Ajker Patrika

বাড়তি লাভের আশায় অপরিপক্ব পেঁয়াজ তুলছেন রাজবাড়ীর চাষিরা

রাজবাড়ী প্রতিনিধি
আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৪: ২৭
বাড়তি লাভের আশায় অপরিপক্ব পেঁয়াজ তুলছেন রাজবাড়ীর চাষিরা

বাড়তি লাভের আশায় পরিপক্ব হওয়ার আগেই পেঁয়াজ তুলে বিক্রি করছেন রাজবাড়ীর কৃষকেরা। এ বছর পেঁয়াজের ফলন কম হওয়ায় খানিকটা আক্ষেপ থাকলেও বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় খুশি তাঁরা। সেই সঙ্গে অন্তত এক মাস পেঁয়াজ আমদানি না করতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন কৃষকেরা। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাঠে মাঠে কৃষকেরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। পুরুষ কৃষকেরা জমি থেকে পেঁয়াজ তুলছেন, অন‍্যদিকে ওই পেঁয়াজ কেটে রোদে শুকাতে দিচ্ছেন নারী কৃষকেরা। এরপর ওই পেঁয়াজ বস্তায় ভয়ে বিক্রির জন্য নেওয়া হচ্ছে বাজারে। কৃষকদের পাশাপাশি গ্রামের অনেক নারীই তাঁদের সংসারের কাজের ফাঁকে ৫০ টাকা মণ দরে পেঁয়াজের মুড়ি কেটে দিচ্ছেন। 

কৃষকেরা বলছেন, অন‍্য বছরের তুলনায় এ বছর মুড়িকাটা পেঁয়াজে আশানুরূপ ফলন হয়নি। বিঘাপ্রতি উৎপাদন ফলন কমেছে ১৫ থেকে ২০ মণ। গত বছর বিঘাপ্রতি উৎপাদন হয়েছিল ৭০ থেকে ৮০ মণ। এবার প্রতি বিঘায় পেঁয়াজ উৎপাদন হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ মণ। 

সদর উপজেলার কৃষক খানগঞ্জ ইউনিয়নের বিল নুরউদ্দিন পাড়ার বাসিন্দা রুবেল ব‍্যাপারি আজকের পত্রিকাকে বলেন, চার বিঘা জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজের আবাদ করতে খরচ হয়েছে ২ লাখ টাকার মতো। অতিবৃষ্টির কারণে পেঁয়াজ রোপণে কিছুটা দেরি হওয়ায় এ বছর পেঁয়াজের ফলন কম হয়েছে। বিঘায় পেঁয়াজ উৎপাদন হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ মণ। গত বছর বিঘায় পেঁয়াজ পেয়েছি ৭০ থেকে ৮০ মণ। তবে ফলন কম পেলেও পেঁয়াজের দাম পাওয়ায় লোকসান হচ্ছে না। 

তিনি আরও বলেন, অনেক কৃষকই বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রির আশায় অপরিপক্ব পেঁয়াজ তুলে ফেলছেন। পেঁয়াজ পরিপক্ব হতে আরও ২০ দিন থেকে এক মাস সময় লাগবে। 

কালুখালী উপজেলার মহেন্দ্রপুর এলাকার কৃষক আবুল শেখ আজকের পত্রিকাকে বলেন, এবার প্রতি বিঘায় ৩০ থেকে ৬০ মণ পেঁয়াজ হচ্ছে। যাঁদের বিঘায় ৩০ মণ পেঁয়াজ হচ্ছে, তাঁদের লোকসানে পড়তে হচ্ছে। আর যাঁদের বিঘায় ৬০ মণ পেঁয়াজ হচ্ছে, তাঁরা কিছুটা লাভবান হচ্ছেন। বাজারে বেশি দামে বিক্রির জন‍্য অপরিপক্ব পেঁয়াজ তুলে ফেলা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটাই দাবি, অন্তত এক মাস যেন ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি না করেন। 

গৃহবধূ বুলবুলি খাতুন বলেন, সংসারের কাজের ফাঁকে ফাঁকে অন্যের পেঁয়াজ কেটে দেই। ভোরে মাঠে চলে আসি। এরপর কিছু পেঁয়াজ কেটে বাড়িতে গিয়ে রান্না শেষে আবারও এসে পেঁয়াজ কাটতে শুরু করি। প্রতিদিন ৫ থেকে ৬ মণ পেঁয়াজ কাটতে পারি। প্রতি মণ পেঁয়াজ কাটলে ৫০ টাকা করে পাই। 

তিনি আরও বলেন, আমার মতো অনেক নারী আছে যারা মাঠে মাঠে পেঁয়াজ কাটার কাজ করছে। যারা সারা দিন ধরে পেঁয়াজ কাটে, তারা ৮ থেকে ১০ মণ পেঁয়াজ কাটতে পারে। 

এ বিষয়ে রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, জেলায় এ বছর সাড়ে ৫ হাজার হেক্টর জমিতে মুড়ি পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। যেখান থেকে উৎপাদন হবে ৯০ হাজার মেট্রিক টন। যার বাজারমূল্য ৯৫ কোটি টাকা। 

তিনি আরও বলেন, মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষে কৃষক লাভবান হচ্ছেন। যেহেতু মুড়িকাটা পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা যাবে না। সে কারণে ফলন কম হবে এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। বাজারে ভালো দাম থাকায় আগাম পেঁয়াজ উত্তোলনের জন‍্য পরামর্শ দিচ্ছি। 

এ কৃষি কর্মকর্তা বলেন, এ বছর জেলায় ৫০০ হেক্টর জমিতে বেশি পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে। তাই ফলন কম হলেও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত