Ajker Patrika

নামে মিল থাকায় বিনা দোষে জেল খাটছেন রাকিব 

মো. রিয়াদ হোসাইন, কালীগঞ্জ (গাজীপুর)
আপডেট : ০১ ডিসেম্বর ২০২১, ১৪: ২০
নামে মিল থাকায় বিনা দোষে জেল খাটছেন রাকিব 

গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার নাগরী ইউনিয়নের রাথুরা গ্রামে বাসিন্দা রাকিব (২৫)। মাদকের একটি মিথ্যা মামলায় গত ২২ দিন ধরে তিনি জেলহাজতে। আজ বুধবার সকালে এমন অভিযোগ করেন রাকিবের বাবা-মা ও তাঁর গ্রামবাসী। 

রাকিবের মা রাহিমা বেগম অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার ছেলে স্থানীয় বিভিন্ন পোলট্রি ফার্ম থেকে মুরগি নিয়ে উত্তরায় দোকানে দোকানে সাপ্লাই দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। কিন্তু মিথ্যা মামলায় ছেলেকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে। এখন আমার ছেলে ওই মামলায় জেলখানায়। আমার ছেলে গ্রামে কারও কোনো ক্ষতি করে নাই। তবে কেন আমার ছেলেকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হলো? আমার ছেলের মুক্তি চাই।’ 

রাকিবের বাবা শারীরিক প্রতিবন্ধী আক্তার হোসেন (৫০) কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘সে আমার একমাত্র ছেলে। নিজের সর্বস্ব দিয়ে ছেলেকে লেখাপড়া করাচ্ছি। এখন সে লেখাপড়ার পাশাপাশি পিকআপ দিয়ে পোলট্রি ফার্মের ব্যবসা করে।’ 

মামলার বরাত দিয়ে আক্তার হোসেন জানান, চলতি বছরের ২৭ আগস্ট গাজীপুর জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ২০৩টি ক্যান বিয়ারসহ উপজেলার নাগরী ইউনিয়নের রাথুরা গ্রামের সাইজউদ্দিনের ছেলে শহিদুল্লাহকে (৩২) আটক করে। পরে পুলিশ ধৃত আসামি শহিদুল্লাহর জবানবন্দি অনুযায়ী ওই ঘটনায় পরদিন ২৮ আগস্ট ডিবি পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. ওবায়দুর রহমান বাদী হয়ে শহিদুল্লাহ ও তাঁর ছোট ভাই আশরাফুলসহ রাকিব ও রুবেলের নাম উল্লেখ করে কালীগঞ্জ থানায় একটি মাদক মামলা (নং ৯) করেন। তবে মামলায় রাকিব ও রুবেলের বাবার নাম অজ্ঞাত ছিল। ওই মামলায় ডিবি পুলিশ চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ার আগে আসামিদের পূর্ণাঙ্গ নাম ঠিকানা যাচাই-বাছাই করার জন্য কালীগঞ্জ থানায় একটি অনুসন্ধান রিপোর্ট পাঠায়। পরে কালীগঞ্জ থানার পক্ষে ওই অনুসন্ধান রিপোর্ট নিয়েউলুখোলা পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপপরিদর্শক মুকুল তালুকদার তদন্ত করে রাকিবের বাবার নাম আক্তার উল্লেখ করে পাঠিয়ে দেন এবং মামলার আরেক আসামি রুবেলকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

আক্তার হোসেন বলেন, ‘ডিসেম্বর মাসের শুরুর দিকে আমরা জানতে পারি আমার ছেলে ওই মামলার আসামি। পরে সরল মনে ছেলেকে নিয়ে আমরা আদালতে আত্মসমর্পণ করতে গেলে আদালত আমার ছেলেকে জেলে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এখন সে ২২ দিন ধরে জেলে আছে। আমি আমার নির্দোষ ছেলের মুক্তি চাই।’ 

ওই মামলার ২ নম্বর আসামি রাথুরা গ্রামের সাইজউদ্দিনের ছেলে মো. আশরাফুল মুঠোফোনে বলেন, ‘আসলে ওই দিন আমাদের সঙ্গে এই ঘটনায় আক্তার কাকার ছেলে রাকিব জড়িত না। আমাদের সঙ্গে যে রাকিব জড়িত ছিল তিনি আমার বন্ধু। তাঁর বাড়ি পাড়াবর্তা (নাওটান) গ্রামে এবং বাবার নাম তাইজউদ্দিন তাজু। 

গলান বাজারের ব্যবসায়ী ও রাথুরা গ্রামের বাসিন্দা মহসিন শেখ বলেন, ‘রাকিব আসলে এই ধরনের ছেলে না। তিনি মাদক ব্যবসা তো দূরের কথা মাদক সেবনও করে না। আমরা জানি সে পিকআপ দিয়ে উত্তরা এলাকায় পোলট্রি মুরগির ব্যবসা করেন।’ একই কথা বলেন ওই গ্রামের বাসিন্দা আরেক মুদি দোকানি রাশেদ মিয়া। 

রাথুরা দক্ষিণপাড়া জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা জালাল হোসেন জানান, ‘আমি ১১ বছর ধরে এই মসজিদে ইমামের দায়িত্ব পালন করছি। রাকিবের নামে এই ধরনের কথা কখনো শুনিনি। তিনি খুবই ভদ্র ও শান্ত ছেলে। রাস্তা-ঘাটে মুরব্বিদের দেখলে সালাম-কালাম দেয়। একই কথা বলেন রাথুরা গ্রামের সুরুজ মিয়ার স্ত্রী হালিমা বেগম। 

ওই গ্রামের বাসিন্দা রাথুরা মোল্লাবাড়ি জামে মসজিদের সহসভাপতি ষাটোর্ধ্ব হাজী আব্দুল বাতেন জানান, ছেলেটি খুব ভালো। নামের সঙ্গে মিল থাকায় বিনা দোষে জেল খাটছে। জেলে থাকায় তাঁর ব্যবসায়িক সাইডগুলো নষ্ট হচ্ছে। একই কথা বলেন ওই গ্রামের পঞ্চাশোর্ধ্ব জালাল মিয়া, সানাউল্লাহ, ষাটোর্ধ্ব মাধু মিয়া, পঁচিশোর্ধ হাবিবুর রহমান ও পারাবার্তা গ্রামের রাকিব মিয়া। 

কালীগঞ্জ থানার পক্ষে আসামিদের নাম ঠিকানা যাচাই-বাছাইকারী পুলিশ কর্মকর্তা মুকুল তালুকদার বর্তমানে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি) কোনাবাড়ী থানায় কর্মরত আছেন। তিনি মুঠোফোনে বলেন, ‘আমি মাত্র এক মাস কালীগঞ্জ থানার উলুখোলা ফাঁড়ির অধীনে কাজ করেছি। আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয়দের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নাম ঠিকানা পাঠিয়েছি।’ 

মামলার বাদী গাজীপুর জেলা গোয়েন্দা পুলিশের এসআই মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, ‘আমি মামলায় ৪ জনের নাম দিলেও শহিদুল্লাহ এবং আশরাফুলের বাবার নাম উল্লেখ্য করেছি। তবে রাকিব ও রুবেলের বাবার নাম জানতে না পারায় অজ্ঞাত রেখেছি। পরে ওই মামলা ডিবি পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. বদিউজ্জামান তদন্ত করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছেন।’ 

এ ব্যাপারে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই বদিউজ্জামান বলেন, ‘এখানে আমার কিছু করার নেই। আমরা ডিবি পুলিশের পক্ষ থেকে অনুসন্ধান রিপোর্ট পাঠিয়ে কালীগঞ্জ থানা-পুলিশের সহায়তায় পূর্ণাঙ্গ নাম নিয়েছি এবং মামলায় রুবেল নামে এক আসামির সম্পৃক্ততা না থাকায় তাঁকে অব্যাহতি দিয়ে মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছি।’ 

কালীগঞ্জ থানার অফিসার্স ইনচার্জ মো. আনিসুর রহমান বলেন, ‘আসলে যাকে তদন্ত করতে পাঠাই, তিনি তদন্ত করে দিলে আমি শুধু স্বাক্ষর করি। আমার পক্ষে যাচাই-বাছাই করার কোনো সুযোগ নেই। তবে এই ধরনের কোনো ঘটনা ঘটে থাকলে সেটা দুঃখজনক।’ 

গাজীপুর জেলা গোয়েন্দা পুলিশের অফিসার্স ইনচার্জ মো. আমির হোসেন বলেন, ‘আসলে আমরা অনুসন্ধান রিপোর্টের মাধ্যমে চূড়ান্ত প্রতিবেদন পাঠিয়েছি। অজ্ঞাত হিসেবে নাম দেওয়ার পর কালীগঞ্জ থানা-পুলিশ বাবার নাম উল্লেখ্য করে আমাদের প্রতিবেদন পাঠিয়েছে। ওই সময় বিষয়টি নিয়ে আমার সন্দেহ হলে আমি তদন্ত কর্মকর্তাকে বাই ফোনে ওই পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে চূড়ান্ত করতে বলি। পরে তিনি ফোনে ওভার কনফার্ম করেন। তবে এই ধরনের ঘটনা ঘটে থাকলে এটা অনাকাঙ্ক্ষিত।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি কর্মচারীদের পদ-পদবি-বেতন কাঠামো নিয়ে পাল্টা অবস্থানে দুই পক্ষ

সেনানিবাস ঘিরে ‘নাশকতার পরিকল্পনা’, বরখাস্ত সৈনিকসহ গ্রেপ্তার ৩

বাংলাদেশ এড়িয়ে সমুদ্রপথে সেভেন সিস্টার্সকে যুক্ত করতে নতুন প্রকল্প ভারতের

থাইল্যান্ডে পর্যটন ভিসা পেতে আর্থিক সক্ষমতার প্রমাণ দিতে হবে

দক্ষিণপন্থীদের কবজায় বাংলাদেশের রাজনীতি: বদরুদ্দীন উমর

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত