Ajker Patrika

গাজীপুরে কেক খেয়ে সহোদর দুই বোনের মৃত্যু, দোকানদারসহ গ্রেপ্তার ৪

গাজীপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ৩১ জানুয়ারি ২০২৩, ১৪: ০৩
গাজীপুরে কেক খেয়ে সহোদর দুই বোনের মৃত্যু, দোকানদারসহ গ্রেপ্তার ৪

গাজীপুরে দোকান থেকে কিনে আনা কেক খেয়ে দুই বোনের মৃত্যু এবং ছয় মাসের এক শিশু অসুস্থ হওয়ার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ও রাতে গাজীপুর মহানগরীর বিভিন্নস্থান থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।

জিএমপি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউল ইসলাম জানান, গতকাল সোমবার মৃত ওই দুই শিশুর বাবা আশরাফুল ইসলাম বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন। তারপরই আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়। আজ মঙ্গলবার সকালে তাঁদের গাজীপুর আদালতে পাঠানো হয়েছে। 

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন—গাজীপুর মহানগরীর সদর থানার দক্ষিণ সালনা এলাকার বাসিন্দা লাবু মিয়ার ছেলে মো. সাইফুল ইসলাম (৪৮), ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা থানার শিশু মিয়ার ছেলে মো. সোহেল (৪৮), ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর থানার কোনাউর এলাকার দানু মিয়ার ছেলে শহিদুল ইসলাম (২৫) এবং একই গ্রামের মৃত চান মিয়ার ছেলে মোহাম্মদ হোসেন (৪৫)। 

গ্রেপ্তারদের মধ্যে মো. সাইফুল ইসলাম কেক বিক্রি করা ওই দোকানের মালিক। আর বাকিরা কর্মকর্তা ও কর্মচারী। 

স্থানীয়রা জানান, গত রোববার সকালে গাজীপুর মহানগরীর সালনা ইপসা গেট এলাকায় সাইফুল ইসলামের দোকান থেকে ১২টি কেকের একটি প্যাকেট কিনে বাড়িতে পাঠান শিশুদের বাবা আশরাফুল ইসলাম। পরে শিশুদের নানি আশরাফুলের মেয়ে আশামণি (৬), আলিফা আক্তার (২) এবং তাঁর ছেলের ঘরের নাতি সিয়ামকে কেক খাওয়ান। কেক খাওয়ানোর ১০ মিনিট পরই ওই তিন শিশু বমি করে। পরে ওই বমি খেয়ে বাড়ির কয়েকটি মুরগির বাচ্চা মারা যায়। এ ঘটনার পর স্বজনেরা শিশুদের গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক আশামণি ও আলিফাকে মৃত ঘোষণা করেন। সিয়াম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। 

শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ও ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান শাফি মোহাইমেন বলেন, মৃত ওই দুই শিশুর ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে, খাদ্যে বিষক্রিয়ায় তাদের মৃত্যু হয়েছে। এখন দেখার বিষয় হচ্ছে, খাদ্যে বিষ কোথা থেকে এল।

জিএমপি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিয়াউল ইসলাম বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে খাদ্যে বিষক্রিয়া তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। খাদ্যে বিষ কীভাবে যুক্ত হলো আমরা বিষয়টি তদন্ত করছি।’ 

মৃত শিশুদের বাবা আশরাফ আলী বলেন, ‘সকালে স্থানীয় দোকান থেকে কেক কিনে দিয়েছিলাম। শিশুদের কেক খাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই বড় মেয়ে আশামণি বমি করে অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাকে দ্রুত গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। একই সময় আলিফা এবং সিয়ামও অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে তাদের হাসপাতালে আনা হলে চিকিৎসক আলিফাকে মৃত ঘোষণা করেন।’ 

শিশুদের নানি বলেন, ‘সকালে কেক আনার পর আমি তাদের কেক খাওয়াই। কেক খাওয়ানোর কিছুক্ষণ পর তারা বমি করে। আমি মনে করেছি, তাদের বাতাস লেগেছে। পরে ঘরের মেঝেতে থাকা বমি খেয়ে বাড়ির মুরগির বাচ্চা মরে গেলে তাদের হাসপাতালে নেওয়া হয়।’ 

দুই শিশুর মা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার বড় বেটির (মেয়ে) একটু ঠান্ডা লেগেছিল। সকালে আমি তাকে ওষুধ খাইয়ে কারখানায় কাজে চলে আসি। পরে শুনতে পাই তারা সবাই অসুস্থ। হাসপাতালে নেওয়ার পর সেখানে আমার দুই সন্তান মারা যায়।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত