Ajker Patrika

নগরায়ণে হারিয়ে যাচ্ছে ঢাকার পুকুর

  • ১৯৮৫ সালের ২ হাজার পুকুর থেকে ২০২১ সালে মাত্র ২৪১টি।
  • তিন-চার দশকে প্রায় ১৯০০ পুকুর-জলাশয় দখল বা ভরাট।
আব্দুল্লাহ আল গালিব, ঢাকা
আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯: ০৯
পুরান ঢাকার বংশাল এলাকার এই স্থানে একসময় ছিল পুকুর। পরে ভরাট করে প্রতিষ্ঠা করা হয় সুরিটোলা স্কুল। সেই স্কুলের মাঠে খেলছে শিশু-কিশোরেরা। এদিকে বংশালের অদূরে মুকিম বাজার এলাকায় থাকা শামসাবাদ পুকুরও অস্তিত্ব হারিয়ে রূপান্তরিত হয়েছে খেলার মাঠে (ডানে)। ছবিগুলো সম্প্রতি তোলা। আজকের পত্রিকা
পুরান ঢাকার বংশাল এলাকার এই স্থানে একসময় ছিল পুকুর। পরে ভরাট করে প্রতিষ্ঠা করা হয় সুরিটোলা স্কুল। সেই স্কুলের মাঠে খেলছে শিশু-কিশোরেরা। এদিকে বংশালের অদূরে মুকিম বাজার এলাকায় থাকা শামসাবাদ পুকুরও অস্তিত্ব হারিয়ে রূপান্তরিত হয়েছে খেলার মাঠে (ডানে)। ছবিগুলো সম্প্রতি তোলা। আজকের পত্রিকা

পুরান ঢাকার বংশাল এলাকার সুরিটোলা স্কুলের মাঠে খেলছিল একদল শিশু। পাশেই এক থুত্থুরে বুড়োর টং দোকান। জিজ্ঞেস করে জানা গেল, দোকানির বয়স ৯০ ছুঁই ছুঁই। সুরিটোলা পুকুরের কথা জিজ্ঞেস করতেই তিনি হেসে বললেন, ‘আপনি যেখানে দাঁড়িয়ে আছেন, ঠিক এখানেই ছিল সুরিটোলা পুকুর।’

ঢাকার পুরোনো কিছু পুকুর খুঁজতে গিয়ে এ রকম অভিজ্ঞতা এ প্রতিবেদকের কয়েকবারই হয়েছে। জলাশয়ের জায়গায় পাওয়া গেছে মাটি ফেলে ভরাট করা জমি, স্কুলভবন বা বিপণিবিতান।

বংশালের অদূরেই মুকিম বাজার এলাকা। সেখানে ছিল বাগিচা পুকুর এবং মৌলভি তালবা নামের দুটি পুকুর। তবে খোঁজ করে দেখা যায়, স্থানীয় লোকের অধিকাংশই এগুলোর নামও শোনেননি। শেষমেশ রিপন নামের ৬০ বছর বয়সী এক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, বর্তমান ভৈরব মার্কেট এবং জাফর মার্কেটের জায়গাতেই একসময় দুটি পুকুর ছিল। সেগুলো ভরাট হয়ে গেছে প্রায় ৪০ বছর আগে। আবেগপ্রবণ হয়ে প্রৌঢ় রিপন বললেন, ‘এ পুকুরগুলোয় একসময় কত সাঁতার কাটছি, কত মাছ ধরছি!’

বাগিচা পুকুরের কাছাকাছি থাকা শামসাবাদ পুকুরও অস্তিত্ব হারিয়েছে। আনুমানিক চার দশক আগের পুকুরটি ভরাট হয়ে পরিণত হয়েছে শামসাবাদ খেলার মাঠে। মোহাম্মদপুর অঞ্চলের বছিলা ভাঙা মসজিদের কাছে ঢাকা জেলা প্রশাসনের মালিকানাধীন শত বছরের পুরোনো একটি পুকুর ছিল। স্থানীয়রা জানালেন ২০১৬ সালেই সেটি দখল করে ভরাট করা হয়। নির্মাণ করা হয় বাড়ি।

ঢাকা শহরজুড়েই একসময় ছিল এ রকম বহু পুকুর ও জলাভূমি। জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও জমির দাম দিন দিন বেড়ে যাওয়ায় বলি হয়েছে তার একটা বড় অংশ। এর মধ্যে রয়েছে অনেক ঐতিহ্যবাহী পুকুরও।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের (আরডিআরসি) ২০২১ সালের এক সমীক্ষা অনুযায়ী, তিন-চার দশকে ঢাকার প্রায় ১৯০০ পুকুর ও জলাশয় দখল এবং ভরাট হয়েছে। ১৯৮৫ সালেও শহরে ২ হাজারের বেশি পুকুর ছিল। আরডিআরসির তখনকার হিসাবে (২০২১) ছোট-বড় মিলিয়ে পুকুরের সংখ্যা ছিল মাত্র ২৪১।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, পুকুর ও জলাশয় শুধু একটি জনপদ বা শহরের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য জরুরি নয়, তা ঐতিহ্যেরও অংশ। একটি জনপদের নাগরিক জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা স্মৃতি ও সাংস্কৃতিক পরিচয় বহন করে এসব জলাশয়।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, শহরে সরকারি পুকুরের পাশাপাশি বহু ব্যক্তিমালিকানা পুকুরও ছিল। অনেকেই নিজেদের ইচ্ছেমতো সেগুলো ভরাট করে ফেলেছেন।

‘এই পুকুরগুলোয় একসময় কত সাঁতার কাটছি, কত মাছ ধরছি!’ প্রৌঢ় রিপন মুকিম বাজারের ভরাট হওয়া বাগিচা পুকুর ও মৌলভি তালবা নিয়ে আক্ষেপ করে

সরকার ২০০০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর মহানগরী, বিভাগীয় শহর ও জেলা শহরের পৌর এলাকাসহ সব পৌর এলাকার খেলার মাঠ, প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণে আইন করে। সে আইনে বলা হয়েছে, খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান, উদ্যান এবং প্রাকৃতিক জলাধার হিসেবে চিহ্নিত জায়গার শ্রেণি পরিবর্তন করা বা সে জায়গা অন্য কোনোভাবে ব্যবহার করা যাবে না।

অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, আইন হলেও তা যথাযথভাবে কার্যকর করা হচ্ছে কি না, কোনো সংশ্লিষ্ট সংস্থা সেটার দেখভাল করার কার্যক্রম নেয়নি।

পুরান ঢাকায় এখনো টিকে রয়েছে শতবর্ষী কয়েকটি পুকুর। এর মধ্যে রয়েছে নবাববাড়ী পুকুর বা গোলতালাব, বংশালের পঞ্চায়েত পুকুর, আলুবাজার পুকুর, হোসেনি দালান পুকুর, ধূপখোলা পুকুর ইত্যাদি। স্থানীয়দের পরিচর্যায় নবাববাড়ী পুকুর ও বংশালের পঞ্চায়েত পুকুরের চেহারা বেশ ভালো। তবে সিক্কাটুলির প্রায় ১৫০ বছরের পুরোনো আলী মোল্লা পুকুরটির অবস্থা বেহাল। অযত্ন-অবহেলায় কোনোমতে টিকে রয়েছে এটি।

নগরের পুকুর ও জলাশয়ের অবস্থা বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে ঢাকার জেলা প্রশাসক তানভীর আহমেদ আজকের পত্রিকাকে জানান, সম্প্রতি জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় ভরাট হয়ে যাওয়া পুকুর ও জলাশয়গুলো আবার খনন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যেগুলো মারাত্মকভাবে দূষিত হয়ে পড়েছে, সেগুলোর অবস্থার উন্নয়ন করা হবে। পাশাপাশি জলাশয়গুলোতে মাছ চাষের উপযোগিতা বৃদ্ধি করতে একটি বিস্তারিত পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে পথচারীর মৃত্যু, মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১৩: ৩৬
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

রাজধানীর ফার্মগেটে মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে এক পথচারী নিহত হয়েছেন। আজ রোববার দুপুর ১২টা ২০ মিনিটের দিকে ফার্মগেট মেট্রোরেল স্টেশনের নিচে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর থেকে মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ রয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওই ব্যক্তি ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। মেট্রোরেল চলাচলের মুহূর্তে ওপর থেকে একটি বিয়ারিং প্যাড তাঁর মাথায় পড়ে। ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। তবে নিহতের নাম-পরিচয় এখনো জানা যায়নি।

দুর্ঘটনার কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশ উদ্ধার করে।

তেজগাঁও থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শহিদুজ্জামান বলেন, ‘আমরা ডিউটিরত অবস্থায় কাছেই ছিলাম। খবর পেয়ে দ্রুত গিয়ে দেখি একজন ব্যক্তি রাস্তায় মৃত অবস্থায় পড়ে আছেন।’

এদিকে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) সূত্র জানিয়েছে, এ ঘটনার কারণে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত পুরো পথেই মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। কখন চালু হবে তা নিশ্চিত করা হয়নি।

এর আগে গত ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা মেট্রোরেলে একটি বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে। এর ফলে আগারগাঁও থেকে মতিঝিলে পর্যন্ত ১১ ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে। এ ঘটনায় বিশেষজ্ঞ ও সংশ্লিষ্টদের মধ্যে গুরুতর নিরাপত্তা উদ্বেগ তৈরি হয়। এর মধ্যে দ্বিতীয়বার বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ল।

মেট্রোরেলের লাইনের নিচে উড়াল পথের পিলারের সঙ্গে রাবারের বিয়ারিং প্যাড থাকে। এগুলোর প্রতিটির ওজন ১৪০ বা ১৫০ কেজি। এসব বিয়ারিং প্যাড ছাড়া ট্রেন চালালে উড়াল পথ দেবে যাওয়া কিংবা স্থানচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ জন্যেই মেট্রোরেলের চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে ডিএমটিসিএল সূত্র।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দুর্গাপুর সীমান্ত থেকে মালিকবিহীন ২৬৯ বোতল ফেনসিডিল জব্দ

দুর্গাপুর (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি
জব্দ করা ফেনসিডিল। ছবি: সংগৃহীত
জব্দ করা ফেনসিডিল। ছবি: সংগৃহীত

নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলা সীমান্ত থেকে ২৬৯ বোতল ভারতীয় ফেনসিডিল জব্দ করেছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা। জব্দ করা এসব মাদক নেত্রকোনা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে জমা দেওয়া হবে। রোববার (২৬ অক্টোবর) সকালে এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানান নেত্রকোনা ব্যাটালিয়নের (৩১ বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ এস এম কারুজ্জামান।

এর আগে গতকাল শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে দুর্গাপুর উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের ফান্দা নামক এলাকা থেকে এসব মাদক জব্দ করেন বিজিবির সদস্যরা।

বিজ্ঞপ্তিতে ৩১ বিজিবির অধিনায়ক জানান, নিজস্ব গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে নেত্রকোনা ব্যাটালিয়নের অধীনস্থ বারমারী বিওপির (বর্ডার অবজারভেশন পোস্ট) ছয় সদস্যের একটি বিশেষ টহল দল মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে ওই বিওপির দায়িত্বপূর্ণ সীমান্ত পিলার ১১৬২ নম্বর হতে আনুমানিক ৪০০ গজ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ফান্দা নামক এলাকা থেকে টহল দলটি মালিকবিহীন ২৬৯ বোতল ভারতীয় ফেনসিডিল জব্দ করতে সক্ষম হয় বলে জানান বিজিবির এই কর্মকর্তা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গাইবান্ধায় স্বামীর ছুরিকাঘাতে আহত স্ত্রীর মৃত্যু

গাইবান্ধা প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে স্বামীর ছুরিকাঘাতে আহত আজেদা বেগম (৩৫) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। শনিবার দিবাগত রাতে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

এর আগে গত মঙ্গলবার গোবিন্দগঞ্জ পৌর শহরের এমপি পাড়ায় ছুরিকাঘাতের এই ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত স্বামী শামীম মিয়া (৪২) গোবিন্দগঞ্জের কামারদহ ইউনিয়নের বেতগারড়া গ্রামের মাফু মিয়ার ছেলে। তিনি স্থানীয় একটি হোটেলে কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন। তিনি ঘটনার পর থেকে পলাতক।

নিহত আজেদা বেগম উপজেলার চাঁদপাড়া গ্রামের রাজা মিয়ার মেয়ে। আট বছর বয়সী ছেলে আতিক ও ১৬ বছর বয়সী মেয়ে সোনিয়াকে নিয়ে তাঁরা কোনোমতে জীবন যাপন করতেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, অভাবের সংসারে আজেদা অন্যের বাসায় কাজ করতেন। শামীম হোটেলে কাজ করলেও নেশাজাতীয় দ্রব্যে আসক্তি ও মোবাইল ফোনে জুয়া খেলায় জড়িয়ে পড়েন। এসব নিয়ে দাম্পত্য জীবনে প্রায়ই কলহ লেগে থাকত।

গোবিন্দগঞ্জ থানার ওসি বুলবুল ইসলাম বলেন, ‘স্বামীর ছুরিকাঘাতে আহত নারীর মৃত্যুর খবর স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে শুনেছি। তবে এখন পর্যন্ত কেউ থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গাংনীতে কারেন্ট পোকার আক্রমণে কৃষকের সর্বনাশ: ভেজাল কীটনাশকের অভিযোগ

রাকিবুল ইসলাম, গাংনী (মেহেরপুর) 
উপজেলার তেরাইল-দেবীপুর মাঠের কৃষক মিরাজুল ইসলামের ক্ষতিগ্রস্ত জমি থেকে গতকাল সকালে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
উপজেলার তেরাইল-দেবীপুর মাঠের কৃষক মিরাজুল ইসলামের ক্ষতিগ্রস্ত জমি থেকে গতকাল সকালে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

কার্তিকের এই সময়ে যখন কৃষকের মাঠভরা ধান দেখে আনন্দের নিশ্বাস ফেলার কথা, তখন মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার দেবীপুর-তেরাইল মাঠের রোপা আমনচাষি মিরাজুল ইসলামকে হতাশা নিয়েই ছুটতে হচ্ছে মাঠে। কারেন্ট পোকার (ঘাসফড়িং) আক্রমণে তাঁর দেড় বিঘা জমির ধান একেবারে শেষ হয়ে গেছে।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক মিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘এত কষ্টের সব ধান আমার নষ্ট হয়ে গেল। মাঠে আমার ধান ছিল সেরা, এখন একেবারে জিরো। কীটনাশক প্রয়োগ করে অনেকের সেরে গেছে, কিন্তু আমি সব ধরনের বিষ ব্যবহার করেও কোনো সুফল পাইনি। আমার এতটাই ক্ষতি হয়েছে, যা কল্পনা করা যায় না।’ তিনি আরও বলেন, ‘কৃষি অফিস থেকে তেমন সঠিক কোনো দিকনির্দেশনাও পাইনি। কৃষি অফিস থেকে যদি সঠিক নির্দেশনা পাওয়া যেত কোন কীটনাশক ব্যবহার করলে ভালো হবে, তাহলে আমাদের অনেক উপকার হতো।’

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মজুরি খরচ, সার ও কীটনাশকের বাড়তি দামে কৃষকের নাভিশ্বাস উঠেছে। এর মধ্যেই আমনে কারেন্ট পোকার আক্রমণ মারাত্মক রূপ নিয়েছে। পোকার আক্রমণে কৃষক মিরাজুল ইসলামের ধানের গাছ শুকিয়ে সাদা হয়ে শুধু খড় দেখা যাচ্ছে। যেটুকু আছে, তা-ও দিন দিন নষ্ট হচ্ছে।

স্থানীয় চাষি আব্দুল মজিদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আগে থাইডন, বাসোডিনের মতো বিষ ছিল, যা প্রয়োগ করলে সঙ্গে সঙ্গে কাজ হতো। কিন্তু এখনকার বিষে কোনো কাজ হয় না, এগুলো ভেজালে পরিপূর্ণ। বিষ কোম্পানিগুলো আসলে কী বিষ দেয়? এভাবে চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হলে কোথায় যাবে?’

আরেক ধানচাষি মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘মিরাজ নামের এই চাষির ধান কারেন্ট পোকার আক্রমণে এতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যে বিচালি (খড়) করাও সম্ভব না। ধানের জমি খড়ের মতো হয়ে গেছে। এই মাঠে তার ধান অত্যন্ত সুন্দর হয়েছিল এবং সে তার ধানের প্রতি খুবই যত্নবান ছিল। সে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’

গাংনী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. আরাফাত মিয়া বলেন, ‘রোপা আমন মৌসুমে স্বাভাবিকভাবে এই ধরনের রোগ দেখা দেয়। আমরা অনেক ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণে এনেছি পুরোপুরি। বাজারে বিভিন্ন ভেজাল কীটনাশক রয়েছে। এর মধ্য থেকে আসলটা বাছাই করে যদি সঠিকভাবে ব্যবহার করা যায়, তাহলে এই সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এ ছাড়া ইউনিয়ন পর্যায়ে যেসব উপসহকারী রয়েছে, তাদের বলা আছে কৃষকদের সঙ্গে সার্বিক যোগাযোগ রেখে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত