Ajker Patrika

শ্রম ভবনে দশম দিনে অবস্থান, স্মারকলিপি প্রদানে বাধা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
শ্রম ভবনে দশম দিনে অবস্থান, স্মারকলিপি প্রদানে বাধা

গাজীপুরের স্টাইল ক্রাফট লিমিটেড এবং ইয়ং ওয়ান লিমিটেডের শ্রমিকেরা ন্যায্য বেতনের দাবিতে টানা দশ দিন ধরে শ্রম ভবনের সামনে আন্দোলন করছেন। আজ বৃহস্পতিবার আন্দোলনের দশম দিনে বকেয়া ও আইনানুগ পাওনা পরিশোধের দাবিতে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করতে গেলে পুলিশ বাধা দেয়। 

শ্রমিকেরা জানান, প্রথমে শ্রম ভবনের সামনেই মিছিল করতে বাঁধা দেয় পুলিশ। পরবর্তীতে প্রেসক্লাবের সামনে গেলে পুলিশ চূড়ান্তভাবে বাঁধা দেয় ৷ এতে প্রেসক্লাবের সামনের রাস্তা অবরোধ করেন শ্রমিকেরা। পরবর্তীতে একটি প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়ে স্মারকলিপি দেয়। 

স্মারকলিপিতে বলা হয়, কারখানার ৪ হাজার ২৪৩ জন শ্রমিক-কর্মচারী প্রাপ্য মজুরি বঞ্চিত হয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এ জন্য বাধ্য হয়ে গত দশ দিন ধরে তাঁরা ঢাকার শ্রম ভবনের সামনে লাগাতার অবস্থান করছেন। মালিকপক্ষ ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে নানাভাবে বেতন ভাতা এবং ঈদ বোনাস না দিয়ে তাঁদের বঞ্চিত করেছে। বর্তমানে কারখানার শ্রমিকদের ছয় মাসের এবং কর্মচারীদের নয় মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। এ ছাড়া মালিকপক্ষ বেআইনিভাবে কারখানা বন্ধ করে দিয়ে শ্রমিক ও কর্মচারীদের বিপুল অঙ্কের পাওনা পরিশোধ করছে না। 

স্মারকলিপিতে শ্রমিকেরা আরও জানান, বিগত ৬ মাসের বেশি সময় ধরে তাঁরা বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি দপ্তর এবং মালিক সমিতির দ্বারে দ্বারে ঘুরেও সংকটের সুরাহা পাননি। এ সময় রাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গের উদ্যোগে কয়েকবার শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের বিষয়ে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। কিন্তু মালিক কখনোই কোন চুক্তি প্রতিপালন করেনি। 

গত ৫ সেপ্টেম্বর শ্রম প্রতিমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় সম্পাদিত ত্রিপক্ষীয় চুক্তি অবিলম্বে বাস্তবায়নের মাধ্যমে শ্রমিকদের সকল পাওনা পরিশোধের দাবি জানান তাঁরা। একই সঙ্গে বারবার চুক্তি ভঙ্গ করে শ্রমিকদের সীমাহীন হয়রানি করায় মালিক এবং দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান শ্রমিকেরা। এ ছাড়া প্রয়োজনে কোম্পানির সকল সম্পত্তি অধিগ্রহণ করে শ্রমিক-কর্মচারীদের ছয় মাসের বকেয়া বেতন এবং আইনানুগ সকল পাওনা নিষ্পত্তি করারও দাবি জানান তাঁরা। 

স্মারকলিপি প্রদানের পূর্বে শ্রম ভবনের সামনের সমাবেশে গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার বলেন, 'বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। ঘর ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, সন্তানদের শিক্ষা খরচ ও চিকিৎসা খরচ বেড়েছে। কিন্তু শ্রমিকেরা এখন যে বেতন পায় তাতে কোনোভাবেই জীবন চলে না।' 

স্টাইল ক্রাফটের শ্রমিক শাহীন আলী আজকের পত্রিকাকে বলেন, 'শ্রমিকেরা কি প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাইতে পারবে না? এখানে রাতে শীতের মধ্যে রাস্তায়, বারান্দায় ঘুমায়া বেতনের দাবিতে আন্দোলন করতেছি। ন্যায্য পাওনার জন্য কেন আমার আন্দোলন করতে হইব? জানি না আরও কত দিন এই ভাবে থাকতে হবে।' 

দিনে একবেলা খেয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন বলে শ্রমিক ইয়াসমিন আক্তার নূপুর বলেন 'এইখানে থাকার আমাদের কোন ইচ্ছা নাই। দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা এই সমস্যার সমাধান চাই। কাপড়চোপড় নাই, কাঁথা নাই, ঠান্ডায় গলা ব্যথা হয়ে গেছে। একটা ছালা পাইলে তাতেই ঘুমাইতেসি। মেয়ে জুতা চাইছে, খালি হাতে বাড়িত গেলে মেয়ে যখন জুতা চাইব তখন কি কমু? '

আন্দোলনের শ্রমিক প্রতিনিধি আফরিন জানান, সম্পূর্ণ বকেয়া বেতন পরিশোধ না করা পর্যন্ত শ্রমিকেরা শ্রম ভবন ছাড়বেন না। তিনি বলেন, 'শ্রম প্রতিমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন তিনি দ্রুত সমাধান করবেন। পূর্ণ বকেয়া না দেওয়া পর্যন্ত আমরা শ্রম ভবন ছাড়ব না। ন্যায্য পাওনার জন্য ৬ মাস ধরে যে আন্দোলন করছি তা বর্বরতাকেও হার মানায়। বিভিন্ন জায়গা থেকে সাহায্য উঠায়া আমাদের দিলে খাওয়া হয় নাইলে হয় না। অনেকেই অসুস্থ, ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হইছে। টাকার অভাবে চিকিৎসা হচ্ছে না।' 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত