Ajker Patrika

গাছের গায়ে রঙিন জামা

মো. রিয়াদ হোসাইন, কালীগঞ্জ (গাজীপুর)
আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২১, ১২: ২৬
গাছের গায়ে রঙিন জামা

সবুজ পাতা, রঙিন ফুল—গাছের শোভা তো চোখজুড়ানো। কিন্তু সে শোভা উপভোগ করতে তো চোখ তুলতে হয় আকাশপানে। চোখ বরাবর গাছের গোড়ার দিকে দেখেছেন, কেমন ধূসর না? তাইতো বিশেষ বিশেষ উপলক্ষে চুন মাখিয়ে সাদা রং করা হয় গাছের গোড়ায়। কিন্তু সাদার বদলে গাছের গায়ে এমন রঙিন জামা পরানোর দৃশ্য সচরাচর চোখে পড়ে না।

গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চত্বরে দাঁড়িয়ে থাকা শতাধিক গাছের দিকে তাকালে এখন সিট কাপড়ের রঙিন জামার কথাই মনে হচ্ছে। সে জামায় কত রং-বেরঙের আলপনা।

শুধু রঙের খেলাও নয়, এতে মিশে আছে ইতিহাস-ঐতিহ্য। দেখে মুগ্ধ হচ্ছে বাইরে থেকে সেখানে যাওয়া মানুষ। আর সেখানে যাঁরা কাজ করেন, দিন শেষে ক্লান্তি মুছে তাঁদের মনে ফুরফুরে ভাব এনে দিচ্ছে এ দৃশ্য।

এমন চিত্রকর্মের চিন্তা এসেছে কালীগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শিবলী সাদিকের মাথা থেকেই। তাঁর উদ্যোগেই গাছগুলোকে এমন সুন্দরভাবে সাজিয়ে তুলেছেন স্থানীয় শিল্পী আহসান হাবীব সাজু। তাঁর সহযোগী হিসেবে ছিলেন আরেক শিল্পী আয়নাল হোসেন।

সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলা পরিষদ চত্বরে ছোট-বড় শতাধিক ফলদ ও বনজ গাছ আছে। কোনোটা মোটা আবার কোনোটা সরু। সব কটি গাছের গোড়া মুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে রঙিন জামায়। গাছের ভিড়ে দাঁড়িয়ে যাওয়া কিছু বিদ্যুতের খুঁটির ভাগ্যেও জুটেছে একই রকম রঙিন জামা। এসব জামায় গ্রামবাংলার বিভিন্ন মোটিফের পাশাপাশি আছে শহীদ মিনার, জাতীয় পতাকা ও জাতীয় স্মৃতিসৌধের ছবি। উপজেলা পরিষদে আসা সেবাগ্রহীতা ও সেবাদাতা সবারই দৃষ্টি আকর্ষণ করছে এমন রঙিন চিত্রকর্ম।

উপজেলা পরিষদের বাসিন্দা সমবায় অফিসে কর্মরত আসাদুজ্জামান এরশাদ জানান, পুরো উপজেলা পরিষদকে রঙিন সাজে সাজানো হয়েছে। দেখতে খুব ভালো লাগছে। সারা দিনের কাজের ক্লান্তি যেন নিমেষে ভুলিয়ে দেয় চিত্রকর্মগুলো।

শুধু বাহারি রং নয়, দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যও ঠাঁই পেয়েছে রঙের বিষয়বস্তুতে। গাজীপুরের কালীগঞ্জেউপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে সেবা নিতে আসা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোস্তফা মিয়া বলেন, ‘বয়স হয়েছে, তারপরও এ চিত্রকর্ম দেখলে শৈশব-কৈশোরে ফিরে যেতে ইচ্ছা করে। কাজটা খুবই ভালো লাগছে।’

চিত্রশিল্পী আহসান হাবীব সাজু কালীগঞ্জ উপজেলা মহিলাবিষয়ক অফিসে কাজ করেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার হোসেনপুর গ্রামে। গাছের গায়ে চিত্রকর্মের অভিজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রকৃতির সঙ্গে গাছ আর মানুষের যে সম্পর্ক, তা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। প্রকৃতি বাঁচলে মানুষ বাঁচবে, বাঁচবে পাখি ও জীবন।’

আর শিল্পী আয়নাল হোসেন জানান, কালীগঞ্জে তাঁর একটি আর্টের দোকান রয়েছে। নানা ধরনের সাইনবোর্ড বা দেয়াললিখনের কাজ করেন তিনি। কিন্তু এ কাজটিতে সহযোগিতা করতে পেরে তিনি খুবই খুশি হয়েছেন।

গাছের গায়ে রং করার চিন্তা যাঁর মাথা থেকে এসেছে, সেই ইউএনও শিবলী সাদিক জানিয়েছেন এই রঙের খেলা মানুষের মন ভালো করতেই। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সারা দিন কাজে অনেক ব্যস্ত থাকেন। দিন শেষে ক্লান্তি নিয়ে বাসায় ফেরার জন্য বেরিয়েই যখন গাছের গায়ে রঙের খেলা দেখবে, তখন মন এমনিতেই ভালো হয়ে যাবে। আবার যাঁরা নানা কাজের জন্য এখানে আসেন, ব্যস্ততার মধ্যেও তাঁদের মনে ক্ষণিকের প্রশান্তি দেবে এ চিত্রকর্ম।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত