Ajker Patrika

পঞ্চম শ্রেণির শিশুকে শিক্ষিকার থাপ্পড়, কানের পর্দা ফেটেছে ধারণা চিকিৎসকের

চৌগাছা (যশোর) প্রতিনিধি
পঞ্চম শ্রেণির শিশুকে শিক্ষিকার থাপ্পড়, কানের পর্দা ফেটেছে ধারণা চিকিৎসকের

যশোরের চৌগাছায় পঞ্চম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে ওই বিদ্যালয়ের এক সহকারী শিক্ষিকার বিরুদ্ধে। এতে ওই শিক্ষার্থীর কানের পর্দা ফেটে গেছে বলে ধারণা করছেন চিকিৎসক। এ দিকে অভিযোগের বিদ্যালয়ে গিয়ে এ ঘটনার সত্যতা পেয়েছেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। সেই সঙ্গে আরও কিছু শিক্ষকের বিরুদ্ধে পেয়েছেন চাঞ্চল্যকর অভিযোগ।

এ ঘটনা ঘটেছে যশোরের চৌগাছা উপজেলার বহিলাপোতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ভুক্তভোগী ওই বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মোছা. পান্না খাতুন। এ ঘটনায় অভিযুক্ত হলেন—ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নারগিস পারভীন। এ ঘটনার বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও তার মা।

আজ মঙ্গলবার ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরেজমিনে তদন্ত করেছেন—উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান এবং সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা হায়দার আলী। তাঁরা এ অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন। অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষক ওই শিক্ষার্থীকে একটি থাপ্পড় মেরেছিলেন বলে লিখিতভাবে তদন্ত কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন।

গত রোববার বিদ্যালয় চলাকালীন এ ঘটনা ঘটলেও মঙ্গলবার ওই শিক্ষার্থীকে তার মা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা করাতে নিয়ে গেলে বিষয়টি জানাজানি হয়। গতকাল সোমবার রাতে ভুক্তভোগী ওই ছাত্রীর মা মোবাইল ফোনে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে এ বিষয়ে বিচার চেয়ে অভিযোগ করেন বলে জানা যায়। 

উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার ওই শিক্ষার্থীর মা যশোর জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগের অনুলিপি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য যশোরের জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়। লিখিত অভিযোগ পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হন।

তদন্তে বিদ্যালয়ের চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকেরা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে অভিযোগে জানায়, বিদ্যালয়ের দুজন সহকারী শিক্ষক আসলাম হোসেন ও নারগিস পারভীন প্রতিনিয়তই শিক্ষার্থীদের কারণে-অকারণে মারধর করেন। সেই সঙ্গে প্রধান শিক্ষকসহ দুই সহকারী শিক্ষক অশ্লীল ভাষায় শিক্ষার্থীদের গালিগালাজও করেন।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ—সহকারী শিক্ষক আসলাম হোসেন প্রতিনিয়তই তাদের মারপিট করেন এবং পানি মুখে নিয়ে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির মেয়ে শিক্ষার্থীদের গায়ে কুলি করেন। এসব বিষয়ে তারা প্রধান শিক্ষককের কাছে অভিযোগ করলেও কোনো প্রতিকার পায়নি। উল্টো প্রধান শিক্ষকও তাদের অশ্লীল ভাষায় গালি গালাজ করেন।

লিখিত অভিযোগের বিবরণী থেকে জানা যায়, গত রোববার দুপুরে সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুর রহমান ওই বিদ্যালয় পরিদর্শনে যান। তিনি যখন অফিসে বসে প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলছিলেন, তখন সহকারী শিক্ষক নারগিস পারভীন ভুক্তভোগী পান্নাকে একটি ঝাটা এনে দিতে বলেন এবং আরেক শিক্ষার্থীকে বিদ্যালয়ের সিঁড়ি ঘর ঝাড়ু দিতে বলেন। তবে পান্না ঝাটা নিয়ে গিয়ে সেখানে রাখলেও অন্য শিক্ষার্থীটি সিঁড়ি ঘর ঝাড়ু দেয়নি। এর কিছুক্ষণ পর শিক্ষক নার্গিস পারভীন পান্নাকে ডেকে বলেন—‘ঝাড়ু দিসনি কেন? ঝাটা দিয়ে তোর মুখ ভেঙে দেব।’ এ সময় শিক্ষার্থী পান্না প্রত্যুত্তরে বলে—‘আপনি কি আমার মুখ বানিয়ে দিয়েছেন? ঝাটা দিয়ে ভেঙে দেবেন?’ এমন প্রত্যুত্তরে শিক্ষক নার্গিস রেগে গিয়ে পান্নার বাম কানে তিনটি থাপ্পড় দেন। এরপর সে কান্নাকাটি করলে নার্গিস পারভীন আরও কয়েকটি থাপ্পড় দিয়ে বলেন—‘লাগেনি! অভিনয় করছে।’ এ ঘটনা ভুক্তভোগী বাড়িতে গিয়ে কাউকে না বললেও পরদিন সোমবার সন্ধ্যার দিকে তার গায়ে জ্বর এসে যায় এবং কানে যন্ত্রণা হচ্ছে বলে তার মাকে জানায়। এ সময় কারণ জানতে চাইলে ভুক্তভোগী তার মাকে বিস্তারিত খুলে বলে। পরে মঙ্গলবার সকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে সেখানকার চিকিৎসক তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন এবং কানের পাতলা পর্দা ফেটে থাকতে পারে বলে জানান। এরপরই ভুক্তভোগী ও তার মা এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেন।

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক আকিব বলেন, ‘মেয়েটি কানের পর্দা ফেটে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কানের মধ্যে পানি জমে রয়েছে। ওষুধ দেওয়া হয়েছে। শুকানোর পর ভালোভাবে বোঝা যাবে। পর্দা ফেটে গেলে অপারেশন করা ছাড়া উপায় থাকবে না।’

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি তাৎক্ষণিক তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট কমপ্লিট করছি। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হবে। তিনি নির্দেশ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। উপজেলা ইউআরসি ইনসট্রাক্টরকে তদন্ত করে দ্রুত রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা তাৎক্ষণিক তদন্ত করে বিষয়টির সত্যতা পেয়েছেন। অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আমিনুল ইসলাম নন, শিক্ষা উপদেষ্টা হচ্ছেন অধ্যাপক আবরার

গণপিটুনিতে নিহত জামায়াত কর্মী নেজাম ও তাঁর বাহিনী গুলি ছোঁড়ে, মিলেছে বিদেশি পিস্তল: পুলিশ

বিএনপির দুই পেশাজীবী সংগঠনের কমিটি বিলুপ্ত

বসুন্ধরায় ছিনতাইকারী সন্দেহে ২ বিদেশি নাগরিককে মারধর

উপদেষ্টা হচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আমিনুল ইসলাম

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত