Ajker Patrika

সম্পদের হিসাব দেননি একজনও

শহীদুল ইসলাম, ঢাকা
আপডেট : ০৪ অক্টোবর ২০২১, ০৮: ২৩
সম্পদের হিসাব দেননি একজনও

প্রধানমন্ত্রী তাগাদা দেওয়ার পর সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব দিতে বলেছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সেটাও গত ২৪ জুনের কথা। এরপর তিন মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এখনো কোনো হিসাব জমা পড়েনি। বরং সম্পদের হিসাব বিবরণী কোথায় জমা দিতে হবে, এ নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে মন্ত্রী-সচিব কেউই পরিষ্কার নন।

কোনো কোনো মন্ত্রণালয় মনে করছে, বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তাদের হিসাব বিবরণী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে হবে, অন্যদেরটা জমা থাকবে নিজ মন্ত্রণালয় ও বিভাগে। আবার কোনো কোনো মন্ত্রণালয় মনে করছে, ক্যাডার, নন-ক্যাডার সব কর্মকর্তার হিসাব বিবরণীই বর্তমানে কর্মরত মন্ত্রণালয় বা বিভাগে জমা রাখতে হবে। হিসাব বিবরণী কোথায় জমা দিতে হবে, এ নিয়ে সুস্পষ্ট কোনো নির্দেশনা নেই।

এই বিভ্রান্তি নিয়ে কোনো সুস্পষ্ট উত্তর দিতে পারেননি জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। তবে তিনি মনে করেন, মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো নিজেদের অধীন কর্মকর্তা-কর্মচারীর সম্পদের হিসাব বিবরণী রাখবে। প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদোন্নতিসহ নানা বিষয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে হয়। তাই শুধু তাদের সম্পদের হিসাবের কপি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে পারে।

১৯৭৯ সালে জারি হওয়া সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালায় পাঁচ বছর পরপর সরকারি চাকরিজীবীদের সম্পদ বিবরণী দাখিল এবং স্থাবর সম্পত্তি অর্জন বা বিক্রির অনুমতি নেওয়ার নিয়ম করা হয়।

যদিও কেউই তা মানেননি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই বিধিমালার ১১, ১২ ও ১৩ বিধি কর্মকর্তাদের অনুসরণের বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে মন্ত্রণালয়গুলোকে নির্দেশনা দেন। এরপর গত ২৪ জুন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন তুলে ধরে বিধিমালা বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয়কে চিঠি পাঠিয়ে এর অগ্রগতিও জানাতে বলে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগসহ আরও কয়েকটি মন্ত্রণালয় তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিশ দিয়েছে। এসব দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখনো তাঁরা কারও হিসাব বিবরণী পাননি। অনেক মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এখনো কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব নেওয়ার উদ্যোগ নেয়নি।

নোটিশ জারির পর মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সম্পদের হিসাব বিবরণী জমা দিয়েছেন কি না, তা জানাতে পারেননি ভূমি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) মো. আব্বাছ উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আগামীকাল (সোমবার) খোঁজ নিয়ে জানাতে হবে।’ সম্পদ বিবরণীগুলো কোথায় জমা দিতে হবে, সেই প্রশ্ন করলে এই মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন-১ শাখার উপসচিবের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।

প্রশাসন-১ শাখার উপসচিব সঞ্জীব কুমার দেবনাথ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ক্যাডার কর্মকর্তাদের হিসাব বিবরণী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়ার কথা, অন্যদেরগুলো আমাদের কাছে থাকবে।’

স্থানীয় সরকার বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিব জানান, ক্যাডার কর্মকর্তাদের হিসাব বিবরণী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে এবং অন্যদেরটা নিজ বিভাগে জমা রাখা হবে। বিভাগের অধীন দপ্তরগুলোর কর্মকর্তারা দপ্তরপ্রধানের মাধ্যমে বিভাগের সচিবের কাছে তাঁদের হিসাব বিবরণী জমা দেবেন। এই নির্দেশনা কে দিয়েছেন—সেই প্রশ্নে অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘এমনই তো হওয়ার কথা, স্পষ্ট কোনো নির্দেশনা নেই।’

কর্মকর্তাদের সম্পদের হিসাব বিবরণী জমা দিতে নোটিশ জারি করেছিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। হিসাব বিবরণী জমা পড়েছে কি না, সেই প্রশ্ন করলে এই বিভাগের অতিরিক্ত সচিব প্রশাসন ও বিধি অনুবিভাগ সোলতান আহ্মদ বলেন, ‘এগুলো তো আমাদের নেওয়ার কথা নয়। এগুলো জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় নেবে।’

মন্ত্রণালয়ের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী সম্পদের হিসাব দিয়ে দেবে জানিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণসচিব মো. মোহসীন বলেন, ‘সম্ভবত ক্যাডার কর্মকর্তাদের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে আর অন্যদেরটা আমাদের এখানে জমা থাকবে।’

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (শৃঙ্খলা ও তদন্ত অনুবিভাগ) এ এফ এম হায়াতুল্লাহ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো নিজেদের মতো করে তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদ বিবরণীর হিসাব নিয়ে সেগুলো সংরক্ষণ করবে।’ হিসাব বিবরণীগুলো কেউ যাচাই করবে কি না, সেই প্রশ্নে তিনি বলেন, বিধিতে যা আছে সে অনুযায়ী হবে।

কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব বিবরণী কোথায় জমা দিতে হবে, সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। গতকাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার জানামতে নিজ নিজ মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এই হিসাব নিয়ে তাদের কাছে রাখবে। কোনো বিষয়ে প্রশ্ন উঠলে তারা সেগুলো যাচাই করবে। ডিপার্টমেন্ট যদি মনে করে কারও কোনো বিষয়ে কথা উঠছে, তাহলে তারা সেটি দেখবে। প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদোন্নতিসহ নানা বিষয়ের সঙ্গে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় জড়িত থাকায় তাদের সম্পদ বিবরণীর একটি কপি চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে রাখা যেতে পারে। অন্য কর্মকর্তাদের অধীন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ সম্পদ বিবরণীর হিসাব নিয়ে সংরক্ষণ করবে।’

এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে জনপ্রশাসন সচিবের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন প্রতিমন্ত্রী। তবে সচিব একটি সভায় থাকায় এ বিষয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘নভেম্বর মাসের মধ্যে সব সরকারি কর্মকর্তার আয়কর দিতে হয়। সেই আয়কর বিবরণী তৈরির সময় অনেকেই সম্পদের হিসাব দাখিল করবেন। হিসাব যেখানেই জমা দেওয়া হোক না কেন, সেগুলো নিয়ে এরপর কী হবে, সে বিষয়ে কেউ কিছু বলতে পারছেন না। এ বিষয়ে বিধিমালায়ও কিছু বলা নেই। সরকার চাইছে সম্পদের হিসাব দেওয়ার সিস্টেমটা চালু হোক, সবাই নিয়ম মানুক। প্রয়োজনে বিধিমালা সংশোধন করা হবে।’

বিধিমালার ১১ বিধিতে সম্পত্তি কেনাবেচা করতে চাইলে সরকারি চাকরিজীবীদের কি করতে হবে, সে বিষয়ে বলা হয়েছে। বিধি ১২ অনুযায়ী, নির্মাণ ব্যয়ের প্রয়োজনীয় অর্থের উৎস উল্লেখ করে সরকারের অনুমোদন না নিয়ে ব্যবসায়িক বা আবাসিক উদ্দেশ্যে কোনো ইমারত নির্মাণ করা যাবে না। আর ১৩ বিধিতে বলা হয়েছে, চাকরিতে প্রবেশের সময় যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পরিবারের সদস্যদের মালিকানাধীন বা দখলে থাকা শেয়ার, সার্টিফিকেট, সিকিউরিটি, বিমা পলিসি এবং মোট পঞ্চাশ হাজার টাকা বা ততোধিক মূল্যের অলংকারাদিসহ সব স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি সম্পর্কে সরকারের কাছে ঘোষণা দিতে হবে।

ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ২০১৯ সালে মন্ত্রণালয়ের কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব নেওয়ার ঘোষণা দেন। ওই বছরের ১৭ জানুয়ারি ভূমি মন্ত্রণালয় ও এর অধীন সব দপ্তরের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের সম্পদ বিবরণী জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির ১৭ হাজার ৫৭৬ জন কর্মচারীর মধ্যে ১৭ হাজার ২০৮ জন সম্পদের হিসাব দেন। সাময়িক বরখাস্ত ও লম্বা ছুটিতে থাকায় ৩৬৮ জন হিসাব দিতে পারেননি। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তাদের নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় হওয়ায় তখন তাঁদের সম্পদের হিসাব নিতে পারেনি ভূমি মন্ত্রণালয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

চাটমোহরে ট্রাকচাপায় অটোভ্যানের চালক নিহত

চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি
দুর্ঘটনাকবলিত ভ্যান। ছবি: আজকের পত্রিকা
দুর্ঘটনাকবলিত ভ্যান। ছবি: আজকের পত্রিকা

পাবনার চাটমোহরে ট্রাকের চাপায় পিষ্ট হয়ে মোহাম্মদ নওশের প্রামাণিক (৬৫) নামের এক অটোভ্যানচালক নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) বেলা আড়াইটার দিকে উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নের ভবানীপুর কানখোলা মোড়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নওশের উপজেলার রেলবাজার বালুদিয়ার গ্রামের মৃত নজু প্রামাণিক ছেলে।

এলাকাবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, আজ মঙ্গলবার দুপুরে নিহত নওশের অটোভ্যান নিয়ে আটঘরিয়া থেকে চাটমোহরে ফিরছিলেন। পথিমধ্যে কানখোলা মোড়ে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাক অটোভ্যানটিকে ধাক্কা দেয়। এতে নওশের ট্রাকের পেছনের চাকার নিচে পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান।

চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনজুরুল আলম দুর্ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করে আজকের পত্রিকাকে জানান, ঘটনার পরপরই ট্রাকের চালক পালিয়েছেন। ট্রাকটি পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পবিপ্রবিতে নিয়োগ ও পদোন্নতিতে অনিয়মের তদন্তে দুদক

পটুয়াখালী প্রতিনিধিপবিপ্রবি সংবাদদাতা
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি: সংগৃহীত
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি: সংগৃহীত

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পবিপ্রবি) নিয়োগ ও পদোন্নতিতে অনিয়মের অভিযোগের তদন্তে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আজ মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দুদকের একটি দল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তর ও প্রশাসনিক অফিসে অভিযান চালায়।

দুদকের পটুয়াখালী জেলা সমন্বিত দপ্তরের সহকারী পরিচালক তাপস বিশ্বাস তদন্তকারী দলের নেতৃত্ব দেন।

সূত্রের বরাতে জানা গেছে, মাসুম বিল্লাহ ও মো. কবির শিকদার নামে দুই কর্মকর্তা যথাক্রমে ২০০৫ ও ২০০৬ সালে কম্পিউটার অপারেটর পদে যোগ দেন এবং ২০০৮ ও ২০০৯ সালে প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে পদোন্নতি পান। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন বিধিমালা অনুযায়ী, এ পদে উন্নতির জন্য কমপক্ষে আট বছর চাকরিকাল পূর্ণ করা বাধ্যতামূলক ছিল, যা তাঁদের ক্ষেত্রে মানা হয়নি। এ ছাড়া পদোন্নতির ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অনুমোদনও নেওয়া হয়নি। তাঁরা দুজনেই এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রির দাবি করেছেন, তবে সনদের সত্যতা যাচাই চলছে। অন্যদিকে, সাকিবুল হাসান ফারুক খান ২০১৬ সালে নেটওয়ার্ক টেকনিশিয়ান পদে যোগ দিয়ে ২০২০ সালে সহকারী নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে পদোন্নতি পান। তিনি রয়েল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জনের দাবি করেছেন। তাঁর সনদের বৈধতাও অনুসন্ধানে রয়েছে। অভিযানের সময় দুদক কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্ট নথিপত্র জব্দ করেন এবং কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

দুদক কর্মকর্তা তাপস বিশ্বাস জানান, অভিযোগ অনুযায়ী কয়েকজন কর্মকর্তা নিয়মবিধি লঙ্ঘন করে পদোন্নতি পেয়েছেন এবং কিছু সনদ যাচাইয়ের প্রয়োজন রয়েছে। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

দুদকের অভিযানের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কেউ মন্তব্য করতে রাজি হননি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন হত্যা মামলা: আদালতে তিন সাংবাদিককে হেনস্তার অভিযোগ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
জামাতপন্থী আইনজীবী রেজাউল হক রিয়াজ ও হাতিরঝিল থানা জামায়াতের রোকন ও আইনজীবী আক্তারুজ্জামান ডালিম। ছবি: সংগৃহীত
জামাতপন্থী আইনজীবী রেজাউল হক রিয়াজ ও হাতিরঝিল থানা জামায়াতের রোকন ও আইনজীবী আক্তারুজ্জামান ডালিম। ছবি: সংগৃহীত

বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশের হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সংবাদ সংগ্রহের সময় তিন সাংবাদিককে হেনস্তার অভিযোগ উঠেছে। আজ মঙ্গলবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের কয়েকজন আইনজীবী ও সংশ্লিষ্ট আদালতের বিচারক তাঁদের হেনস্তা করেন।

হেনস্তার শিকার সাংবাদিকেরা হলেন কালের কণ্ঠের নিজস্ব প্রতিবেদক মাসুদ রানা, একুশে টেলিভিশনের প্রতিবেদক আরিফুল ইসলাম এবং দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকার প্রতিবেদক আরিফুল ইসলাম।

হেনস্তার শিকার সাংবাদিকদের অভিযোগ, সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে কয়েকজন আইনজীবী তাঁদের ওপর চড়াও হন। এরপর তাঁদের ডেকে নিয়ে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়। বিচারক তাঁদের কারাগারে পাঠানোর ‘হুমকি’ও দেন বলে জানান তাঁরা।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশের হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের আজ দিন ধার্য ছিল। এ মামলায় আসামি ফারদিনের বান্ধবী আমাতুল্লাহ বুশরা আদালতে হাজির হন। ফারদিনের বাবা নুর উদ্দিন রানাও আদালতে হাজির ছিলেন। পরে শুনানি শেষে আদালত থেকে আসামি বুশরা বের হন। তখন আসামির ভিডিও ফুটেজ নিতে যান তিন সাংবাদিক। এ সময় জামায়াতপন্থী আইনজীবী রেজাউল হক রিয়াজ, হাতিরঝিল থানা জামায়াতের রোকন ও আইনজীবী আক্তারুজ্জামান ডালিমসহ অনেকেই ভিডিও করতে বাধা দেন।

সাংবাদিকেরা পেশাগত কারণে ভিডিও করার কথা জানালে তাঁরা আরও চড়াও হন। এ সময় তাঁরা সাংবাদিকদের বিচারকের কাছে ধরে নিয়ে যেতে জোরাজুরি করেন। তবে সাংবাদিকেরা জানান, আসামির ছবি বা ভিডিও নিতে আদালতের অনুমতির প্রয়োজন নেই। এ কথা বলায় উপস্থিত আইনজীবীরা ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হাসিব উল্লাহ পিয়াসের আদালতের বাইরে চারদিক থেকে ঘিরে ধরেন। একপর্যায়ে আইনজীবী আক্তারুজ্জামান ডালিম এক সাংবাদিকের মোবাইল ফোন কেড়ে নেন। এ সময় এই মামলার বাদী নুর উদ্দিন রানাকে দেখে হুমকি দিতে থাকেন তিনি। বাদীর উদ্দেশে বলেন, আপনি সাংবাদিকদের ডেকে এনেছেন।

এরপর ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হাসিব উল্লাহ পিয়াস এই তিন সাংবাদিকসহ আইনজীবী আক্তারুজ্জামান ডালিমকে এজলাসে ডেকে নেন। তখন বিচারক তিন সাংবাদিককে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করান। আদালত সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনাদের পরিচয় দিন’।

সাংবাদিকদের পরিচয় জানার পর বিচারক বলেন, ‘আপনারা কোর্টের সামনে হাঙ্গামা করেছেন। এখন বেলা ১১টা ৩৮ বাজে, আপনাদের কারাগারে পাঠানো হবে। আর কোনো কথা হবে না। আপনাদের সবার মোবাইল নিয়ে নেওয়া হোক।’

এর মিনিট দু-এক পর বিচারক বলেন, ‘আপনারা নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলে ছেড়ে দেব। নাহলে কারাগারে যেতে হবে। কোনো ছাড় নেই।’ উপায়ন্তর না দেখে সাংবাদিকেরা নিঃস্বার্থ ক্ষমা চান। পরে এই তিন সাংবাদিককে ছেড়ে দেওয়ার অনুমতি দেন আদালত।

সাংবাদিক মাসুদ রানা বলেন, ‘সংবাদ সংগ্রহে গিয়েছিলাম। কিন্তু কয়েকজন আইনজীবী ভিডিও তুলতে বাধা দিয়ে মব সৃষ্টি করে। পরে বিচারক অতি উৎসাহী হয়ে আমাদের তিনজনকে কাঠগড়ায় ডাকেন। আমাদের পরিচয় জেনে বিচারক বলেন—আপনারা বসেন, সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হবে।’

দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকার রিপোর্টার আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা আসামির ভিডিও ধারণ করতে গেলে তাঁদের আইনজীবীরা চড়াও হন। একজনের মোবাইল কেড়ে নেন। ভিডিও ধারণ করায় বিচারকের কাছে জোর করে তাঁরা আমাদের নিতে চেয়েছেন। আমরা যেতে না চাওয়ায় তাঁরা খুব খারাপ আচরণ করতে থাকেন। এ সময় আরেক আদালতের বিচারক আমাদের এজলাসে ডাকেন। এরপর কাঠগড়ায় যেতে বলেন। বিচারক কোনো আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কারাগারে পাঠানোর হুমকি দেন। কোনো অপরাধ না করেই নিঃশর্তে ক্ষমা চাওয়া লেগেছে। বিষয়টি খুব দুঃখজনক।’

প্রতিবাদ ও নিন্দা

আইনজীবী ও বিচারকের দ্বারা সাংবাদিকদের হেনস্তার ঘটনায় প্রতিবাদ ও তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ঢাকার নিম্ন আদালতে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন কোর্ট রিপোর্টার্স ইউনিটি (সিআরইউ)।

এ বিষয়ে সিআরইউ সভাপতি লিটন মাহমুদ বলেন, সাংবাদিকদের ওপর হামলার চেষ্টা অত্যন্ত নিন্দনীয়। এ দিন ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হাসিব উল্লাহ পিয়াসের আদালতের বাইরে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে কোর্টে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় অথবা ব্যাঘাত সৃষ্টি করে—এমন কোনো অপেশাদার আচরণ করেননি তাঁরা। সাংবাদিকেরা শুধু তাঁদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু প্রকৃত ঘটনা বিবেচনায় না নিয়ে সংশ্লিষ্ট কোর্টের বিচারক হাসিব উল্লাহ পিয়াস অতি উৎসাহী হয়ে উল্টো তিন সাংবাদিককে ডেকে নিয়ে জেলে পাঠানোর হুমকি দেন। একজন বিচারকের কাছে এমন আচরণ কাম্য নয়, যা অত্যন্ত নিন্দনীয়। সভাপতি বলেন, ‘আমি ওই বিচারকের অপসারণসহ বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই। এ বিষয়ে আমরা প্রধান বিচারপতির কাছে লিখিত অভিযোগ জানাব।’

এদিকে ফারদিন হত্যা মামলার অধিকতর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ৩০ নভেম্বর দিন ধার্য করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ৫ নভেম্বর থেকে নিখোঁজ হন ফারদিন। ওই দিনই রাজধানীর রামপুরা থানায় এ বিষয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তাঁর বাবা কাজী নুর উদ্দিন। নিখোঁজের দুদিন পর ৭ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টার দিকে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ফারদিনের মরদেহ উদ্ধার করে নৌ পুলিশ। ৮ নভেম্বর সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে ফারদিনের মরদেহ নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার দেউলপাড়া কেন্দ্রীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়।

এ ঘটনায় বুশরাসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ‘হত্যা করে লাশ গুম’ করার অভিযোগে মামলা করা হয়। রামপুরা থানায় নিহত ফারদিনের বাবা নুর উদ্দিন রানা বাদী হয়ে এ মামলা করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভৈরবে এবার নৌপথ অবরোধ

ভৈরব সংবাদদাতা
ভৈরবে নৌপথ অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন আন্দোলনকারীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
ভৈরবে নৌপথ অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন আন্দোলনকারীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

কিশোরগঞ্জের ভৈরবকে জেলা ঘোষণার দাবিতে সড়ক ও রেলপথ অবরোধের পর এবার নৌপথ অবরোধ করেছেন আন্দোলনকারীরা। আজ মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত মেঘনা নদীর ভৈরব বাজার স্পিডবোট ও লঞ্চঘাট এলাকায় এই অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়। এতে আধা ঘণ্টা নৌ চলাচল বন্ধ ছিল।

অবরোধ চলাকালে ভৈরব জেলা আন্দোলনের নেতাদের মধ্যে বক্তব্য দেন গণঅধিকার পরিষদের নেতা ইমতিয়াজ আহমেদ কাজল, ছাত্রনেতা জুনাইদ প্রমুখ।

এদিকে আগামী বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আট ঘণ্টা একযোগে সড়কপথ, রেলপথ ও নৌপথ অবরোধের ডাক দেন আন্দোলনকারীরা। পরে ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়ে বৃহস্পতিবারের অবরোধ কর্মসূচি সাময়িক স্থগিত করেন আন্দোলনকারীরা।

এদিকে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শবনম শারমিন, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এ এইচ এম মো. আজিমুল হক, ভৈরব নৌথানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাশেদুজ্জামানসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন।

ভৈরব নৌথানার ওসি মো. রাশেদুজ্জামান বলেন, ‘ভৈরবকে জেলা ঘোষণার দাবিতে নৌপথ অবরোধ হয়েছে। আমরা আন্দোলনকারীদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের কথা বলেছি।’

এর আগে ভৈরব স্টেশনে উপকূল এক্সপ্রেস ট্রেনে ঢিল নিক্ষেপের ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ১৫০ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন স্টেশনমাস্টার মো. ইউসুফ। এ ঘটনায় আজ সকালে তিন কিশোরকে আটকের পর গ্রেপ্তার দেখায় ভৈরব রেলওয়ে পুলিশ। এ ব্যাপারে আন্দোলনকারীরা বলেন, এ ঘটনার দায়ভার রেলওয়ে স্টেশনমাস্টার ও রেলওয়ে থানার ওপর বর্তাবে। তাঁরা আরও বলেন, ‘আমাদের জেলা ঘোষণার দাবি ন্যায্য। মামলা ও ভয় দেখিয়ে আমাদের দমন করা যাবে না।’ ভৈরব জেলা বাস্তবায়ন আন্দোলনের নেতা মাওলানা সাইফুর রহমান শাহরিয়ার বলেন, সোমবারের শান্তিপূর্ণ রেল অবরোধ চলাকালে ট্রেনচালক হঠাৎ জোরে হুইসেল বাজালে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আত্মরক্ষার্থে কিছু পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে।

ভৈরব রেলওয়ে থানার ওসি আবু সাঈদ বলেন, জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ও রেলওয়ে পুলিশের যৌথ অভিযানে তিনজনকে আটকের পর গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত