Ajker Patrika

যশোরের মনিরামপুর: কাজে আসছে না ২ কোটির সেতু

  • নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার ৭ মাস পার হলেও সংযোগ সড়ক না করায় উপকারে আসছে না সেতুটি
  • চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন ঝাঁপা বাঁওড়ের দুই পাড়ে বসবাসকারী কয়েক হাজার মানুষ
আনোয়ার হোসেন, মনিরামপুর (যশোর)
যশোরের মনিরামপুরের ঝাঁপা-কোমলপুর বাজার সংযোগ সড়কে ঝাঁপা বাঁওড়ের ওপর সেতু নির্মাণ করা হলেও নেই সংযোগ সড়ক। ছবি: আজকের পত্রিকা
যশোরের মনিরামপুরের ঝাঁপা-কোমলপুর বাজার সংযোগ সড়কে ঝাঁপা বাঁওড়ের ওপর সেতু নির্মাণ করা হলেও নেই সংযোগ সড়ক। ছবি: আজকের পত্রিকা

যশোরের মনিরামপুর উপজেলায় ঝাঁপা-কোমলপুর বাজার সংযোগ সড়কে ঝাঁপা বাঁওড়ের ওপর জরাজীর্ণ সেতু ভেঙে নতুন সেতু নির্মিত করা হয়েছে গত মে মাসে। ১ কোটি ৯২ লাখ ৮ হাজার ২১১ টাকা বরাদ্দে ১৩ দশমিক ২০ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটির নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। নির্মাণকাজ শেষ হয়ে সাত মাস পার হলেও সংযোগ সড়ক না করায় উপকারে আসছে না সেতুটি। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন ঝাঁপা বাঁওড়ের দুই পাড়ে বসবাসকারী কয়েক হাজার মানুষ।

ঝাঁপা বাঁওড়ের ওপর নতুন সেতু নির্মাণের কাজ শুরুর সময় পথচারীদের চলাচলের জন্য পাশ দিয়ে বিকল্প একটি কাঠের সেতু করে দিয়েছেন ঠিকাদার। বর্ষা মৌসুমে কাঠের সেতুটি তলিয়ে যাওয়ায় কোমলপুর বাজার থেকে এ পথে ঝাঁপা গ্রামের সঙ্গে যোগাযোগবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। বৃষ্টির পানি সরে যাওয়ায় কাঠের সেতু দিয়ে পারাপার শুরু হলেও পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সেটি দুর্বল হয়ে মাঝ বরাবর ভেঙে পড়ায় পারাপারে ভোগান্তিতে পড়েছেন পথচারীরা। কাঠের সেতু পারাপার হতে প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন তাঁরা।

মনিরামপুর এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালের মে মাসে সেতুর কাজ শুরু হয়। নির্মাণকাজ বাস্তবায়নের জন্য এক বছর সময় নির্ধারণ করা হয়েছিল।

স্থানীয়রা বলছেন, ঝাঁপা গ্রামটি ঝাঁপা ইউনিয়ন পরিষদের ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত বৃহৎ একটি গ্রাম। তিন পাশে বাঁওড় ও একপাশে কপোতাক্ষ নদ ঘেরা এই দ্বীপ অঞ্চলে ২০-২৫ হাজার লোকের বসবাস। ঝাঁপা ইউনিয়নের বাকি ৬ ওয়ার্ডের সঙ্গে ঝাঁপা গ্রামকে বিচ্ছিন্ন করেছে ঝাঁপা বাঁওড়।

ঝাঁপা গ্রামের সঙ্গে ইউনিয়নের অন্য এলাকার যোগাযোগর চারটি পথ আছে। দুটি পথে রাজগঞ্জ বাজারসংলগ্ন ভাসমান সেতু। একটি পথ কোমলপুর বাজার হয়ে বাঁওড়ের ওপর দিয়ে কংক্রিটের সেতু পার হয়ে, অন্য পথটি কোমলপুর বাজার হয়ে দুই থেকে তিন কিলোমিটার ঘুরে মল্লিকপুর হয়ে বাঁওড়ের কংক্রিটের সেতু পার হয়ে। তার মধ্যে যাতায়াত ও ভারী যানবাহনে পণ্য পরিবহনে সহজ পথ হচ্ছে কোমলপুর বাজার হয়ে ঝাঁপা বাঁওড়ের ওপর নির্মিত সেতু পারাপারে। ঝাঁপা বাজারে অবস্থিত পুলিশ ক্যাম্পে যাওয়ার সহজ রাস্তাও এটি। এ পথে নতুন নির্মিত সেতুর সংযোগ সড়ক না থাকায় হেঁটে পথচারীরা কাঠের পুল দিয়ে যাতায়াত করলেও পণ্য পরিবহনে রয়েছেন বড় ভোগান্তিতে।

স্থানীয় অমারেশ বিশ্বাস বলেন, কোমলপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়ার মান ভালো হওয়ায় ঝাঁপা বাঘাডাঙ্গি অঞ্চলের অনেক শিক্ষার্থী সেতু পার হয়ে এই বিদ্যালয়ে আসত। সেতু ভাঙার পর যোগাযোগবিচ্ছিন্ন থাকায় ওই শিক্ষার্থীরা এখন আর এ বিদ্যালয়ে আসে না। এ ছাড়া ঝাঁপা বাঘাডাঙ্গিপাড়ায় একটি আলিম মাদ্রাসা আছে। জোঁকা ও কোমলপুর অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা এই সেতু পার হয়ে ওই মাদ্রাসায় যায়। সেতু ভেঙে যোগাযোগবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় বহু পথ পাড়ি দিয়ে শিক্ষার্থীদের মাদ্রাসায় যায়।

স্থানীয় রবিউল ইসলাম বলেন, ‘এ রাস্তাটুকু না হলে মানুষ যে কত কষ্টে আছে, তা বলে শেষ করা যাবে না। কাঠের ভাঙা সেতু পারাপারের সময় মানুষ পানিতে পড়ে আহত হচ্ছে।’

সেতুর কাজ দেখভালের দায়িত্বে থাকা মনিরামপুর উপজেলা এলজিইডির উপসহকারী প্রকৌশলী এ এস এম খালেকুজ্জামান বলেন, ‘সেতুর কাজ শেষ হয়েছে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে। বর্ষা মৌসুমে বাঁওড়ে পানি বেশি থাকায় দুই পাড়ে সংযোগ সড়ক তলিয়ে ছিল। তা ছাড়া মাটি না পাওয়ায় রাস্তার কাজ করা সম্ভব হয়নি।’

খালেকুজ্জামান বলেন, ‘সেতুর দুই পাড়ে ৫২৩ মিটার রাস্তায় হেরিং বোন (এইচবিবি) ইটের সলিং বসাতে ৩৫ লাখ ৬৬ হাজার টাকা বরাদ্দ রাখা আছে। আগামী ৬ ডিসেম্বর রাস্তার নির্মাণকাজের মেয়াদ শেষ হবে। এরই মধ্যে কাজ শেষ না হলে সময় বৃদ্ধি করা হতে পারে।’

সেতুর কাজের ঠিকাদার নিশাত বসু বলেন, ‘এত দিন মাটি না পাওয়ায় সেতুর সংযোগ রাস্তায় কাজ করা সম্ভব হয়নি। এখন মাটি পাওয়া গেছে, কাজ শুরু করব।’

মনিরামপুর এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী ফয়সাল আহমেদ বলেন, ‘মাটি পাওয়া যাচ্ছিল না। এ জন্য সেতুর সংযোগ সড়কের কাজ করা হয়নি। দ্রুত কাজ শুরু হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১০, আহত ছয় শতাধিক

ভূমিকম্পে মুগদায় নির্মাণাধীন ভবনের রেলিং ধসে নিরাপত্তাকর্মীর মৃত্যু

ভারতের বিপক্ষে চাপের মুহূর্তে মাথা কাজ করছিল না আকবরের

বিশৃঙ্খলা, বিরোধ আর বিতর্কে ভরা এবারের মিস ইউনিভার্স মুকুট ফাতিমার

পাকিস্তানের মন্ত্রীকে যারা বড় জেঠা মনে করে, আমি তাদের বিরুদ্ধে: ফজলুর

এলাকার খবর
Loading...