Ajker Patrika

কোটা সংস্কার নিয়ে মানববন্ধন, কথা না বলে চলে গেলেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা 

ঢাবি প্রতিনিধি
আপডেট : ০৯ জুলাই ২০২৪, ১৬: ০৫
কোটা সংস্কার নিয়ে মানববন্ধন, কথা না বলে চলে গেলেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা 

চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন ও কোটা পদ্ধতির সংস্কার নিয়ে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করেছেন। আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে বুয়েটের শহীদ মিনারের পাদদেশে মানববন্ধন করেন তাঁরা। তবে মানববন্ধনে কোনো ধরনের বক্তব্য দেননি বা সাংবাদিকেদের প্রশ্নেরও কোনো উত্তর দেননি। ১০ মিনিট অবস্থান করে একটা লিখিত বিবৃতি সাংবাদিকদের হস্তান্তর করেন তাঁরা। 

লিখিত বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, গত ৫ জুন হাইকোর্ট ২০১৮ সালের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কোটা বাতিলের পরিপত্রটি অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন। এর ফলে সারা দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভবিষ্যৎ সরকারি কর্মসংস্থান নিয়ে অনিশ্চয়তার উদ্রেক ঘটে। বিবৃতিতে তারা বিদ্যমান কোটার অযৌক্তিকতা তুলে ধরে ছয়টি পয়েন্ট উপস্থাপন করেন। এগুলো হলো: 

১. একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন দেশ পুনর্গঠনের দায়িত্ব নেন, তখন তিনি যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ও নারীদের জন্য যথাক্রমে ৩০ ও ১০ শতাংশ কোটার ব্যবস্থা করেন। কারণ, মুক্তিযুদ্ধে আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকে শহীদ হওয়ায় তাঁদের পরিবার উপার্জনক্ষম ব্যক্তিদের হারায়। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী অনেকের বাড়িঘর পুড়িয়ে ফেলে। অনেকে পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যকে হারান, অনেকে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে পঙ্গুত্ব বরণ করেন। 

এমতাবস্থায়, তখন জীবিত ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের জন্য জাতির জনকের ৩০ শতাংশ কোটা-ব্যবস্থা প্রদান করা সময়োপযোগী সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল। (গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে ‘অনগ্রসর’ অবস্থা বিবেচনায় কোটা দিয়ে সুযোগ সৃষ্টির কথা বলা আছে)। এ ছাড়া তৎকালীন নারী শিক্ষায় এই জনপদ অনগ্রসর ছিল। যেসব নারী পড়াশোনা করেছেন, তারাও অনেক প্রতিকূলতা অতিক্রম করে পড়ালেখা করতে পেরেছেন। সে জন্য তাঁদের জন্যও কোটা থাকা জরুরি ছিল। 

পরবর্তী সময়ে কোটা-সুবিধা বন্ধ থাকার পর আবার চালু হওয়ায় অনেক মুক্তিযোদ্ধার চাকরিতে প্রবেশের বয়স পেরিয়ে যায়। যার জন্য মুক্তিযোদ্ধার সন্তান পর্যন্ত কোটা-সুবিধা প্রদান করা যৌক্তিক ছিল। তবে বর্তমান সময়ে এসে অধিকাংশ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার সচ্ছল জীবন যাপন করছে। তাদের পরিবারের নাতি-নাতনিদের পূর্বের অনগ্রসর পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হয়নি। এ ক্ষেত্রে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য কোটা পদ্ধতি সংস্কার করা বাধ্যতামূলক বিবেচনা করে তাঁদের সুবিধার্থে ও মেধার স্বার্থে পূর্বের কোটা পদ্ধতি বাতিল করা উচিত। 

২. ২০০৪ সালের ইউনিসেফের তথ্যানুসারে নারীদের সাক্ষরতার হার ছিল ৩১ শতাংশ এবং ২০০৮ সালে ছিল ৫১ শতাংশ, সেখানে বর্তমানে মেয়েদের সাক্ষরতার হার ৭৩ শতাংশ। যেখানে দেশের সাক্ষরতার হার ৭৬ দশমিক ০৮ শতাংশ (সূত্র: প্রথম আলো)। এ থেকে এটা বলা যায় যে, দেশে নারীরা শিক্ষায় ও যোগ্যতায় অনেক দূর এগিয়ে গেছেন। নারীরা তাঁদের আত্মমর্যাদা ও অধিকারের প্রতি যথেষ্ট সচেতন। এমতাবস্থায় ১০ শতাংশ নারী কোটা বজায় রাখা আত্মমর্যাদাশীল নারীদের প্রতি অসম্মানজনক। এমনকি আমাদের মধ্যে উপস্থিত নারীরা কেউই নারীদের জন্য এই বিশেষ কোটা-সুবিধা চান না, তাই নারী কোটাও সংস্কার করা উচিত। 

৩. পূর্বে দেশের অনুন্নত যোগাযোগব্যবস্থার জন্য বেশ কিছু প্রত্যন্ত জেলা অনগ্রসর ছিল, যার জন্য ১০ শতাংশ জেলা কোটা রাখা হয়েছিল। বর্তমানে পদ্মা সেতু, যমুনা সেতুসহ বিভিন্ন মেগা প্রজেক্টের মাধ্যমে যোগাযোগব্যবস্থায় অভাবনীয় পরিবর্তনের ফলে সারা দেশ এখন কানেক্টেড। এ ছাড়া টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট-ব্যবস্থা সারা বিশ্বকে হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে। সে ক্ষেত্রে প্রত্যন্ত জেলা বলতে কার্যত কিছু থাকছে না। তাই এখানেও ১০ শতাংশ কোটা রাখা ভিত্তিহীন। 

৪. কোটা সংস্কারের পর বিভিন্ন কোটায় উপযুক্ত বা ন্যূনতম যোগ্যতাসম্পন্ন কাউকে না পাওয়া গেলে সেই জায়গাগুলোতে মেধার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিয়োগ বাস্তবায়ন করা আবশ্যক। 

৫. একটি বিশেষ কোটাকে যাতে কোনো ব্যক্তি তার জীবনের ধাপে ধাপে সুবিধাভোগের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে না পারে, সে জন্য প্রশাসনের সঠিক অবকাঠামো গঠন করা আবশ্যক। 

৬. কালের বিবর্তনে বাংলাদেশ এখন স্মার্ট-আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশ থেকে প্রতিনিয়ত মেধাবীরা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নিজেদের সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়ে আসছেন। তার মানে, মেধা ও মননের দিক দিয়ে দেশ অনেকাংশে এগিয়ে গেছে। ফলে আগামীর বাংলাদেশের কান্ডারি হবেন দেশের মেধাবীরা। সে জন্য মেধার সর্বাত্মক সুযোগ বজায় রাখা কাম্য। তাই মেধাই হোক সবচেয়ে বড় কোটা। এতে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গঠনে দেশ খুব দ্রুত এগিয়ে যাবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। 

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, দেশের সর্বস্তরে কোটা সংস্কারবিষয়ক যেসব আন্দোলন হচ্ছে, তা অত্যন্ত যৌক্তিক। আমরা বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে সর্বাত্মকভাবে একাত্মতা ও সংহতি প্রকাশ করছি এবং মহামান্য আদালতের প্রতি মেধার মূল্যায়নকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবির পক্ষে অতি দ্রুত রায় প্রদানের অনুরোধ জানাচ্ছি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চকরিয়া থানার ওসিকে প্রত্যাহারের নির্দেশ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার

হোয়াইট হাউসে মধ্যাহ্নভোজের আগেই বের হয়ে যেতে বলা হয় জেলেনস্কিকে

‘আমাদের অনুমতি ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার করলে থানা ঘেরাও করব’, সরকারি কর্মকর্তার বক্তব্য ভাইরাল

এনসিপির কর্মীদের ঢাকায় আনতে সরকারের বাস রিকুইজিশন, সমালোচনার ঝড়

সিরিয়ায় রাশিয়ার ঘাঁটি রাখতে যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েলের তদবির

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত