Ajker Patrika

কে কার নাম দিয়েছে জানতে তথ্য অধিকার আইনে বদিউল আলমের আবেদন

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৭: ২৭
Thumbnail image

নির্বাচন কমিশন গঠনে গঠিত সার্চ কমিটির কাছে কে কার নাম প্রস্তাব করেছে তা জানতে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। তিনি ব্যক্তিগতভাবে এই আবেদন করেন।  গত ১৬ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উপসচিব মুহাম্মদ আসাদুল হক ও তথ্য অধিকার উপশাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবর এ আবেদন করা হয়। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি অনুসন্ধান কমিটির কাছে জমা পড়া ৩২২ জনের একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়। আবেদনপত্রে জরুরি ভিত্তিতে তিন দিনের মধ্যে তথ্য সরবরাহের অনুরোধ করা হয়। 

আবেদনে বলা হয়, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন-২০২২ অনুযায়ী নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়োগে যোগ্য ব্যক্তি সুপারিশের জন্য গঠিত অনুসন্ধান কমিটির কাছে ব্যক্তি, রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবী সংগঠনের পক্ষ থেকে ৩২২ জনের নাম জমা পড়েছে। কমিটির পক্ষে সাচিবিক দায়িত্ব পালনকারী মন্ত্রী পরিষদ গত ১৪ ফেব্রুয়ারি এসব নাম প্রকাশ করেছে। কিন্তু মন্ত্রী পরিষদ কোনো ব্যক্তির নাম কে প্রস্তাব করেছে তা প্রকাশ করেনি, যার ফলে প্রকাশিত তথ্য অসম্পূর্ণ।’ 

আইনের ৪ (১) ধারায় বলা হয়েছে যে, ‘অনুসন্ধান কমিটি স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার নীতি অনুসরণ করিয়া দায়িত্ব পালন করিবে। অসম্পূর্ণ তথ্য প্রকাশ করলে বা তথ্য গোপন করলে স্বচ্ছতা নিশ্চিত হয় না। তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ এর ধারা ৪ অনুযায়ী কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে তথ্য প্রাপ্তি প্রত্যেক নাগরিকের আইনস্বীকৃত অধিকার।’ অতএব বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে আমি তথ্য অধিকার আইন ২০০৯-এর ৮ (১) ধারার অধীনে আপনার দপ্তরে জমাকৃত ৩২২ জনের পরিপূর্ণ তথ্য পেতে চাই। আরও সুস্পষ্টভাবে, অনুসন্ধান কমিটি/মন্ত্রী পরিষদের কাছে প্রস্তাবিত নামের পাশাপাশি প্রস্তাবকারীর নাম অর্থাৎ কে কার নাম প্রস্তাব করেছে তাঁর পরিপূর্ণ তালিকা পাওয়ার জন্য আমি আবেদন করছি। 

আমরা শুনেছি যে কিছু রাজনৈতিক দল তাঁদের প্রস্তাবিত নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করেছে, যদিও অন্তত দুটি দল–বিকল্প ধারা ও-গণফ্রন্ট–তাঁদের সুপারিশ করা নাম এরই মধ্যে প্রকাশ করেছে। রাজনৈতিক দল ও তাঁদের প্রস্তাবিত নাম কোনো গোপন বিষয় নয় এবং এ প্রসঙ্গে আমাদের উচ্চ আদালতের একটি রায় প্রাসঙ্গিক। ২০১৩ সালে রাজনৈতিক দলের আয়-ব্যয়ের অডিট করা হিসাব তথ্য অধিকার আইনের অধীনে দরখাস্ত করেও আমরা পাইনি। এসব তথ্যের মালিক রাজনৈতিক দল এবং তাঁদের সম্মতি ছাড়া এগুলো প্রকাশ করা যাবে না–এই যুক্তিতে নির্বাচন কমিশন আমাদের দরখাস্ত খারিজ করে দেয়। তথ্য কমিশনে গিয়েও আমরা এ ব্যাপারে প্রতিকার পাইনি। এরপর আমরা আদালতের আশ্রয় নিলে, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চ বদিউল আলম মজুমদার ও অন্যান্য বনাম বাংলাদেশ ডিএলআর ৬৯ (২০১৭) মামলায় রায় দেন যে, তথ্য অধিকার আইনে সংজ্ঞায়িত ‘কর্তৃপক্ষের’ কাছে থাকা সকল তথ্য ‘পাবলিক ইনফরমেশন’ এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তা প্রকাশ করতে বাধ্য। এ ছাড়া তথ্যের সঙ্গে সত্যের যোগসূত্রতা রয়েছে, তাই তথ্য জানার উদ্দেশ্য হলো সত্য উদ্ঘাটন করা। তাই পরিপূর্ণ স্বচ্ছতার চর্চার মাধ্যমে সত্য উদ্ঘাটনের স্বার্থে আমি অনুসন্ধান কমিটির কাছে প্রস্তাব করা নামের পাশাপাশি প্রস্তাবকারীর নাম প্রকাশের আবেদন করছি। 

যেহেতু অনুসন্ধান কমিটি বর্তমানে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রেরণের জন্য নাম চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়ায় নিয়োজিত এবং নাগরিক হিসেবে কমিটির কাজকে সহায়তা করার জন্য এ তথ্য গুরুত্বপূর্ণ, তাই জরুরি ভিত্তিতে তিন (০৩) দিনের মধ্যে এ তথ্য আমাকে সরবরাহ করার আমি অনুরোধ করছি।

আবেদনে সম্পর্কে বদিউল আলম মজুমদার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘তারা আবেদন পেয়েছেন বলে জেনেছি। তবে কোনো উত্তর এখনও আসেনি। আমাদের দাবি, যেই নিয়োগ পান না কেন, প্রক্রিয়াটা যেন স্বচ্ছ হয়।’
 
সুজন সম্পাদক তথ্য অধিকার আইনে কোনো তথ্য চেয়ে আবেদন করেছেন কি-না, এ প্রশ্নে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা উপসচিব মুহাম্মদ আসাদুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ী যিনি তথ্য চাইবেন তার পরিচয়ও আমাদের গোপন রাখতে হবে। এ জন্য এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না।’ 

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘সার্চ কমিটিতে জমা পড়া নামগুলো কে বা কারা প্রস্তাব করেছিলেন বদিউল আলম মজুমদার তথ্য অধিকার আইনে সেই তথ্য চেয়েছেন। তাকে এই তথ্য দেওয়া হবে কি-না, আইন অনুযায়ী সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এখনও এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত