালী ব্রিজে যেতে ওয়াপদার পেছনে আনসার ক্যাম্প, সেখানে শত শত মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল। সেখানেও কোনো স্মৃতিফলক দেওয়া হয়নি। পিটিআই এলাকাসংলগ্ন বধ্যভূমির স্থানে ময়লা-আবর্জনা ফেলার পাশাপাশি শৌচাগার নির্মাণ করা হয়েছে। ইসলামপুরপাড়ার মধুমতি ডাকবাংলোর পেছনে মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষকে সে সময় হত্যা করা হয়েছিল। এখন সব বেদখল হয়ে গেছে, কোনো চিহ্ন রাখা হয়নি।

এ বিষয়ে মাগুরার জেলা প্রশাসক মো. অহিদুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি নতুন এসেছি। আমি এসব মুক্তিযোদ্ধা ও স্থানীয়দের কাছ থেকে শুনেছি। আগামী প্রজন্মের জন্য এই ইতিহাস সংরক্ষণ জরুরি। আমি এটা নিয়ে কাজ করব। অন্তত স্মৃতিচিহ্নস্বরূপ যদি কিছু করা যায়, তবে এ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে দেশকে এগিয়ে নেবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত