Ajker Patrika

যমুনার বালু অবাধে লুট ঝুঁকিতে টাওয়ার, স্থাপনা

  • দিনরাত বিভিন্ন স্থানে ৮টি ড্রেজার দিয়ে চলছে অবাধে বালু লুট।
  • স্থানীয় বাসিন্দাদের বিক্ষোভ, স্মারকলিপির পরও জড়িতরা অধরা।
ঘিওর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি 
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০: ৪৩
Thumbnail image
মানিকগঞ্জের শিবালয়ের যমুনায় চলছে অবৈধভাবে বালু লুট। ছবি: আজকের পত্রিকা

মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলায় যমুনা নদীতে দিনরাত অবৈধভাবে বালু তুলে বিক্রি করছে একটি চক্র। রাজনীতির পালাবদলের পর আইনের তোয়াক্কা না করে চক্রটি প্রকাশ্যে নদীর বিভিন্ন স্থানে আটটি খননযন্ত্র (ড্রেজার) দিয়ে বালু তুলছে। এক মাসের বেশি সময় ধরে এই বালু লুট চললেও তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন।

ফলে চরের নদীতীরবর্তী বাড়িঘর ও ফসলি জমি বিলীন হচ্ছে। ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে জাতীয় পাওয়ার গ্রিডের বৈদ্যুতিক সঞ্চালন টাওয়ার, আলোকদিয়া চরের মুজিব কেল্লা, কয়েকটি স্কুল, মসজিদ, মাদ্রাসা ও হাটবাজারের বিভিন্ন স্থাপনা।

অভিযোগ রয়েছে, বেশির ভাগ এলাকার স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের যোগসাজশে এসব বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। যে কারণে স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষতিগ্রস্ত ও অতিষ্ঠ হলেও মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না। বালু তোলা বন্ধে নৌপরিবহন উপদেষ্টা ও জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত আবেদন জানিয়েছেন এলাকাবাসী। আরিচা ঘাটে বিক্ষোভও করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কিন্তু কোনো কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না বালু উত্তোলন।

গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মানিকগঞ্জের শিবালয়ের আলোকদিয়া এলাকার যমুনা নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশ পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির (পিজিসিবি) বিদ্যুতের টাওয়ারের পাশে আটটি ড্রেজার দিয়ে অবাধে বালু উত্তোলন করে বাল্কহেডে ভরা হচ্ছে। এসব বালু বাল্কহেডে করে অন্য জেলায় নিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে।

ভাঙনের শিকার আবুল হোসেন ও ছলিম উদ্দিন বলেন, ‘এখন শীতকাল। সাধারণত নদীভাঙন কম থাকে। কিন্তু নদীতে ড্রেজারে বালু তোলার কারণে নদীর পাড় ভাঙছে। কয়েক দিনের ব্যবধানে ভাঙন তীব্র হয়েছে। ফলে কয়েকটি পরিবার মিলে আমরা অন্যত্র সরে যাচ্ছি।’

ভুক্তভোগী বাদল প্রামাণিক, মো. মুক্তার হোসেন, মো. সিরাজুল ইসলাম, রাজু আহমেদসহ স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বাংলাদেশ পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির বিদ্যুতের পিলারের পাশ থেকে আটটি কাটার মেশিন দিয়ে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এলাকার কেউ বাধা দিতে গেলে মারধরসহ বিভিন্ন মামলা দিয়ে হয়রানির হুমকি দেয় তারা। ভয়ে এখন কেউ কথা বলতে সাহস পাচ্ছে না।

স্থানীয় ব্যক্তিরা আরও জানান, মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় উপজেলার তেওতা ইউনিয়নের আলোকদিয়ার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া যমুনা নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে একটি চক্র। এতে আলোকদিয়া গ্রামের অসংখ্য বসতবাড়ি, আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এ ছাড়া নদীর ওপর দিয়ে যাওয়া জাতীয় গ্রিডের ৩৩ কিলোভোল্টের বৈদ্যুতিক সঞ্চালন লাইনটিও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। যেকোনো সময় টাওয়ারের তলদেশ থেকে মাটি সরে গিয়ে মারাত্মক দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ওই বালুখেকোদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করলেও বালু উত্তোলন বন্ধ হচ্ছে না। ফলে এলাকাবাসী আতঙ্কে দিন পার করছে।

শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. বেলাল হোসেন বলেন, ‘১৭ ডিসেম্বরও অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এরপর থেকে বন্ধ ছিল। কোনোভাবেই নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করতে দেওয়া হবে না। প্রয়োজনে আবারও অভিযান চালানো হবে। তবে আমরা যেতে যেতে তাঁরা খবর পেয়ে সেখান থেকে সটকে পড়েন। বালু তোলার মূল হোতাদের ধরার চেষ্টা চলছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত