Ajker Patrika

জলমহাল জামানত দেখিয়ে ঋণ নেন নিজাম হাজারী

  • ৩ কোটি টাকার এই ঋণ দেয় এনসিসি ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জরিমানা।
  • জামানত রাখা হয় ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার ৩৬ একর আয়তনের কৈয়ারা দিঘি জলমহাল।
জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা 
আপডেট : ১৬ জুন ২০২৫, ১৭: ০৩
নিজাম উদ্দিন হাজারী। ছবি: সংগৃহীত
নিজাম উদ্দিন হাজারী। ছবি: সংগৃহীত

খাস জলমহাল জামানত দেখিয়ে ফেনীর আওয়ামী লীগের নেতা নিজাম উদ্দিন হাজারী ও তাঁর স্ত্রীর প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দিয়েছে ন্যাশনাল ক্রেডিড অ্যান্ড কমার্স (এনসিসি) ব্যাংক। কৃষিঋণ বিতরণে এমন গুরুতর অনিয়ম হওয়া ওই ঋণ বাতিলের পাশাপাশি ব্যাংকটিকে জরিমানা করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

জানা যায়, দেশের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গঠিত ৫ হাজার কোটি টাকার পুনঃ অর্থায়ন স্কিমের আওতায় ৪ শতাংশ সরল সুদে নিজাম হাজারীর প্রতিষ্ঠান স্নিগ্ধা ফিশারিজ অ্যান্ড হ্যাচারি এবং তাঁর স্ত্রী নূর জাহান বেগমের এন এন ফিশারিজ অ্যান্ড হ্যাচারিকে ৩ কোটি টাকার এই ঋণ দেয় এনসিসি ব্যাংকের রাজধানীর পান্থপথ শাখা। ঋণ গ্রহীতা প্রতিষ্ঠান দুটি ফেনী জেলার লনি হাজারী রোড এলাকায় অবস্থিত। ঋণের বিপরীতে জামানত রাখা হয় ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলায় ৩৬ দশমিক ১৬ একর আয়তনের কৈয়ারা দিঘি জলমহাল।

সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই জলমহাল ২০২০ সালের ৫ জুলাই থেকে ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত নিজাম উদ্দিন হাজারী ও তাঁর স্ত্রী নূর জাহান বেগমের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান দুটির কাছে সাবলিজ দেন স্থানীয় শুভপুর মৎস্য সমবায় সমিতি লিমিটেডের অন্যতম নেতা শাহ জাহান। যদিও ভূমি মন্ত্রণালয়ের ‘সরকারি জলমহাল ব্যবস্থাপনা নীতি ২০০৯-এর ৫ ধারায় বলা হয়েছে, লিজ গ্রহীতা মৎস্যজীবী সংগঠন/সমিতি তাদের নামে লিজকৃত জলমহাল কোনোভাবেই সাবলিজ বা অন্য কোনো ব্যক্তি/গোষ্ঠীকে হস্তান্তর করতে পারবে না। যদি কেউ সাবলিজ দেয়, তবে ওই লিজ বাতিল হয়ে সরকারের অনুকূলে চলে যাবে। অথচ সাবলিজের এই জলমহাল জামানত রেখেই ঋণ দিয়েছে এনসিসি ব্যাংক।

খাস জলমহাল জামানত রেখে ঋণের বিষয়টি স্বীকার করে এনসিসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী (সিইও) এম শামসুল আরেফিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ঋণ বিতরণে জলমহাল জামানত ছিল। কিন্তু এই ঋণের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শনে কিছু আপত্তি ছিল। কিন্তু ঋণ আদায় হওয়ায় তা সমন্বয় করা হয়েছে। তাহলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ বাতিল করার কথা নয়। ঋণ নীতিমালা ভেঙে অপরাধের দণ্ড ও জরিমানা কেটে নেওয়ার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।

এনসিসি ব্যাংকের একজন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বিগত আওয়ামী লীগ আমলে অনেক চাপের মুখে এই ঋণ ছাড় করা হয়। সেখানে জামানত নিয়ে এত যাচাই করার সুযোগ ছিল না। ঋণের অনিয়মের বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে উঠে এসেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সুদের খেলায় অচল রপ্তানি সহায়তা

জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা 
আপডেট : ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ১২: ৩৬
সুদের খেলায় অচল রপ্তানি সহায়তা
প্রতীকী ছবি

ব্যাংকগুলোর সুদ-স্বার্থ কৌশলের নীরব ফাঁদে পড়েছে রপ্তানি খাতের জন্য গঠিত ১০ হাজার কোটি টাকার রপ্তানি সহায়ক প্রাক্-অর্থায়ন তহবিল (ইএফপিএ)।

২০২৩ সালের শুরুতে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক এই তহবিল তৈরি করেছিল রপ্তানিকারকদের স্বল্প সুদে মূলধন জোগাতে, যাতে বৈশ্বিক মন্দা ও বৈদেশিক মুদ্রার সংকটেও উৎপাদন অব্যাহত থাকে। কিন্তু দুই বছর পেরোতেই এই তহবিলের সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা এখন পড়ে আছে অচল অবস্থায়, যা ব্যাংকের খাতায় জমে থাকা এক নিষ্ক্রিয় অঙ্কে পরিণত হয়েছে।

রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) সংকুচিত হওয়ার পর ইএফপিএকে আশা করা হচ্ছিল তার বিকল্প হিসেবে। কিন্তু ব্যাংকগুলোর আচরণে এর ভিন্ন চিত্রই ফুটে উঠছে। তারা এই সহায়তা প্রকল্পে অংশ নিতে প্রায় কোনো আগ্রহ দেখাচ্ছে না। বরং নিজেদের তহবিল থেকে ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ সুদে ঋণ দিতেই বেশি আগ্রহী, যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের রপ্তানি সহায়ক এই বিশেষ তহবিল থেকে মাত্র ৪ শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়া সম্ভব। ফলে উদ্যোক্তারা পড়েছেন এক অদ্ভুত সংকটে—রাষ্ট্রের ঘোষিত প্রণোদনা কাগজে-কলমে আছে, কিন্তু বাস্তবে তার সুফল মেলে না।

একজন রপ্তানিকারক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ব্যাংকগুলো আমাদের বলে, ইএফপিএ ঋণ এখন বন্ধ; কিন্তু একই ব্যাংক পরদিন তাদের নিজেদের তহবিলের ঋণ অফার করে ১৫ শতাংশ সুদে। এটা নিছক ব্যবসায়িক স্বার্থ নয়, এটা পলিসির অপব্যবহার।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, তহবিলের মোট অর্থের মধ্যে প্রায় ৬৫ শতাংশই এখন ব্যাংকগুলো ব্যবহার করছে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংক চাইলেও ব্যাংকগুলো সেই টাকা রপ্তানিকারকদের দিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। তারা টাকা নিজেদের কাছে ধরে রেখেছে, বিতরণ করছে না।

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এই তহবিল রপ্তানিকারকদের জন্য লাইফলাইন হওয়ার কথা ছিল। অথচ ব্যাংকগুলো এটাকে নিজেদের সুবিধার খাতায় ফেলেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর মনিটরিং না থাকলে এভাবে সরকারি প্রণোদনা মাঠে নামবে না।’

বিশ্লেষকদের মতে, এর পেছনে দুটি বাস্তব কারণ কাজ করছে—এক, ব্যাংকগুলো উচ্চ সুদের ঋণে লাভ বেশি পায়; দুই, তহবিল বিতরণে কোনো বাধ্যবাধকতা বা জরিমানা না থাকায় তারা নির্লজ্জভাবে অলস রাখছে।

অর্থনীতিবিদ ড. মইনুল ইসলাম মনে করেন, এটা অর্থনীতির একধরনের ‘নীরব ব্লকেজ’। ব্যাংকগুলো জানে, তারা চাইলেও না দিলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যবস্থা নেবে না। ফলে এই অর্থ কার্যত একধরনের সুদ-অপচয় চক্রে ঘুরছে।

অন্যদিকে ব্যাংক খাতে এখন তারল্যের কোনো সংকট নেই। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে উদ্বৃত্ত তারল্য রয়েছে প্রায় ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ অর্থের ঘাটতি নয়, বরং প্রণোদনা তহবিল ব্যবহার না করার পেছনে আছে সুদ-স্বার্থের মানসিকতা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘রপ্তানি সহায়তার এই সস্তা ঋণের অর্থ যদি অলস পড়ে থাকে, তাহলে তহবিল গঠনের লক্ষ্যই ব্যর্থ হবে। এতে শুধু রপ্তানিকারকেরাই নয়, পুরো দেশই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কোনো ব্যাংক যদি ইচ্ছাকৃতভাবে এই তহবিলের ঋণ বিতরণে গড়িমসি করে এবং পরিবর্তে নিজেদের উচ্চ সুদের ঋণ চাপিয়ে দেয়, তবে ব্যবসায়ীরা যেন সরাসরি বাংলাদেশ ব্যাংকে অভিযোগ জানান। আমরা তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেব।’

তবে ব্যাংকারদের একাংশ বলছেন, তহবিলের শর্ত জটিল এবং ফেরত দেওয়ার সময়সীমা কম। এ কারণে তাঁরা ঝুঁকি নিতে চান না। কিন্তু অর্থনীতিবিদদের মতে, এটি ব্যাংকগুলোর সুবিধাবাদী ব্যাখ্যা। কারণ, ইএফপিএ ঋণের ঝুঁকি অনেকটাই বাংলাদেশ ব্যাংক বহন করে; তবু তারা দিতে চায় না।

ফলে এখন এই তহবিলের উদ্দেশ্য পুরোপুরি ব্যর্থতার মুখে। রপ্তানিকারকেরা যেখানে কাঁচামাল আমদানির জন্য মূলধন না পেয়ে উৎপাদন কমাচ্ছেন, ব্যাংকগুলো সেখানে অলস অর্থের ওপর ভর করে উচ্চ সুদের ঋণ বিক্রিতে মনোযোগী।

ইস্টার্ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আলী রেজা ইফতেখার বলেন, ‘ব্যাংকের নিজস্ব তহবিল থেকে ঋণ দেওয়া স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তবে রপ্তানির বিশেষ তহবিল থেকে ঋণ দেওয়া হচ্ছে না, এমন তথ্য আমার কাছে নেই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিমানবন্দরে অগ্নিকাণ্ড: স্বাভাবিক হচ্ছে পরিস্থিতি, পণ্য খালাস বাড়ছে

  • খালাস আশানুরূপ নয়, দাবি আমদানিকারকদের।
  • ফিরে পাওয়া যাচ্ছে অক্ষত পণ্যগুলোও।
  • একটি গেট খোলা থাকায় পণ্য পরিবহনে ভোগান্তি।
  • গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ৩৩০টি শিপমেন্টের ডেলিভারি হয়েছে।
রোকন উদ্দীন, ঢাকা
আপডেট : ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ১১: ১৩
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ কমপ্লেক্সে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর পাঁচ দিন পেরিয়েছে। আকস্মিক এ ঘটনায় প্রথম কয়েক দিন আমদানি পণ্য খালাস থমকে গিয়েছিল। তবে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে। গতকাল বুধবার আমদানির পণ্যের খালাস কিছুটা বেড়েছে।

তবে তা আশানুরূপ নয় বলে দাবি করছেন আমদানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা। তাঁরা বলছেন, পণ্য সরবরাহ নিতে নানা জটিলতা তৈরি হচ্ছে। এ ছাড়া একটিমাত্র গেট খোলা থাকায় পণ্য পরিবহনে ভোগান্তি তৈরি হয়েছে। পণ্য খালাসের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে। ভোগান্তি লাঘবে আরও একটি গেট খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন আমদানিকারকেরা; বিশেষ করে ৮ ও ৯ গেটে দিয়ে গাড়ি ও মানুষ প্রবেশ করায় এই গেট দিয়ে পণ্যও পরিবহনের সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন তাঁরা। নতুন আসা পণ্যের সঙ্গে সঙ্গে অক্ষত পণ্যগুলোও ফেরত আসা শুরু হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

গতকাল বুধবার কার্গো ভিলেজে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত রোববার বিশেষ ব্যবস্থায় ৯ নম্বর গেট দিয়ে আমদানি কার্যক্রম শুরু করে বিমান কর্তৃপক্ষ। প্রথম দিন একটি শিপমেন্টের ডেলিভারি হয়েছিল। দ্বিতীয় দিন হয়েছে ১১টির। মঙ্গলবার তৃতীয় দিন ১০০টি শিপমেন্টের ডেলিভারি হয়। সর্বশেষ বুধবার এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ৩৩০টি শিপমেন্টের ডেলিভারি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, শেষ পর্যন্ত এটি চার থেকে সাড়ে চার শ হবে।

জানা যায়, আগে বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজের ৪টি গেট দিয়ে আমদানি পণ্য খালাস হতো। প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ হাজার শিপমেন্টের ডেলিভারি পাওয়া যেত। এখন যে গেট দিয়ে হচ্ছে, সেটা মূলত রপ্তানির জন্য নির্ধারিত গেট; যা উত্তর দিকে কার্গো ভিলেজের শেষ প্রান্তে অবস্থিত।

সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট খাইরুল আলম ভুঁইয়া বলেন, ‘শিপমেন্ট গ্র্যাজুয়েলি বাড়ছে। তবে এটি আশানুরূপ নয়।

যদিও অনেক কার্গো ফ্লাইট বন্ধ রয়েছে। এরপরও যা আসছে, সেগুলোও খালাস হতে অনেক সময় লাগছে। এ ছাড়া ৯ নম্বর গেটটি যেখানে-সেখানে পাবলিক পরিবহন বা ছোট ছোট যানবাহন ঢুকতে পারে না। তাই যাদের অল্প পণ্য, তাদের আসা-যাওয়া ও পণ্য পরিবহন দুরূহ হয়ে উঠেছে। হয় তাদের অল্প পণ্যের জন্য একটা পিকআপ ভাড়া করতে হচ্ছে, অথবা মাথায় করে নিতে হচ্ছে। তা ছাড়া আসার সময়ও অনেক দূর হেঁটে আসতে হচ্ছে।’

৮ নম্বর গেটটি খুলে দেওয়ার দাবি জানান আমদানিকারকেরা। তাঁরা বলছেন, এখন এই গেট দিয়ে কর্মকর্তারা গাড়ি নিয়ে ঢুকতে পারছেন। চাইলে পণ্যের ট্রলি বা গাড়িও ঢুকতে পারবে।

তবে বিমান ও কাস্টমস কর্মকর্তারা বলছেন, পণ্য ডেলিভারির অনেক সরঞ্জাম পুড়ে যাওয়ায় আপাতত একটি গেট দিয়েই পণ্য ডেলিভারি হচ্ছে। ধীরে ধীরে সব কটি চালু করা হবে।

ঢাকা কাস্টমসের জয়েন্ট কমিশনার মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, আগুনে পণ্যের সঙ্গে কম্পিউটার, স্ক্যানার, ট্রলিসহ অনেক ইকুইপমেন্ট পুড়ে গেছে। এ জন্য যেখানে সবকিছু রয়েছে, সেখান দিয়ে পণ্য ডেলিভারি হচ্ছে। ধীরে ধীরে সবই খোলার চেষ্টা হচ্ছে। তবে বিষয়টি বিমান বাংলাদেশ আরও ভালো বলতে পারবে।

গতকাল নির্ধারিত পণ্যের সঙ্গে সঙ্গে আগুন লাগার আগে আসা অক্ষত পণ্যের ডেলিভারিও নিতে দেখা গেছে।

পার্লশিপিং নামের একটি সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ বলেন, গতকালের চেয়ে আজকে পণ্য ডেলিভারি কিছুটা বেড়েছে। আগুন লাগার আগে আসা পণ্যও এখন পাচ্ছি অনেকে। আজ দুপুরে আমার সঙ্গে একজন ১৬ ও ১৮ অক্টোবরে আসা দুটি শিপমেন্টের পণ্যের ডেলিভারি নিয়েছেন।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির নির্বাহী পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা গত সোমবার বিমানের এমডির সঙ্গে বৈঠক করেছি। যেহেতু আমাদের পণ্যগুলো ওষুধের কাঁচামাল এবং তাঁরা পণ্যের সুরক্ষার আশ্বাস দিয়েছেন। এখন দেখা যাক কী হয়।’ তবে কী পরিমাণ পণ্য অক্ষত রয়েছে এবং কত পণ্য পুড়েছে, তার হিসাব এখনো শেষ হয়নি।

এক্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘আমরা রপ্তানিকারকদের তথ্য দিতে বলেছি। তবে সব তথ্য এখনো আসেনি। অনেকে পণ্য অক্ষত পাওয়া যাচ্ছে। তাই সবাই তথ্য দিতে কিছুটা সময় নিচ্ছেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সোনার বড় দরপতন, একলাফে ৮ হাজার ৩৮৬ টাকা কমল ভরিতে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২২ অক্টোবর ২০২৫, ২৩: ০৩
সোনার বড় দরপতন, একলাফে ৮ হাজার ৩৮৬ টাকা কমল ভরিতে

বিশ্ববাজারে সোনার বড় দরপতনের পরদিন দেশের বাজারেও বেশ বড় অঙ্কে সোনার দাম কমিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। টানা আট দফা বাড়ানোর পর সোনার দাম ভরিতে একলাফে ৮ হাজার ৩৮৬ টাকা কমানো হয়েছে।

আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) থেকে ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম হবে ২ লাখ ৮ হাজার ৯৯৬ টাকা। আজ বুধবার রাতে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে বাজুস।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, স্থানীয় বাজারে তেজাবি সোনার (পিওর গোল্ড) মূল্য কমেছে। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সোনার নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।

নতুন দাম অনুযায়ী, দেশের বাজারে প্রতি ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) ২২ ক্যারেটের সোনার দাম পড়বে ২ লাখ ৮ হাজার ৯৯৬ টাকা। এ ছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ৯৯ হাজার ৫০১, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ৭০ হাজার ৯৯৪ ও সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি সোনার দাম ১ লাখ ৪২ হাজার ২১৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বাজুস আরও জানায়, সোনার বিক্রয়মূল্যের সঙ্গে আবশ্যিকভাবে সরকার-নির্ধারিত ৫ শতাংশ ভ্যাট ও বাজুস-নির্ধারিত ন্যূনতম মজুরি ৬ শতাংশ যুক্ত করতে হবে। তবে গয়নার ডিজাইন ও মানভেদে মজুরির তারতম্য হতে পারে।

সর্বশেষ গত রোববার (১৯ অক্টোবর) দেশের বাজারে সোনার দাম বাড়িয়েছিল বাজুস। সেদিন ভরিতে ১ হাজার ৫০ টাকা বাড়িয়ে ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ২ লাখ ১৭ হাজার ৩৮২ টাকা নির্ধারণ করেছিল সংগঠনটি।

এ ছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ২ লাখ ৭ হাজার ৫০৩, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ৭৭ হাজার ৮৫৩ ও সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি সোনার দাম ১ লাখ ৪৮ হাজার ৭৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল, যা কার্যকর হয়েছিল পরদিন ২০ অক্টোবর থেকে।

চলতি বছর মোট ৬৭ বার দেশের বাজারে সমন্বয় করা হলো সোনার দাম। দাম বাড়ানো হয়েছে ৪৮ বার আর কমেছে মাত্র ১৯ বার। আর ২০২৪ সালে দেশের বাজারে মোট ৬২ বার সোনার দাম সমন্বয় করা হয়েছিল। তখন ৩৫ বার দাম বাড়ানো হয়েছিল আর কমানো হয়েছিল ২৭ বার।

এদিকে গতকাল মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) বিশ্ববাজারে সোনার দামে পাঁচ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় পতন হয়। মার্কিন সুদের হার কমানোর সম্ভাবনা ও নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে সোনার চাহিদা বেড়ে রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছানোর পর বিনিয়োগকারীরা মুনাফা তুলে নেওয়া শুরু করায় এই দরপতন দেখা যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের গতকাল দুপুরে স্পট গোল্ডের দাম প্রতি আউন্সে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ কমে এক সপ্তাহের মধ্যে সর্বনিম্ন ৪ হাজার ১১৫ দশমিক ২৬ ডলারে দাঁড়ায়, যা ২০২০ সালের আগস্টের পর সবচেয়ে বড় দৈনিক পতন।

অথচ আগের দিন সোমবার সোনার দাম ইতিহাসের সর্বোচ্চ ৪ হাজার ৩৮১ দশমিক ২১ ডলারে উঠেছিল। এ বছর এখন পর্যন্ত সোনার দাম প্রায় ৬০ শতাংশ বেড়েছে, যা মূলত ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, সুদের হার কমার সম্ভাবনা এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর ক্রমাগত সোনা কেনার কারণে সম্ভব হয়েছে।

বাংলাদেশের সোনার বাজারের সঙ্গে সরাসরি বিশ্ববাজারের সম্পৃক্ততা নেই। তবে বাজুসের দাম সমন্বয়ে বিশ্ববাজারের গতি অনুসরণের প্রবণতা দেখা যায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিকেএমইএ প্রাঙ্গণে আইএফআইসি ব্যাংকের নতুন এটিএম বুথ উদ্বোধন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

গ্রাহকদের আর্থিক লেনদেন আরও সহজ ও দ্রুততর করতে নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) প্রাঙ্গণে এটিএম বুথ স্থাপন করেছে আইএফআইসি ব্যাংক।

আজ বুধবার বুথটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন ব্যাংকের চেয়ারম্যান মো. মেহমুদ হোসেন এবং বিকেএমইএ প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হাতেম।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আইএফআইসি ব্যাংকের পক্ষে আরও উপস্থিত ছিলেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মনসুর মোস্তফা; ডিএমডি, সিআইও ও সিআরও মো. মনিতুর রহমান; হেড অব অপারেশনস হেলাল আহমেদ এবং নারায়ণগঞ্জ ব্র্যাঞ্চের চিফ ম্যানেজার আব্দুর রহমান।

অন্যদিকে বিকেএমইএর পক্ষে উপস্থিত ছিলেন এক্সিকিউটিভ প্রেসিডেন্ট ফজলে শামীম এহসান, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট অমল পোদ্দার, ভাইস প্রেসিডেন্ট (ফাইন্যান্স) মো. মোরশেদ সারোয়ার ও ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ রাশেদ। এ ছাড়া আইএফআইসি ব্যাংক ও বিকেএমইএ প্রতিষ্ঠানের অন্য কর্মকর্তারা এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

বুথটির মাধ্যমে আইএফআইসি ব্যাংকের গ্রাহকেরা সহজে বিভিন্ন সেবা নিতে পারবেন। এর মধ্যে রয়েছে টাকা উত্তোলন, আইএফআইসি বা অন্য ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট ও কার্ডে ফান্ড ট্রান্সফার, ব্যালন্স চেক ও মিনি স্টেটমেন্ট, কার্ড অ্যাকটিভ, পিন পরিবর্তনসহ অন্যান্য এটিএম-সংক্রান্ত বিভিন্ন সেবা।

আইএফআইসি ব্যাংক জানিয়েছে, তারা এ ধরনের পদক্ষেপের মাধ্যমে গ্রাহকদের সুবিধা দেওয়া ও দেশের আর্থিক খাতে ডিজিটাল রূপান্তরের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত