Ajker Patrika

২৫ শিক্ষক-কর্মচারীর মাদ্রাসায় শিক্ষার্থী পাওয়া গেল ১৮ জন

আসাদুজ্জামান রিপন, নরসিংদী 
সুটরিয়া ফজলুল হক খান দাখিল মাদ্রাসা। ছবি: আজকের পত্রিকা
সুটরিয়া ফজলুল হক খান দাখিল মাদ্রাসা। ছবি: আজকের পত্রিকা

নরসিংদীর বেলাব উপজেলার পাটুলী ইউনিয়নের সুটরিয়া ফজলুল হক খান দাখিল মাদ্রাসা। প্রথম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা হওয়া এই প্রতিষ্ঠানটিতে রয়েছেন ২০ শিক্ষক ও ৫ কর্মচারী। তবে সম্প্রতি সরেজমিন সেখানে মাত্র ১৮ শিক্ষার্থীর উপস্থিতি দেখা গেছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসাটিতে শুরুর দিকে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি থাকলেও শিক্ষকদের গাফিলতির কারণে দিন দিন শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে। এখন প্রতিদিন ১৫-২০ জন উপস্থিত থাকে। শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি দেখানোর জন্য পাশের শাহ ইরানি কেরাতুল কোরআন হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানাসহ বিভিন্ন হাফিজিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের এখানে ভর্তি দেখানো হয়। সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ পরিদর্শনে আসলে বিভিন্ন মাদ্রাসা থেকে শিক্ষার্থী এনে শ্রেণিকক্ষে বসিয়ে রাখা হয়। তবে শিক্ষকদের দাবি, শিক্ষার্থী আছে দেড় শতাধিক।

গত রোববার গিয়ে দেখা গেছে, প্রথম, দ্বিতীয় ও ষষ্ঠ শ্রেণির কোনো শিক্ষার্থী উপস্থিত না থাকায় পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ করে অফিস কক্ষের বারান্দায় বসে গল্প করছেন শিক্ষকেরা। এ সময় তৃতীয় শ্রেণিতে তিন; চতুর্থ, পঞ্চম, অষ্টম ও দশম শ্রেণিতে দুজন করে; সপ্তম শ্রেণিতে ছয় এবং নবম শ্রেণিতে একজন শিক্ষার্থীর উপস্থিতি দেখা যায়। অর্থাৎ পুরো মাদ্রাসায় মোট ১৮ জন উপস্থিত ছিল। এ ছাড়া ২০ শিক্ষকের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ১৭ জন শিক্ষক।

এ সময় সাংবাদিকদের উপস্থিতি দেখে তাড়াহুড়ো করে পাঠদানে ব্যস্ত হয়ে পড়েন গল্প করতে থাকা শিক্ষকেরা। অভিযোগ রয়েছে, পাঠদানে শিক্ষকদের গাফিলতিসহ মাঝেমধ্যেই বেলা ২টা-৩টায় ছুটি দেওয়া হয় মাদ্রাসাটি। যদিও বিকেল ৪টা পর্যন্ত পাঠদান কার্যক্রম চালু থাকার কথা রয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটির পাশে বাড়ি থাকা এক শিক্ষার্থী জানায়, এই মাদ্রাসায় নিয়মিত ক্লাস হয় না। শিক্ষকেরা ক্লাস না করে বাইরে বসে থাকেন এবং বিকেল ৪টার আগেই ছুটি দেওয়া হয়। এ জন্য স্থানীয় অনেকে দূরের প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করে।

মাদ্রাসার প্রাক্তন এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করে জানান, মাদ্রাসার বর্তমান সুপার দীর্ঘদিন ধরে এখানে কর্মরত থাকায় তাঁর ইশারাতেই সব কার্যক্রম পরিচালিত হয়। সুপারসহ অন্য শিক্ষকেরা সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন ছুটিতে থাকেন। যাঁর কারণে পাঠদান কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়।

সুটরিয়া গ্রামের রাজু মিয়া বলেন, মাদ্রাসায় আগের তুলনায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা বর্তমানে খুবই কম। মাঝেমধ্যে দুপুরের পরপর ছুটি দেওয়া হয়।

তবে শিক্ষকদের দাবি, তাঁরা প্রতিদিন উপস্থিত থাকেন। এখানে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা দেড় শতাধিক।

মাদ্রাসাটিতে ১৫ বছর যাবৎ সুপার পদে দায়িত্বে রয়েছেন মো. সিদ্দিকুর রহমান। তাঁর সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, এসব বিষয়ে কথা বলতে তিনি বাধ্য নন। প্রতিষ্ঠানের এসব সমস্যার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অবগত রয়েছে। একপর্যায়ে তিনি নিজেও একজন সাংবাদিক বলে পরিচয় দেন।

এ সময় সুপারের কক্ষে থাকা অন্য শিক্ষকেরা বলেন, সুপারের সঙ্গে সচিবালয়, মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মহলের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সখ্য রয়েছে।

যোগাযোগ করা হলে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও বেলাব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আব্দুল করিম বলেন, ‘আমি পূর্বেও এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। এখানে কারও কোনো গাফিলতি আছে কি না তা তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এ এস এম আব্দুল খালেক বলেন, ‘আমি কয়েক দিন আগে এখানে যোগদান করেছি। তাই মাদ্রাসাটি সম্পর্কে এখনো বিস্তারিত অবগত নই। শিগগিরই সরেজমিন মাদ্রাসা পরিদর্শন করে বিধি অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নানা গুঞ্জনের মধ্যে ড. ইউনূসের সঙ্গে নাহিদের সাক্ষাৎ

জুলাই অভ্যুত্থানের পর সেনানিবাসে আশ্রয় নেওয়া ৬২৬ জনের তালিকা দিল সেনাবাহিনী

অভ্যুত্থানের পরে সেনানিবাসে প্রাণ রক্ষার্থে আশ্রয় নেওয়া ব্যক্তিবর্গ প্রসঙ্গে সেনাবাহিনীর অবস্থান

বিচারব্যবস্থার সংস্কার বাদ দিয়ে আ.লীগ সমর্থকদের অধিকার দমনের চেষ্টায় ড. ইউনূসের সরকার: এইচআরডব্লিউ

যে কুমির ডেকে আনছেন, তা আপনাদেরকেই খাবে: কাদের ইঙ্গিত করলেন উপদেষ্টা আসিফ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত