Ajker Patrika

সিরাজদিখানে সাপ্তাহিক হাটে বিক্রি হচ্ছে দেশি পাখি

আব্দুল্লাহ আল মাসুদ, সিরাজদিখান (মুন্সিগঞ্জ)
আপডেট : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৪: ৫৪
Thumbnail image

মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে সাপ্তাহিক হাটের দিন অবাধে বিক্রি হচ্ছে দেশি পাখি। এই পাখি কেনাবেচা করতে দূরদূরান্ত থেকে আসছে মানুষ। দেশি পাখি বিক্রি বন্ধে আইন থাকলেও এর প্রয়োগ কিংবা বন বিভাগের নজরদারি চোখে পড়ে কম। এর ফলে সাপ্তাহিক হাটের দিন পানকৌড়ি, বালিহাঁস, তিলা ঘুঘু, ভাত শালিক, টিয়া, বাজ, ডাহুকসহ বিভিন্ন পাখি নিয়ে বসছেন একশ্রেণির পাখি শিকারিরা। আর এগুলো কিনে নিচ্ছেন আগ্রহী ক্রেতারা।

গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সিরাজদিখান বাজারের সাপ্তাহিক হাটে গিয়ে একটি পানকৌড়ি, দুটি বালিহাঁস বিক্রি করতে দেখা গেছে। বিষয়টি জানানো হলে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলা বন কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ এসে পানকৌড়িটি জব্দ করে উন্মুক্ত জলাশয়ে ছেড়ে দেন।

জানা যায়, সিরাজদিখান বাজারের সাপ্তাহিক হাটে বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যাপারী, খামারি ও গৃহস্থরা হাঁস-মুরগি, কবুতর নিয়ে আসেন। এর মধ্যে স্থানীয়ভাবে পালা হাঁস-মুরগি, কবুতরের সংখ্যাই বেশি। বিভিন্ন প্রকারের বিদেশি পাখিও ওঠে হাটটিতে। আর ওঠে বিক্রি নিষিদ্ধ বিভিন্ন প্রজাতির দেশি পাখি।

এদিকে ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে বলা হয়েছে, দেশীয় জাতের পাখি শিকারের সর্বোচ্চ শাস্তি ১ লাখ টাকা জরিমানা, এক বছরের কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ড। একই অপরাধ পুনরায় করলে ২ লাখ টাকা জরিমানা, দুই বছরের কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। কিন্তু এই আইন না মেনে প্রকাশ্যে সাপ্তাহিক হাটে বিভিন্ন প্রজাতির দেশি পাখি বিক্রি করা হচ্ছে। 

মো. রনি নামে বাজারে আসা এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমি সকালে কবুতর বিক্রি করার জন্য বাজারে এসেছি। এসে দেখি দুটি বালিহাঁস বিক্রি করতে নিয়ে এসেছে একজন। তার কাছ থেকে আমি ১ হাজার ২০০ টাকায় কিনেছি একটি।’ 

বাজারে বিক্রি করতে আনা এই পানকৌড়িটি পরে জলাভূমিতে অবমুক্ত করা হয়বালিহাঁস বিক্রেতা মো. শান্ত বলেন, ‘আমি দুটি বালিহাঁসের বাচ্চা সিরাজদাখান বাজারের সাপ্তাহিক হাট থেকে পালার জন্য কিনি। এগুলো বড় করে আজ বিক্রি করতে নিয়ে এসেছি। একটি ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি করেছি।’

পানকৌড়ি বিক্রেতা শাহ আলম বলেন, ‘সিরাজদিখান বাজার থেকে ২৫০ টাকা দিয়ে ছোট একটি পানকৌড়ির বাচ্চা কিনে বাড়িতে নিয়ে গেছিল আমার ছেলে। সেটাকে লালন-পালন করে বড় করেছে। এখন পানকৌড়িটাকে খাওয়ানোর জন্য মাছ কিনতে অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়, তাই আজকে বাজারে নিয়ে এসেছি বিক্রি করার জন্য। পরে উপজেলা বন কর্মকর্তা পানকৌড়িটা জব্দ করে নিয়ে গিয়ে জলাশয়ে ছেড়ে দিয়েছেন।’

সিরাজদিখান বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন বলেন, ‘যুগ যুগ ধরে সিরাজদিখান বাজারে সাপ্তাহিক হাটের দিন হাঁস-মুরগি, কবুতর নিয়ে আসে গৃহস্থ ও খামারিরা। তবে আগে কখনো শুনিনি এখানে দেশীয় পাখি বিক্রি হয়। এখন যেহেতু আপনার কাছ থেকে শুনলাম, আগামী সপ্তাহে আমরা দেখে হাতেনাতে ধরে তারপর প্রশাসনকে জানাব। তাঁরা এসে যেন যথাযথ ব্যবস্থা নেয়, সেই ব্যবস্থাও করব। আমাদের এই বাজার ঐতিহ্যবাহী একটি বাজার। তাই আমরা এখানে কোনো প্রকার দেশীয় পাখি বিক্রি করতে দেব না।’ 

এ ব্যাপারে উপজেলা বন কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ বলেন, ‘দেশীয় পাখি বিক্রি করা হচ্ছে এমন খবর পেয়ে সিরাজদিখান বাজার এসে একটি পানকৌড়ি জব্দ করি। পরে পানকৌড়িটির উপযুক্ত স্থান জলাশয়ে অবমুক্ত করি। এ ছাড়া আমরা উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে নিয়মিতই অভিযান চালিয়ে থাকি, যাতে করে কেউ দেশি পাখি বিক্রি করতে না পারে। আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত