Ajker Patrika

মশার অজুহাতে পুকুর ভরাট!

নাঈমুল হাসান, টঙ্গী
আপডেট : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১২: ৪৯
মশার অজুহাতে পুকুর ভরাট!

গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গীতে মশার প্রজনন হচ্ছে এমন অজুহাতে প্রচলিত আইন ভেঙে পুরোনো একটি পুকুর ভরাটের অভিযোগ উঠেছে। প্রথমে কয়েক দিন রাতের আঁধারে, পরে গতকাল শুক্রবার থেকে প্রকাশ্যে দিনের বেলায় টঙ্গীর সাতাইশ দাঁড়াইল এলাকার ওই পুকুর ভরাটের কাজ করা হয়।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, মহানগরীর দাঁড়াইলের ১ একর ৩ শতাংশ জমিতে একটি পুকুর রয়েছে। এটি তৎকালীন টঙ্গী পৌরসভার নিজস্ব সম্পত্তি থাকাকালে লিজ নেন স্থানীয় বাসিন্দা হোসেন আলী। সেখানে মাছ চাষ করতেন তিনি। বর্তমানে এটি সিটি করপোরেশনের মালিকানায় চলে গেছে। সর্বশেষ লিজের মেয়াদ দুই বছর শেষ না হতেই স্থানীয় প্রভাবশালীরা তাঁকে উঠিয়ে দেন। এর পর থেকেই জলাশয়ের একাংশ মাটি দিয়ে ভরাট করে কবরস্থান তৈরি করা হয়েছে। বাকি অংশে মাটি ভরাটের কাজ চলছে। প্রভাবশালী মহলের দাবি, এটি স্থানীয়দের ঈদগাহ মাঠ হিসেবে তৈরি করা হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কয়েক দিন আগে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম এলাকার রাস্তার উন্নয়নকাজ পরিদর্শন করতে এলে স্থানীয় কয়েকজন জলাশয়টি ভরাটের অনুমতি চান। এরপরই দুই দিন রাতের বেলায় এবং গতকাল শুক্রবার সকাল থেকেই মাটি দিয়ে জলাশয়টি ভরাটের কাজ করা হয়।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৫২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিল আব্দুল আলীম মোল্লা বলেন, ‘এটি সিটি করপোরেশনের সম্পত্তি। সিটি করপোরেশনের প্রয়োজনে ভরাট করা হচ্ছে।’ 

দাঁড়াইল কেন্দ্রীয় কবরস্থান ও ঈদগাহ কমিটির সভাপতি আকবর আলী বলেন, ‘এলাকাবাসীর জন্য একটি কবরস্থান ও একটি ঈদগাহ মাঠ প্রয়োজন। পৌরসভা থাকাকালে এই জলাশয় ভরাট করে কবরস্থান ও ঈদগাহ মাঠ তৈরির জন্য পৌর মেয়র আমাদের মৌখিক অনুমোদন দিয়েছিলেন। বর্তমানে আমরা স্থানীয় কাউন্সিলর ও ভূমি মন্ত্রণালয়ে লিখিত আবেদন জানিয়েছি।’ আকবর আলী আরও বলেন, জলাশয়টি ভরাটের বেশির ভাগ কাজ শেষ হয়েছে।

উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা (টঙ্গী) রোমান বলেন, জলাশয়ের ১ একর ৩ শতাংশ জমিতে পুরোনো পুকুরটি আগে ইউনিয়ন পরিষদের ছিল, যা পরে পৌরসভার এবং বর্তমানে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের। তবে জলাশয় ভরাট প্রচলিত আইনে কঠোরভাবে নিষেধ রয়েছে।

পরিবেশবিদ ও বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মো. মনির হোসেন বলেন, ‘জলাধার সংরক্ষণ আইন, ২০০০ অনুয়ায়ী পুকুর, খাল ও বিলসহ কোনো ধরনের জলাধারের শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না। এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তা ছাড়া এমনিতেই আমাদের জলাধার কমে যাচ্ছে। পরিবেশের প্রয়োজনে আমাদের জলাধার রক্ষা করা প্রয়োজন। তা না হলে জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়বে। আমাদের স্বার্থে, নগরবাসীর স্বার্থে, জীববৈচিত্র্য রক্ষার স্বার্থে জলাধার বা পুকুর রক্ষা করা প্রয়োজন। তা ছাড়া জলাধার বা পুকুর, খাল-বিল—এসব ভরাট না করতে উচ্চ আদালত ও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে। তাই আমরা টঙ্গীর আলোচিত পুকুরটি না ভরাটের দাবি জানাচ্ছি।’

গাজীপুর জজকোর্টের আইনজীবী রিপন শাহ বলেন, ‘বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫-এর (সংশোধিত ২০১০) ৬(ঙ) অনুযায়ী, জাতীয় অপরিহার্য স্বার্থ ছাড়া কোনো ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সরকারি বা আধা সরকারি এমনকি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের বা ব্যক্তিমালিকানাধীন পুকুর ভরাট না করার বিধান রয়েছে। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন (২০১০ সালে সংশোধিত) অনুযায়ী, যেকোনো ধরনের জলাধার বা পুকুর ভরাট সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং ভরাটকারীর বিরুদ্ধে আইনের ৭ ধারায় প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য ও জীববৈচিত্র্য নষ্ট করে পরিবেশগত ক্ষতি ও বিধ্বংসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের বিধান রয়েছে।’

টঙ্গী ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার ইকবাল হাসান বলেন, ‘টঙ্গী একটি শিল্পনগরী। এ এলাকায় প্রায়ই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। নগরীর ভেতরে ও বাইরে পানি সংরক্ষণের জায়গাগুলো ভরাট না করাই উত্তম। নগরীর বিভিন্ন স্থানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে এসব জলাশয় থেকে পানি নিয়েই আগুন নেভাতে হয়।’

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাহী কর্মকর্তা (টঙ্গী অঞ্চল-১) এস এম সোহরাব হোসেন বলেন, ‘জলাশয়টি সিটি করপোরেশনের নিজস্ব সম্পত্তি। জলাশয়ের পানিতে মশার প্রজনন হচ্ছে, তাই সিটি করপোরেশন ভরাট করছে। টঙ্গীর মরকুন এলাকায় সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে কবরস্থান রয়েছে। সিটি করপোরেশনের অনুমতি ছাড়া কবরস্থান তৈরির সুযোগ নেই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইতিহাস দরজায় কড়া নেড়ে বলছে, ১৯৭১ থেকে পাকিস্তান কি শেখেনি কিছুই

‘আমাদের মরদেহ বাড়িতে নিয়ো না’

কৃষি ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের খামারবাড়ি অবরোধের ঘোষণা

মারধর করে ছাত্রলীগ কর্মীর পিঠে পাড়া দিয়ে অটোরিকশায় শহর ঘোরাল ছাত্রদল, সঙ্গে উচ্চ স্বরে গান

যশোরে আত্মগোপনে থাকা আ.লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বাড়িতে পুলিশের অভিযান

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত