Ajker Patrika

ট্যাক্স দিতে কাউকে সিটি করপোরেশনে যেতে হবে না: মেয়র আতিক

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১১ জুন ২০২২, ১৬: ২৬
ট্যাক্স দিতে কাউকে সিটি করপোরেশনে যেতে হবে না: মেয়র আতিক

ট্যাক্স দিতে আর কাউকে সিটি করপোরেশনে যেতে হবে না বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘সব ধরনের ট্যাক্স অনলাইনে দেওয়া যাবে। এ ব্যবস্থা আমরা করেছি। তাই আপনারা অনলাইনে ট্যাক্স দেবেন।’

আজ শনিবার বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। ‘নগরে নিম্নবিত্তের আবাসন-বাস্তবতা ও করণীয়’—শীর্ষক সেমিনারটিতে সংশ্লিষ্ট তিনটি গবেষণার ফলাফল প্রকাশ ও পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় করা হয়।

নিম্নবিত্তের আবাসন প্রসঙ্গে মেয়র আতিক বলেন, ‘এখানে গবেষণার মাধ্যমে নিম্নবিত্তের আবাসনের জন্য যে ধরনের প্রকল্প তুলে ধরা হয়েছে, তা আমরা পাইলটিংয়ের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করব। প্রথমে আমরা বিহারি পল্লিতে পাইলট প্রকল্প হিসেবে এটা বাস্তবায়ন করব।’

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঢাকায় প্রতিদিন ২ হাজার নতুন মানুষ আসছে জানিয়ে মেয়র বলেন, ‘এদের আবাসন দেওয়া একটা চ্যালেঞ্জ। ২০৫০ সালে দেশের ৭০ ভাগ লোক শহরে চলে আসবে। এ বিষয়টি আমাদের এখনই ভাবতে হবে।’ এ সময় গবেষণার মাধ্যমে ঢাকা শহরকে সুন্দর করে তুলতে বুয়েটের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান মেয়র।

সেমিনারে উপস্থাপিত গবেষণার ফলাফলে উঠে আসে, ঢাকায় ক্রমাগত বস্তিবাসীর সংখ্যা বাড়ছে। একই সঙ্গে পরিকল্পিত আবাসন, স্যানিটেশন এবং পানি ব্যবস্থাপনার অভাবে নিম্ন আয়ের এসব মানুষেরা মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। বাংলাদেশের ৬ শতাংশের বেশি শহুরে মানুষ বস্তিতে বাস করে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, নিম্নবিত্ত এসব মানুষের আবাসন বিবেচনায় না নিলে কোনো ধরনের উন্নয়নই টেকসই হবে না।

গবেষণায় ডিএনসিসির ১০২টি এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৭টি বস্তিকে কেস স্টাডি ধরে বলা হয়, অধিকাংশ বস্তিই গড়ে ওঠে খাল, লেক অথবা নদীকেন্দ্রিক এলাকায়। ঢাকায় প্রতি বর্গকিলোমিটারে যেখানে ৪৭ হাজার মানুষের বসবাস, সেখানে এসব বস্তিতে প্রতি বর্গকিলোমিটারে আড়াই লাখ মানুষ বাস করে।

লো-ইনকাম হাউজিং প্রসঙ্গে গবেষণায় উঠে আসে, বস্তি এবং নিম্ন আয়ের মানুষেরা তাঁদের আবাসনসংক্রান্ত মৌলিক অধিকারগুলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাঁদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে বৈশ্বিক এবং দেশীয় সংস্থাগুলোর যে গাইডলাইন আছে, তা মেনে সহনীয় হাউজিং পলিসি গড়ে তুলতে হবে।

ডিএসসিসির ৫০ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত ঢাকা ম্যাস কলোনি বস্তিকে নিম্ন আয়ের মানুষদের উন্নত আবাসন হিসেবে গড়ে তোলার সুপারিশ করে গবেষণায় বলা হয়, ঢাকার যেকোনো বস্তিকে সুষ্ঠু পরিকল্পনার আওতায় নিয়ে এলে সেখানে উন্নত আবাসন এবং তাঁদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব।

বুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সত্য প্রসাদ মজুমদারের সভাপতিত্বে সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন বুয়েটের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল জাব্বার খান এবং পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সচিব মামুন আল রশীদ। 

সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম।

সেমিনারে উপস্থাপিত গবেষণার ওপর আলোচনা করেন রাজউক চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞা, নগর উন্নয়ন অধিদপ্তরের পরিচালক ড. খুরশিদ জাবিন হোসেন, স্থাপত্য অধিদপ্তরের প্রধান স্থপতি মীর মনজুরুর রহমান প্রমুখ।

রাজউক চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞা বলেন, ‘আমরা এমডিজি অর্জন করেছি, এসডিজি অর্জনে রাষ্ট্র কাজ করে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে নিম্নবিত্তের আবাসন নিশ্চিত করতে রাষ্ট্র কাজ করতে বাধ্য। বাংলাদেশকে কল্যাণ রাষ্ট্র বানাতে হলে অবশ্যই নিম্নবিত্তের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রীর আবাসনের কথা উল্লেখ করে আনিছুর রহমান বলেন, ‘গ্রামীণ নিম্নবিত্তের জন্য আবাসন নিশ্চিত করা হয়েছে। এখন শহুরে নিম্নবিত্তের জন্যও বিভিন্ন প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে।’

বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) বাস্তবায়ন হলে নিম্নবিত্তের আবাসন সংকট নিরসন হবে জানিয়ে রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, ‘ড্যাপে আমরা সব শ্রেণির মানুষের মৌলিক অধিকারের বিষয় রেখেছি। ড্যাপ বাস্তবায়ন হলে এ সমস্যা ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণে আসবে।’ এ সময় ডাউন পেমেন্ট ছাড়া নিম্নবিত্তের জন্য আবাসন দিতে ডেভেলপারদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে বুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক সত্য প্রসাদ সাহা বলেন, ‘একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ গবেষণার মাধ্যমে রাষ্ট্রকে নতুন চিন্তা প্রদান করা। বুয়েট এ কাজ করতে পেরে গর্বিত।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত