Ajker Patrika

ঘিওরে ছাত্রদল নেতা হত্যার জেরে হরতালে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ

ঘিওর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি  
Thumbnail image
হত্যার প্রতিবাদে টায়ারে আগুন জ্বালানো হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

মানিকগঞ্জের ঘিওরে ছাত্রদলের সাবেক নেতা লাভলু আহমেদকে (৩৭) কুপিয়ে হত্যার প্রতিবাদে উপজেলা সদরে হরতাল পালিত হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করেন ঘিওর বাজার ব্যবসায়ী এবং কুস্তা গ্রামবাসী। হরতালে সমর্থন দেন উপজেলা বিএনপির বেশির ভাগ নেতা-কর্মী।

এদিকে সন্ধ্যা ৭টার দিকে উপজেলা মোড়ের বটতলা গ্রামের বেশ কয়েকটি বসতবাড়িতে অগ্নিসংযোগের খবর পাওয়া যায়। এর আগে দুপুরে ময়নাতদন্ত শেষে লাভলুর লাশ মানিকগঞ্জ থেকে ঘিওরে আনার সময় উপজেলা মোড়ে বিক্ষুব্ধরা চারটি বাড়ি ও একটি দোকান ভাঙচুর ও লুট করেন। এর মধ্যে একটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়।

উপজেলার কুস্তা এবং বটতলা গ্রামবাসীর মধ্যে পূর্বশত্রুতার জেরে গতকাল সোমবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক লাভলু আহমেদকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। মারাত্মক আহত হন ৬ জন।

উপজেলা সদরে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালিত হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
উপজেলা সদরে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালিত হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

নিহত লাভলু আহমেদ ২০০৩ সালে উপজেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর বাড়ি কুস্তা গ্রামে।

এ ঘটনার প্রতিবাদে আজ সকালে উপজেলা বাসস্ট্যান্ড, বাজার, পঞ্চ রাস্তার মোড়ে টায়ারে আগুন লাগিয়ে বিক্ষোভ করেন এলাকাবাসী। হরতালের কারণে আজ উপজেলা সদরের সব দোকানপাট বন্ধ ছিল। উপজেলা সদর থেকে বিভিন্ন রুটে যানবাহন চলাচলও ছিল সীমিত।

জেলা বিএনপির ত্রাণ ও পূর্ণবাসন সম্পাদক আব্দুল আলিম খান মনোয়ার অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে বলেন, ‘উপজেলার কুস্তা গ্রামের বাসিন্দারা এই অগ্নিকাণ্ড ঘটিয়েছেন। তারা বিভিন্ন এলাকা থেকে কয়েক শত লোকজন ভাড়া করে অগ্নিকাণ্ড ঘটিয়েছে। যা শনাক্ত করা গেছে, অনেকেই দেখেছে এবং ভিডিও ফুটেজ আছে। এছাড়াও আমার বাড়িসহ বেশ কয়েকটি বাড়িতে হামলা লুটপাট চালিয়ে মোটরসাইকেল স্বর্ণালংকার, টাকা পয়সা লুটে নিয়েছে। এর তীব্র নিন্দা ও উপযুক্ত শাস্তি দাবি করছি।’

উপজেলা মোড়ের বটতলা গ্রামে এক বাড়িতে সন্ধ্যায় আগুন দেওয়া হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
উপজেলা মোড়ের বটতলা গ্রামে এক বাড়িতে সন্ধ্যায় আগুন দেওয়া হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

অপরদিকে কুস্তা গ্রামের একাধিক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, কোনো বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ ঘটানো হয়নি। তারা নিজেদের বাড়িতে আগুন লাগিয়েছেন।

উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান খান কুদরত ও উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান সানি বলেন, দিবালোকে কুপিয়ে হত্যার ২৪ ঘণ্টা পার হলেও কোনো আসামি গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এর প্রতিবাদে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল কর্মসূচি দেওয়া হয়।

এদিকে ময়নাতদন্ত শেষে লাভলুর লাশ আজ বেলা ২টা ৩০ মিনিটের দিকে উপজেলা পরিষদের সামনে রেখে বিক্ষোভ করে হরতাল সমর্থকেরা। এ সময় বিক্ষুব্ধরা বটতলা এলাকার মো. সোলাইমান, ইউপি সদস্য সেলিনা আক্তার, আরজু ব্যাপারী ও মো. রায়হানের বাড়ি এবং মুরাদের ডেকোরেটর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভাঙচুর ও লুট করেন। পরে আরজু ব্যাপারীর বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেন তাঁরা। ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

রাত সোয়া ১০টার দিকে ঘিওর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোমেনুর রহমান নিশ্চিত করে বলেন, ঘিওরের পরিবেশ এখন শান্ত। সব জায়গার আগুন নিয়ন্ত্রণ এসেছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও র‍্যাব আছে। পুলিশ সুপার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

ঘিওর ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ফায়ারম্যান মো. সিদ্দিক আলী জানান, আরজু ব্যাপারীর বাড়িতে আগুনে প্রায় ৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

ঘিওর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এ ঘটনা এখন পর্যন্ত ভুক্তভোগীর পরিবার মামলা করেনি। অভিযোগের ভিত্তিতে আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা হবে। ভাঙচুরের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের বাড়ি পরিদর্শন করেছি। হরতালে উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ বেশ গুরুত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছে।’

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি ঘোষণা

রফিকরাজু ক্যাডেট একাডেমির প্রধান শিক্ষক মিস লাকি আক্তার বলেন, ঘিওর উপজেলায় সংঘর্ষের কারণে কাল পরীক্ষা নেওয়ার মতো পরিবেশ নেই। তাই কালকের ইংরেজি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত