Ajker Patrika

সোহাগ হত্যা: মূল তিনজনকে আসামি না করার অভিযোগ নিয়ে যা বললেন ডিএমপি কমিশনার

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন। ছবি: আজকের পত্রিকা
ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন। ছবি: আজকের পত্রিকা

মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ব্যবসায়ী সোহাগ হত্যার মামলায় এজাহার থেকে মূল তিনজনকে বাদ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন যুবদলের সভাপতি মোনায়েম মুন্না। এই বাদ দেওয়াকে ‘রহস্যজনক’ বলে মন্তব্য করেন তিনি। গত ১২ জুন বিএনপির তিনটি সহযোগী সংগঠন—জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল এবং ছাত্রদল আয়োজিত যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন যুবদল সভাপতি।

তবে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী ‎এমন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, এই ঘটনার এজাহার নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়ানো হয়েছে।

‎আজ বুধবার বেলা ১২টায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নে জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, এই ঘটনার এজাহার নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়ানো হয়েছে। প্রকৃত ঘটনা হলো, মামলার এজাহার দায়েরের জন্য প্রথমে সোহাগের সাবেক স্ত্রী লাকি আক্তার থানায় আসেন। কিছুক্ষণের মধ্যে ভুক্তভোগীর সৎ ভাই রনিও থানায় আসেন। তাঁরা নিজেদের মধ্যে শলাপরামর্শ করে ২৩ জনকে আসামি করে একটি খসড়া এজাহার প্রস্তুত করেন। এর মধ্যে ভুক্তভোগীর আপন বড় বোন মঞ্জু আরা বেগম থানায় এসে এজাহার দাখিলের আগ্রহ প্রকাশ করেন। তখন তাঁর সামনে আগের খসড়া এজাহার উপস্থাপন করা হয়। তখন বাদীর মেয়ে ওই খসড়া এজাহারের ছবি তুলে রাখে। পরবর্তীতে সেটিই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভুক্তভোগীর বোন ওই খসড়া এজাহার থেকে ৫ জনের নাম বাদ দিয়ে নতুন করে আরও একজনের নাম সংযোজন করে মোট ১৯ জনকে আসামি করে এজাহার দাখিল করেন।

ঘটনার বর্ণনায় ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, গত ৯ জুলাই বিকেল আনুমানিক ৫টা ৪০ মিনিটের দিকে রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ৩ নং গেটের সামনে পাকা রাস্তার ওপর কতিপয় দুর্বৃত্ত দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে প্রকাশ্যে নৃশংসভাবে হত্যা করে। আমরা এই ঘটনায় মর্মাহত ও নিহতের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।

‎তিনি আরও বলেন, ঘটনার সময় ৯৯৯-এর মাধ্যমে চকবাজার থানার ওসি সংবাদ পাওয়ার পর বিষয়টি চকবাজার পুলিশ ফাঁড়িকে অবহিত করেন। ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক সরোয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছান। সেখানে গিয়ে পুলিশ দেখতে পায়, অভিযুক্তরা একটি মবের পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছে। ‘চাঁদাবাজদের জায়গা নেই, ব্যবসায়ীদের ভয় নেই’ এমন স্লোগান দিচ্ছে। এ অবস্থায় চকবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সরোয়ার ঘটনাস্থল থেকে সন্দেহভাজন মাহমুদুল হাসান মহিন ও ঘটনাস্থলের পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে রবিন নামের অপর একজনকে গ্রেপ্তার করে। পরে প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা ও ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আরও সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই ঘটনায় মোট ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সোহাগকে একাধিকবার কংক্রিটের বোল্ডার দিয়ে আঘাত করা মো. রিজওয়ান উদ্দিন অভিকে পটুয়াখালী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এ নিয়ে এই মামলায় নয়জনকে গ্রেপ্তার করা হলো। গ্রেপ্তার আসামিদের কয়েকজন যুবদল ও ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। অবশ্য তাঁদের সংগঠন থেকে বহিষ্কার করার কথা জানানো হয়েছে।

অভিকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, সোহাগকে কংক্রিটের বোল্ডার দিয়ে আঘাতকারী ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা গেলেও সে সময় তাঁর পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি। পরবর্তীতে পুলিশের বিশেষ টিমের সহায়তায় তাঁর পরিচয় নিশ্চিত হয়ে অবস্থান চিহ্নিত করে ১৫ জুলাই পটুয়াখালী জেলা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তাঁর নাম মো. রেজওয়ান উদ্দিন অভি। বাবার নাম মনোরঞ্জন বসু, মায়ের নাম বিউটি দেব মিলা। তিনি ধর্মান্তরিত মুসলিম। এই ঘটনায় কংক্রিটের বোল্ডার দিয়ে আঘাতকারী দুইজনসহ মোট ৯ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।

এদিকে সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস এন মো. নজরুল ইসলাম জানান, ‎পল্লী বিদ্যুতের চোরাই তার কেনাবেচা নিয়ে ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বে পরিচিতরাই ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ সোহাগকে হত্যা করে।

‎সাংবাদিকদের ‎এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সোহাগ বিগত সরকারের সময় সাবেক এমপি হাজী সেলিমে ভাগনে পিল্লু কমিশনারের ছত্রচ্ছায়ায় পল্লী বিদ্যুতের চোরাই তারের ব্যবসা করতেন। চোরাই তার কিনে অ্যালুমিনিয়ামের ফ্যাক্টরিতে বিক্রি করতেন। ১৭ বছর ধরে সোহাগ এই কাজ করেছেন। ৫ আগস্টের পরে ভোল পাল্টে অন্য রাজনৈতিক দলের দিকে আসেন। এখানে আরেকটি গ্রুপ এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে গেছে। তখন ব্যবসায়িক একটি বিভেদ তৈরি হয় তাদের মধ্যে। তারা উভয় পক্ষই পূর্বপরিচিত। ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব ও কোন্দল থেকে এই হত্যাকাণ্ড।

‎এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে রাজনৈতিক কোনো উদ্দেশ্য ছিল কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, এটা তাদের ব্যক্তিগত ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব। এই দ্বন্দ্ব থেকে হত্যাকাণ্ডটি সংগঠিত হয়েছে। নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা সরকারকে বেকায়দায় ফেলানো বা অন্য কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে এই হত্যাকাণ্ড হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারে হামলা-ভাঙচুর

জয়া আহসানকে নিয়ে খেপেছেন তৃণমূল নেত্রী, টালিউডে বাংলাদেশিদের নিষিদ্ধের দাবি

এনবিআর চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কুৎসা, বরখাস্ত নিরাপত্তাপ্রহরী

অবৈধ অভিবাসী বিষয়ে কঠোর মালয়েশিয়া, ফেরত পাঠাচ্ছে বিমানবন্দর থেকেই

এনসিপির পদযাত্রা ঘিরে গোপালগঞ্জে পুলিশের গাড়িতে হামলা, অগ্নিসংযোগ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত