Ajker Patrika

খুলনা অঞ্চলে অতিবৃষ্টিতে শতকোটি ক্ষতির শঙ্কা কৃষিতে

  • বৃষ্টিতে চার জেলায় আক্রান্ত হয় ৩০ হাজার ৭৫৮ জন কৃষকের ১ হাজার ৯১৭ হেক্টর জমি।
  • ধান, শাকসবজি, মরিচ, তরমুজ, পান, টমেটোসহ অন্যান্য ফসল চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
  • ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পুনর্বাসনে বীজ সরবরাহসহ প্রণোদনা দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
খুলনা প্রতিনিধি
কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে খেতের ফসল। সম্প্রতি সাতক্ষীরার উপকূলীয় অঞ্চল পাটকেলঘাটায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে খেতের ফসল। সম্প্রতি সাতক্ষীরার উপকূলীয় অঞ্চল পাটকেলঘাটায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

খুলনা অঞ্চলে সম্প্রতি অতিবৃষ্টির কারণে প্রায় ২ হাজার হেক্টর ফসলি জমির ক্ষতি হয়েছে। এতে ৩০ হাজারের বেশি কৃষকের ১০০ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, ৫ থেকে ১০ জুলাই পর্যন্ত খুলনায় ২২৮, বাগেরহাটে ৩৭৫, সাতক্ষীরায় ১২৯ ও নড়াইলে ৬৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। এতে আমনের বীজতলা ও বোনা আমন, আউশ, শাকসবজি, মরিচ, তরমুজ, পান, টমেটোসহ অন্যান্য ফসল চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

খুলনার পাইকগাছা উপজেলার রাড়ুলী ইউনিয়নের কৃষক মো. সেলিম মোড়ল বলেন, ‘বৃষ্টিতে আমার রোপা আমনের বীজতলা ডুবে গেছে। আমি ৪০ কেজি ধানের বীজ ফেলেছিলাম। ওই বীজে প্রায় ১০ কাঠা জমিতে আমন ধান চাষ করা যেত। বৃষ্টি সব শেষ করে দিল।’

বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার বকুলতলার কৃষক মো. আসাদুল হাওলাদার বলেন, ‘১০ কেজি বীজ ফেলেছিলাম। সম্পূর্ণ বীজতলা এখন পানির নিচে। এ ছাড়া অন্যান্য সবজিরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে। নতুন করে বীজতলায় বীজ বপনের প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, বৃষ্টিতে চার জেলায় আক্রান্ত হয় ৩০ হাজার ৭৫৮ জন কৃষকের ১ হাজার ৯১৭ হেক্টর জমি। যেখানে ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে ৯৯ কোটি ৯৪ লাখ ৭৬ হাজার ৩৩০ টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পুনর্বাসনে আমনসহ অন্যান্য ফসলের বীজ সরবরাহসহ প্রণোদনা দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

এ নিয়ে কথা হলে পাইকগাছা উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা তাপস সরকার বলেন, ‘রাড়ুলী ইউনিয়নের কাটিপাড়া ও রাড়ুলী ব্লকের দায়িত্বে আছি। আমার ব্লকে রোপা আমনের বীজতলা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুই ব্লকে মোট ১৪ হেক্টর চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য ফসলের মধ্যে ৩ হেক্টর জমির মরিচ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের আবার ঘুরে দাঁড়াতে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে বীজ সহায়তাসহ সব সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।’

পাইকগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. একরামুল হোসেন জানান, পাইকগাছায় গত মঙ্গলবার পর্যন্ত রোপা আমনের বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৬৫ হেক্টর। পাশাপাশি বিভিন্ন রকম সবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৮০ হেক্টর। ক্ষতির পরিমাণ ২ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সম্পূর্ণ ক্ষতি নির্ণয় করতে আরও কয়েক দিন সময় লাগবে। বীজ যথেষ্ট পরিমাণে মজুত রয়েছে। অতিবৃষ্টির কবলে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পুনর্বাসনে কাজ শুরু হয়েছে।

অন্যদিকে শরণখোলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দেবব্রত সরকার বলেন, অতিবৃষ্টির কারণে উপজেলায় রোপা আমনের বীজতলার ক্ষতি ৩৫ হেক্টর। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আউশ ধান, যার পরিমাণ ৮৯০ হেক্টর। এ ছাড়া অন্যান্য ফসল (সবজিসহ) ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৭৫ হেক্টর। ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন ৬ হাজার ৪৫ জন কৃষক। ক্ষতির শঙ্কা নির্ণয় করা হয়েছে ৫৯ লাখ টাকা। এখানেও বিভিন্ন ফসলের বীজ যথেষ্ট পরিমাণে মজুত রয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের পুনর্বাসনে কৃষি বিভাগ কাজ করছে।

যোগাযোগ করা হলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের খুলনা অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সার্বিক বিষয়টি সামনে রেখে প্রতিটি উপজেলা নিয়ে আমরা নিরলসভাবে কাজ করছি। আমনের বীজসহ অন্যান্য ফসলের বীজ যথেষ্ট পরিমাণে মজুত রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পুনর্বাসনে রোপা আমনের বীজসহ অন্যান্য ফসলের বীজ দেওয়াসহ প্রণোদনা দেওয়ার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনুরোধ জানানো হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাষ্ট্রের গোপন নথি ফাঁস: এনবিআরের দ্বিতীয় সচিব মুকিতুলের বিরুদ্ধে এবার মামলা

রক্ত কেনা যায় না—ইয়েমেনে নিমিশাকে ক্ষমা করতে অস্বীকৃতি মাহদির পরিবারের

২৫ সেকেন্ডে ১২ গুলি, হাসপাতালে গ্যাংস্টারের শরীর ঝাঁঝরা

গোপালগঞ্জে হামলার ঘটনায় ফেসবুকে সরব ইসলামপুরের পলাতক আওয়ামী নেতারা

গোপালগঞ্জে সহিংসতায় নিহত ৪ জনের ময়নাতদন্ত হলো না, প্রশ্ন এড়িয়ে গেলেন ডিআইজি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত