Ajker Patrika

‘একটি ডিমের উৎপাদন খরচ সাড়ে ১০ টাকা’ প্রতিষ্ঠা করতে ব্যবসায়ীর কাণ্ড 

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
‘একটি ডিমের উৎপাদন খরচ সাড়ে ১০ টাকা’ প্রতিষ্ঠা করতে ব্যবসায়ীর কাণ্ড 

নিজের বক্তব্যে ‘একটি ডিমের উৎপাদন খরচ সাড়ে ১০ টাকা’ উল্লেখ করে বক্তব্য শেষ করে চেয়ারে গিয়ে বসেন পোলট্রি ব্যবসায়ী নেতা মশিউর রহমান। তাঁর বক্তব্যের পর অনুষ্ঠানের উপস্থাপক বলেন, ‘ব্যবসায়ী নেতা মশিউর রহমান পোলট্রি শিল্পের সমস্যাগুলো গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেছেন, এ জন্য তাঁকে ধন্যবাদ। আপনারা জানেন, একটি ডিমের উৎপাদন খরচ বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৯ থেকে ১০ টাকায়।’ এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে মশিউর রহমান তাঁর চেয়ার থেকে উঠে উপস্থাপকের দিকে তেড়ে গিয়ে আঙুল তুলে বলেন, ‘কে বলেছে একটি ডিমের উৎপাদন খরচ সাড়ে ৯ টাকা, একটি ডিমের উৎপাদন খরচ তো সাড়ে ১০ টাকা। এসব কি বলছেন?’ উপস্থাপককে শাসিয়ে নিজের চেয়ারে বসে তিনি আবারও বলতে থাকেন, ‘একটি ডিমের উৎপাদন খরচ সাড়ে ১০ টাকা, আর সে বলে সাড়ে ৯ টাকা, কোথায় পাইছে?’ এ সময় মঞ্চে উপস্থিত মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম বলেন, ‘মশিউর সাহেব, থামেন। এখানে পাবলিকলি অনুষ্ঠান হচ্ছে, থামেন।’ এরপর থেমে যান ওই পোলট্রি ব্যবসায়ী।

আজ শুক্রবার ‘বিশ্ব ডিম দিবস’–উপলক্ষে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, ওয়ার্ল্ড পোলট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন (ওয়াপসা) বাংলাদেশ শাখা এবং বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এ ঘটনা ঘটে। রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে এই অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছিল। মশিউর রহমান বিপিআইসিসি এবং ওয়াপসা বাংলাদেশের সভাপতি। 

মশিউর রহমানরে প্রতিবাদের পর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. নাহিদ রশীদ তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘একটি ডিমের উৎপাদন মূল্য ৯ টাকা ৭০ পয়সা।’ এ সময় মশিউর রহমান তাঁর দিকে তাকালেও কোনো প্রতিবাদ করেননি। 

এর আগে, মশিউর রহমান তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘ডিমের দাম বাড়ানোর কারসাজির অভিযোগে গতকাল আমার বিরুদ্ধে সমন জারি হয়েছে। এখন গ্রেপ্তার আতঙ্কে আছি। এভাবে আতঙ্ক নিয়ে কীভাবে ব্যবসা করব। এই অনুষ্ঠানে বড় বড় অনেক পোলট্রি ব্যবসায়ী আসেনি, তার কারণ তারাও আতঙ্কে আছে। আমরা যদি ডিমের উৎপাদন বন্ধ করে দেই তবে একটি ডিমের দাম তো ৫০ টাকায় গিয়ে ঠেকবে। তখন কি হবে?’ এ ব্যাপারে মন্ত্রীর কাছে সহায়তাও চান তিনি। 

পরে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম প্রধান অতিথির বক্তব্য দিতে গিয়ে বলেন, ‘উৎপাদন ও বিপণন দুটি আলাদা বিষয়। কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা আছে, অসাধু কারবারি আছে, তাঁরা অনাকাঙ্ক্ষিত অনেক পরিবেশ সৃষ্টি করে। ভোক্তা অধিকার কর্তৃপক্ষ যেদিন অ্যাকশনে গেল, তাঁরা কতগুলো স্তরে গিয়ে অনেক অনিয়ম পেল, এরপর ডিমের দাম কমে গেল। এখন এই বাজার ব্যবস্থাপনায় যারা জড়িত তাদের যদি মশিউর রহমানের মত যারা উৎপাদনের সাথে জড়িত তাদের সঙ্গে একাকার করে ফেলি তাহলে কেমন যেন হয়ে যায়।’ 

প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আরও জানান, উৎপাদক পর্যায়ে দাম বাড়ানো হচ্ছে না বরং বাজার ব্যবস্থাপনায় যারা জড়িত তাদের কারসাজির কারণে বা সিন্ডিকেটের কারণে ডিমের দাম বাড়তে পারে। বাজার ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব তাঁর মন্ত্রণালয়ের না উল্লেখ করে মন্ত্রী ডিমের দাম কমাতে ভোক্তা অধিকার কর্তৃপক্ষ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানগুলোকেও সমন্বিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।

 ‘প্রতিদিন একটি ডিম, পুষ্টিময় সারা দিন’—এই প্রতিপাদ্যে ‘বিশ্ব ডিম দিবসে’র আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় পোলট্রি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. বজলুর রহমান। তিনি জানান, একজন গর্ভবতী নারীকে যদি প্রতিদিন দুটি ডিম খাওয়ানো যায় তাহলে তার পুষ্টির ৯৩ শতাংশই পূরণ করা সম্ভব। গর্ভবতী মাসহ সবাইকে প্রতিদিন সবাইকে একটি করে ডিম খাওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

বারডেম জেনারেল হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ শামশুন্নাহার মহুয়া জানান, একজন নারী প্রতিদিন একটি করে ডিম খেলে ৪৫ ভাগ পর্যন্ত ব্রেস্ট ক্যানসার প্রতিরোধ করা সম্ভব। একজন মানুষের জন্য যেসব পুষ্টি উপাদান দরকার তার সবই ডিমে আছে। তাই প্রতিদিন সবাইকে একটি করে ডিম খাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মনজুর মোহাম্মদ শাহজাদার সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন—মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শ্যামল চন্দ্র কর্মকারসহ অনেকে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত