Ajker Patrika

কাশফুলের হাতছানি

এম শহিদুল ইসলাম (বাসাইল) টাঙ্গাইল
কাশফুলের হাতছানি

এ কথা সবাই এক বাক্যে স্বীকার করবেন, বাংলাদেশের নদীর নামগুলো অসাধারণ। টাঙ্গাইলের বাসাইলে যে নদী, তার নাম ঝিনাই। এই ঝিনাই নদীর তীর আর বাসাইল-টাঙ্গাইল সড়কের বাসাইল কলেজ গেটের সামান্য পূর্ব-উত্তর দিকে যে বিস্তৃত মাঠ, তাতে বসেছে কাশফুলের মেলা। সাদা কাশফুলের এ মেলায় সকাল কিংবা বিকেলে লেগে থাকে উৎসব। তা হয়ে ওঠে কিশোর-কিশোরী থেকে শুরু করে সব বয়সের প্রকৃতিপ্রেমীর মিলনমেলা।

ঋতুবৈচিত্র্যের এ দেশে আষাঢ়ের বারিধারা, শরতের কাশফুল, শীতের শিশিরবিন্দুর মুক্তোদানা, কী নেই বাংলার রূপে? শরৎ মানেই প্রভাতের শিশিরভেজা শিউলি, সোনালি সূর্যের আলোয় দুর্বাদলে শিশিরকণার ঝলকানি, ঝিরিঝিরি বাতাসে দোল খাওয়া ধবধবে কাশবন, পদ্ম-শাপলা-শালুকে আচ্ছন্ন জলাভূমি। নদীর পাড়ে কিংবা জলাধারে ফোটে রকমারি কাশফুল। পাশাপাশি হাসনাহেনা, ছাতিম, জারুল ও মল্লিকার রূপ-গন্ধ মোহিত করে মানুষকে। এ সবই শরতের চিরকালীন রূপ।

শরতে এলোমেলো বাতাসে দোল খায় কাশফুল। সাদা মেঘের খুনসুটি আর দিগন্তজোড়া কাশফুলের বাতাসে দোল খাওয়া এক অপার্থিব জীবনের হাতছানি দেয়। এমনই মনকাড়া স্নিগ্ধ সাজে সেজে উঠেছে টাঙ্গাইলের বাসাইলের শরৎ প্রকৃতি।  প্রকৃতিপ্রেমীরা শরতের এই রূপের টানে মিশে যাচ্ছে প্রকৃতির মাঝে। কাশবনে এখন মানুষের আনাগোনা বেড়েছে। নির্মল বাতাসে শুভ্র সাদা কাশফুলের মন মাতানো বিকেলে স্থানীয় শিশু-কিশোর, পথচারী ও দর্শনার্থীরা মেতে উঠেছে আনন্দ উচ্ছ্বাসে।

স্থানীয় আলোকচিত্রী মিলন ইসলাম ছবি তুলছিলেন। নিজেই ব্যাখ্যা করলেন, কেন তিনি ছবি তুলতে এসেছেন:  ‘সাদা কাশফুল ও সবুজের পাশ দিয়ে চলার অনুভূতি অন্যরকম। কাশফুলের অপরূপ সৌন্দর্যে মনটা ভরে গেছে। তাই এখানে কাশফুলের সঙ্গে ছবি তোলার লোভ সামলাতে পারলাম না।’

শারমিন  আক্তার এসেছেন কাশফুল দেখতে। কথা বলতে গিয়ে যেন কাব্যিক হয়ে গেলেন। বললেন, ‘গোধূলির সময় মাঠজুড়ে সবুজের সমারোহ ও সাদা কাশফুল যখন বাতাসে নাচতে থাকে, তখন মনটা আনন্দে দুলে ওঠে।’

ভ্রমণপ্রিয় সুজন পারভেজ ও সজীব শুরুতেই বলে দেন, ‘মহামারি করোনা আমাদের সময়কে থমকে দিয়েছে। কিন্তু প্রকৃতি তো আর থেমে নেই। প্রকৃতি সেজেছে নতুন সাজে। তাই আমরাও ছুটে এসেছি এখানে।’

কৃষিবিদ সুনীল রায় স্বপন বলেন, ‘ঝকঝকে নীল আকাশ, ঝলমলে সূর্য, অফুরান প্রাণশক্তি এবং  শারদীয় দুর্গোৎসবের আমেজে শরতের বারতা নিয়ে ফুটেছে অজস্র কাশফুল। এখানে তাই শরতের পূর্ণ আমেজ পেতে দর্শনার্থীদের ভিড় ক্রমেই বাড়ছে।’

বিল ঝিল ভর্তি শাপলা ফুল, গাছে গাছে শেফালী, জুঁই, মালতী, টগর, কামিনী আর প্রকৃতিজুড়ে শরতের স্মারক কাশফুল যেন বরণ করে নিচ্ছে শরৎকে।
বাসাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী অলিদ ইসলাম বলেন, ‘কাশফুল প্রকৃতির সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয়। ভ্রমণপিপাসুদের চাহিদামতো নতুন নতুন বিনোদনকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের।’

শরৎ আসে মূলত মেঘ-রৌদ্রের লুকোচুরির ভেতর দিয়ে। কখনো বৃষ্টি, কখনো কাঠফাটা রোদ্দুর।শরতের নির্মল স্বচ্ছ জোৎস্না অন্য ঋতুতে মেলা ভার। বিস্তীর্ণ স্বচ্ছ জলরাশির ওপর ভেসে বেড়ানো ডিঙি নৌকার ওপরে নীলাকাশে পূর্ণিমার চাঁদ। সব মিলিয়ে শরতের এই রূপ দেখতে হলে আপনাকে অবশ্যই প্রকৃতির কাছে যেতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত