Ajker Patrika

খান সারওয়ারকে স্মরণে একাডেমিক অ্যাকটিভিজমের প্রাসঙ্গিকতা  

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০: ১৫
খান সারওয়ারকে স্মরণে একাডেমিক অ্যাকটিভিজমের প্রাসঙ্গিকতা  

অধ্যাপক খান সারওয়ার মুরশিদের ১১তম প্র‍য়াণ দিবস উপলক্ষে ‘গণতান্ত্রিক সমাজ গঠনে একাডেমিক অ্যাকটিভিজমের প্রাসঙ্গিকতার’ আয়োজন করেছে উত্তরসূরি। সভায় বক্তারা গণতন্ত্রচর্চায় একাডেমিক অ্যাকটিভিজমের ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করেন এবং এটি নতুন প্রজন্মের জন্য শিক্ষণীয় বলে জানান।

আজ শুক্রবার রাজধানীর ধানমন্ডির বেঙ্গল শিল্পালয়ে আয়োজিত এই স্মারক বক্তৃতায় সহযোগিতা করে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন। 

স্মারক বক্তৃতার মূল বক্তা ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের দেশের সমাজের যে রূপান্তর হয়েছে, সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকাই প্রধান হয়ে ওঠে। কেননা এটাই আমাদের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়। এখান থেকে জ্ঞানের যে চর্চা শুরু হয়েছে, সেটা চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয় ঘিরে যেসব কাজ হয়েছে, সেগুলো সমাজে প্রভাব ফেলেছে। আমি যদি পেছনের দিকে তাকাই, তাহলে দেখব, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল অবদান কী। সেটা হলো একটা সেক্যুলার মধ্যবিত্ত সমাজের মূল্যবোধের বিকাশকে সাহায্য করা। 

মূল্যবোধের কথা যদি বলি, তাহলে বলতে হয় এর চর্চা করেছিলেন আজকে যাঁকে স্মরণ করা হচ্ছে খান সারওয়ার মুরশিদ সাহেব। তিনি একটি পত্রিকা বের করতেন, যার নামই ছিল ‘নিউ ভ্যালুজ’। অনেক প্রতিকূলতা পেরিয়ে তিনি এই একাডেমিক অ্যাকটিভিজমের কাজ করেছিলেন। এককথায় বলতে গেলে এই বিষয়কে বলা যায় ধর্মনিরপেক্ষতা। এই বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি হয়েছিল মুসলমান সমাজের শিক্ষার জন্য। কিন্তু যেটা ঘটল, সেটা হলো ধর্মনিরপেক্ষতার যে মূল্যবোধ, যে চেতনা সেটা তৈরি হলো।’ 

লেখক ও গবেষক হাসনাত আবদুল হাই বলেন, ‘একাডেমিক অ্যাকটিভিজমের কথা বলতে গেলে দুটো অংশের কথা বলতে হয়—একটি গণতন্ত্র ও অন্যটি একাডেমিক অ্যাকটিভিজম। লক্ষ্য যদি গণতন্ত্র হয়, তার উপায় হলো অ্যাকটিভিজম। গণতন্ত্রচর্চার অনেকগুলো উপায় আছে। একাডেমিক অ্যাকটিভিজম গণতন্ত্রচর্চায় একটা ঐতিহাসিক পন্থা। কিন্তু এটা এখন আর সত্য নয়। আমরা তাই এটা নিয়ে যখন আলোচনা করছি, তখন অতীত নিয়েই আলোচনা করছি। সেটা হলো ৫০ ও ৬০ এর দশক। সে সময় দুটো বিষয় নিয়ে অ্যাকটিভিজম ছিল—কালচারাল ও পলিটিক্যাল। একাডেমিক অ্যাকটিভিজম মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসমাজকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে। এই শিক্ষকসমাজ যখন এই দুটি বিষয় নিয়ে কাজ করেছে, তখন এটা একাডেমিক অ্যাকটিভিজম তৈরি করেছে। আর খান সারওয়ার মুরশিদ প্রথম তাঁর লেখায় বিষয়টি নিয়ে এসেছিলেন।’ 

অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, ‘একটা জাতির জীবনে যা প্রয়োজন, সে বিষয়ে বুদ্ধিজীবীরা আলোচনা করেন। তাঁরা আশা করেন, এর মাধ্যমে রাজনীতিবিদেরা সমাজে পরিবর্তন আনবেন। এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা সৃষ্টির শুরু থেকেই শুরু করেছিলেন।’ 
 
আবুল কাসেম আরও বলেন, ‘সাতচল্লিশ থেকে শুরু করে একাত্তর পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা গণতন্ত্রচর্চায় যে অবদান রেখেছেন, সেটাকেই বলা যেতে পারে একাডেমিক অ্যাকটিভিজম। যদিও স্বাধীনতার পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই অবস্থা আর নেই। তাই এই বিষয়ে বলতে গেলে অতীতকেই স্মরণ করা হবে।’ 

অধ্যাপক ফেরদৌস আজিম বলেন, ‘আমি একটু আশার কথা বলতে চাই, একাডেমিক অ্যাকটিভিজম এখনো আছে। কারণ, দুই দিন আগে দেখলাম, শিক্ষানীতি নিয়ে একটি আলোচনার আয়োজন করা হয়েছে, সেটি করতে দেওয়া হয়নি। তারপরে তাঁরা থেমে যাননি। তাঁরা রাস্তায় দাঁড়িয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য তুলে ধরেছেন। তার মানে আমাদের অতীতে যে একাডেমিক অ্যাকটিভিজম ছিল, তার একটা বুদ্‌বুদ কিন্তু এখনো আছে।’ 

সাবেক সচিব আসফ-উদ-দৌলা বলেন, ‘খান সারওয়ার মুরশিদ অত্যন্ত রুচিমান মানুষ ছিলেন। এ রকম প্রতিভাধর বাগ্মী আর কাউকে মনে পড়ে না। শুধু তাঁর কথার শব্দচয়নের সঙ্গে কেবল একজনকেই মনে পড়ে, তিনি সৈয়দ আলী আহসান। তাঁকে ছাড়া আর কাউকে মনে পড়ে না বক্তৃতায় শব্দচয়নে এত মনোযোগ দিতেন। ক্লাসরুম মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখতেন। আমরা অতীত খুঁজে বেড়াই। কারণ, আমরা বর্তমানে এত নিচে নেমে গেছি যে, তা নিয়ে আলোচনা করা যায় না। মুরশিদ স্যার সুবিচারের প্রত্যাশায় কাজ করেছিলেন। তিনি যে মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন, তার কিছুই অবশিষ্ট নেই। এই কথাটিই বলতে এসেছি।’ 
 
স্বাগত বক্তব্যে অধ্যাপক ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘শিক্ষাঙ্গন থেকে বুদ্ধিবৃত্তিক সামাজিক যে কার্যক্রম, সেটাকেই বলা যেতে পারে একাডেমিক অ্যাকটিভিজম। আজকের আলোচনার প্রেক্ষাপট পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান। সেই সময়েই তাঁদের বুদ্ধিবৃত্তিক কাজের মাধ্যমে স্বাধিকারের বীজ বুনেছিলেন, যাকে আমরা পরে মুক্তির কথা বলছি। আজকের প্রেক্ষাপটে তাদের এই ভূমিকা স্মৃতিচারণা করা নতুন প্রজন্মের জন্য অনেক শিক্ষণীয়।’ 

আয়োজন সঞ্চালনায় ছিলেন শারমীন মুরশিদ। পরে এ বিষয়ে পাঠকেরাও আলোচনায় অংশ নেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পদোন্নতি দিয়ে ৬৫ হাজার সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগের পরিকল্পনা: ডিজি

দিনাজপুরে হিন্দু নেতাকে অপহরণ করে হত্যা: ভারত সরকার ও বিরোধী দল কংগ্রেসের উদ্বেগ

সমালোচনার মুখে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের নিয়োগ বাতিল

আজ থেকে ৫০০ টাকায় মিলবে ১০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট

মির্জা ফখরুলের কাছে অভিযোগ, ১৬ দিনের মাথায় ঠাকুরগাঁও থানার ওসি বদলি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত