Ajker Patrika

দুর্বৃত্তদের বিষে নীল কামালের ঈদ, মরে ভেসে উঠল ২ পুকুরের মাছ

ত্রিশাল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি  
ময়মনসিংহের ত্রিশালের অলহরী খারহর গ্রামের মোর্শেদুর রহমান কামাল তাঁর পুকুরের সব মাছ মরে ভেসে উঠতে দেখে নির্বাক হয়ে পড়েন। ছবি: আজকের পত্রিকা
ময়মনসিংহের ত্রিশালের অলহরী খারহর গ্রামের মোর্শেদুর রহমান কামাল তাঁর পুকুরের সব মাছ মরে ভেসে উঠতে দেখে নির্বাক হয়ে পড়েন। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঈদের আনন্দে যখন চারদিকে খুশির জোয়ার, তখন ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার অলহরী খারহর গ্রামের মোর্শেদুর রহমান কামালের বাড়িতে নেমে এসেছে বিষাদ। কে বা কারা ঈদের আগের রাতে তাঁর দুই পুকুরে বিষ ছিটিয়ে চাষের মাছ মেরে ফেলেছে।

মোর্শেদুর রহমান কামাল জানান, গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাতে দুর্বৃত্তরা তাঁর দুটি পুকুরের প্রায় আট হাজার পাঙাশ ও কয়েক হাজার দেশীয় প্রজাতির মাছ বিষ দিয়ে মেরে ফেলেছে। ঈদের দিন আজ শনিবার সকালে পুকুরে মাছ মরে ভেসে উঠেছে। এতে তাঁর অন্তত ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

মাছচাষি কামাল জানান, তিনি দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে পোশাক কারখানায় কাজ করছেন। অনেক কষ্টে আয়ের একটা অংশ জমিয়ে প্রায় ৮ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে পুকুর দুটিতে মাছের চাষ করেছিলেন তিনি। লক্ষ্য ছিল ঈদের পরে মাছ বিক্রি করে সংসারে খানিক সচ্ছলতা আনা। প্রতিটি মাছ গড়ে এক কেজি ওজনে পৌঁছেছিল। সবকিছুই প্রস্তুত ছিল বিক্রির জন্য। কিন্তু তার আগেই কামালের সব শেষ হয়ে যায়।

স্থানীয়রা জানায়, ঘটনাটি পূর্বশত্রুতার জেরে পরিকল্পিতভাবে করা হয়ে থাকতে পারে। তাঁরা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

পুকুরের মরা মাছ। ছবি: আজকের পত্রিকা
পুকুরের মরা মাছ। ছবি: আজকের পত্রিকা

কামালের বৃদ্ধ মা মুর্শিদা বেগম বলেন, ‘আজ একটা ঈদের দিন। আমার ঘরে কেউ বাসি মুখ ভাঙেনি (খায়নি)। ১৫ বছর ধইরা আমার পুতে গার্মেন্টস (কাজ) কইরা দিনে-রাতে খাইট্টা অনেক কষ্টে এই ফিশারিডা (মাছের খামার) করছিল। এহন আমার পুতে কী কইরা চলব? আমি এইডার বিচার চাই।’

এ বিষয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ করবেন জানিয়ে মোর্শেদুর রহমান কামাল বলেন, ‘আজ ঈদের দিন। সবাই আনন্দ করতাছে। আর আমি আমার পরিবার ও প্রতিবেশী লোকজন নিয়া পুকুর থেকে মরা মাছ তুলতেছি। আমার জানামতে তো কোনো শত্রু নেই। তাইলে কেডা আমার এই ক্ষতিটা করল। দুই পুকুরে প্রায় ১০ লাখ টাকার মাছ ছিল আমার। সব মইরা শেষ। ১৫ বছরের জমানো পুঁজি সব শেষ। যে আমার এই ক্ষতি করছে, আমি তার বিচার চাই, আমার ক্ষতিপূরণ চাই।’

মোর্শেদুর রহমান কামালের স্ত্রী রিক্তা বেগম বলেন, ‘আমরা ভাবছিলাম, এই ঈদে অনেক আনন্দ করব। একটু ভালো খাব। বাচ্চারা নতুন জামা পড়ে ঈদগাহে যাবে। এখন মনে হচ্ছে, ঈদই আর আসেনি আমাদের ঘরে।’

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য তাফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘পোশাকশ্রমিক কামাল দীর্ঘদিনের জমানো টাকায় মাছের চাষ শুরু করেছিলেন। তিনি খুব সহজ-সরল। দুর্বৃত্তরা পুকুরে বিষ দেওয়ায় তাঁর প্রায় ১০ লাখ টাকার মাছ মরে গেছে। যে বা যারা এই ঘৃণ্য কাজ করেছে, তাদের খুঁজে বের করে শাস্তির দাবি জানাই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত