Ajker Patrika

ছিনতাই যেখানে নিত্য ঘটনা

মোস্তাকিম ফারুকী, মিটফোর্ড
Thumbnail image

গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালী থেকে গতকাল লঞ্চে করে ঢাকায় ফেরেন কামরাঙ্গীরচরের বাসিন্দা ইলিয়াস। সকালে ব্যায়াম হবে, পাশাপাশি রিকশা ভাড়াও বেঁচে যাবে, এমন চিন্তা থেকে ভোরে লঞ্চ সদরঘাটে ভিড়লে তিনি নেমে হাঁটা শুরু করেন। কিন্তু রিকশা ভাড়া বাঁচাতে গিয়ে তাঁকে খোয়াতে হয়েছে সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোন, মানিব্যাগ। বাবুবাজার ব্রিজ পার হওয়ার পর তাঁর পথ আটকে সব ছিনিয়ে নিয়ে যায় তিন ব্যক্তি। বুঝে ওঠার আগেই নৌকা করে দ্রুত চলে যায় ছিনতাইকারীরা।

রাজধানীর বাবুবাজার ব্রিজের নিচ থেকে শুরু করে মিটফোর্ড বালুরঘাট পর্যন্ত এলাকায় প্রায় প্রতিদিনই এভাবে ঘটছে ছিনতাই, ডাকাতির মতো ঘটনা। আবার কখনো কখনো মারাত্মক দুর্ঘটনাসহ ঘটছে প্রাণহানিও।

সারা দেশের ভাঙারি ব্যবসায়ীদের মূল কেন্দ্রবিন্দু রাজধানীর মিটফোর্ড এলাকা। ট্রাক বোঝাই করে রাত ৮টার থেকে ভোর রাত পর্যন্ত নিয়মিত ট্রাক এসে লাইন ধরে এখানে। দূর-দূরান্ত থেকে লঞ্চগুলোও ভোর রাতে সদরঘাটে ভেড়ে। লালবাগ, কামরাঙ্গীরচরসহ আশপাশের এলাকার মানুষ বাসায় ফেরার রাস্তা হিসেবে ব্যবহার করেন বুড়িগঙ্গা নদীর পাশে বেড়িবাঁধের রাস্তা। আর সেই সুযোগে নিরিবিলি, অন্ধকার রাস্তায় ঘটছে ছিনতাই-ডাকাতির ঘটনা।

গত ১৬ সেপ্টেম্বর ভোরে বালুঘাট বেড়িবাঁধে বিদেশফেরত এক যাত্রীর কাছ থেকে মোবাইল, টাকা সবকিছু কেড়ে নেয় ছিনতাইকারীরা। ভুক্তভোগীর চিৎকার শুনে আলমগীর ব্যাপারী ও আনোয়ার হোসেন নামে দুই শ্রমিক গিয়ে ছিনতাইকারীদের আটকানোর চেষ্টা করলে তাঁদের ছুরিকাঘাত করে দুর্বৃত্তরা। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আলমগীর।

মিটফোর্ড বালুরঘাটে নিয়মিত ডাকাতিএদিকে এ ঘটনার পর পুলিশ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয় শ্রমিকদের। মুজ্জাফর নামে এক শ্রমিক সরদার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যদি আমাদের পক্ষ থেকে ডাকাতদের কাউকে হত্যা করা হতো, তাহলে পরের দিনই আমাদের কাজ বন্ধ করে এলাকাছাড়া করত, জেলে নিয়ে রাখত। অথচ আমাদের এক ভাইকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে, তা নিয়ে প্রশাসনের কোনো মাথাব্যথা নেই। সেদিনের ছিনতাই ও আলমগীর ব্যাপারীকে হত্যার ঘটনার পরও প্রতিদিন ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে বলে জানান তিনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে অন্য এক সরদার বলেন, রাতে সারা দেশ থেকে যে ভাঙারির গাড়িগুলো আসে, প্রতিটি গাড়িই ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েছে। আর রাতে যে লঞ্চের যাত্রীরা আসেন, সবাইকে হয়রানির শিকার হতে হয়। হারাতে হয় সঙ্গে থাকা সব প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। এখানে রাতে পুলিশের টহল থাকে না বললেই চলে। আর যাঁরা গরিব, তাঁরাই রাত জেগে কুলির কাজ করেন। যাঁদের আর্থিক সমস্যা আছে, তাঁরাই হেঁটে চলাফেরা করেন এদিকে। অথচ এই গরিব মানুষগুলোকে নিয়মিত ডাকাতদের কবলে পড়ে সবকিছু হারাতে হচ্ছে। 
এসব অভিযোগের বিষয়ে কোতোয়ালি থানার ওসি মিজানুর বলেন, `শ্রমিক হত্যার বিষয়টি সম্পর্কে আমরা অবগত। বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটতেই পারে, তবে সেটি কেরানীগঞ্জ মডেল থানার অন্তর্ভুক্ত। আমাদের অন্তর্ভুক্ত এলাকায় টহল জোরদার করা হয়েছে।’

বাবুবাজার ব্রিজের নিচে ছিনতাইয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, `টহল গাড়ি এক প্রান্তে থাকলে অন্য প্রান্তে এমন ঘটনা ঘটছে। আর ডাকাতরা খুব ধূর্ত, ছিনতাই করে দ্রুত নৌকা নিয়ে পালিয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে নৌ-পুলিশকে আরও তৎপর হতে হবে।’

সদরঘাট থানার উপপরিদর্শক শহিদুল বলেন, ‘এটা আমাদের এলাকায় ছিনতাইয়ে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা। আমরা আরও কৌশলীভাবে কাজ করার পরিকল্পনা করছি, টহল পুলিশ আরও বাড়ানোর ব্যবস্থা করছি। তবে মৃত্যুর ঘটনা যেখানে ঘটেছে, সেটি কামরাঙ্গীরচর নৌ-পুলিশের অন্তর্ভুক্ত এলাকা।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নারীদের খেলায় আর নাক গলাবে না, দেশ ও বিশ্ববাসীর কাছে ক্ষমা চাইল ভাঙচুরকারীরা

বিয়ে করলেন সারজিস আলম

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে লড়ছে শ্রীলঙ্কা, ভারত-ইংল্যান্ড ম্যাচ কোথায় দেখবেন

ইতালি নেওয়ার কথা বলে লিবিয়ায় ফরিদপুরের ২ জনকে গুলি করে হত্যা

সাবেক শিক্ষার্থীর প্রাইভেট কারে ধাক্কা, জাবিতে ১২ বাস আটকে ক্ষতিপূরণ আদায় ছাত্রদলের

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত