Ajker Patrika

চাঁদা না পেলেই মামলা দেন তিনি

  • মামলার বাদী চেনেন না আসামিদের, দেখিয়ে দিলেন আইনজীবীকে।
  • আসামিদের অভিযোগ, চাঁদা না পেয়ে আইনজীবী জিয়াউল আসামি করেছেন।
  • বাবা চাঁদা না দেওয়ায় ১১ বছরের ছেলেও আসামি।
নাঈমুল হাসান, টঙ্গী (গাজীপুর) 
জিয়াউল হক
জিয়াউল হক

রাজধানীর উত্তরা পূর্ব থানায় শিলা আক্তার নামের এক নারী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ২৭১ জনকে আসামি করে মামলা করেন। ওই মামলার ১৬৫ নম্বর আসামি গাজীপুর মহানগরীর ৫০ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য মুরাদ হোসেন বকুল। তিনি অভিযোগ করেছেন, গাজীপুর মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল হক ওরফে জি এস স্বপন তাঁর কাছে চাঁদা চেয়ে না পেয়ে তাঁকে মামলায় ফাঁসিয়েছেন।

মামলার আসামিদের চেনেন কি না, এমন প্রশ্নে বাদী শিলা আক্তার বলেন, ‘এ বিষয়ে স্বপন (জিয়াউল হক) ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলেন।’

স্থানীয় ও দলীয় সূত্র বলেছে, জিয়াউল হক ওরফে জি এস স্বপন গাজীপুর মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তবে বর্তমানে কোনো দলীয় পদে নেই। পেশায় আইনজীবী। দলীয় পদে না থাকলেও তিনি এলাকায় আধিপত্য দেখান বিএনপির পরিচয়েই। টঙ্গী পূর্ব থানার তথ্য বলছে, জিয়াউলের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগে দুটি মামলা রয়েছে।

স্থানীয় সূত্র আরও বলেছে, আওয়ামী লীগ শাসনামলে জিয়াউল পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি পরিচয়ে চাঁদাবাজি করতেন। তাঁকে প্রায়ই দেখা যেত গাজীপুর সিটির সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গেও। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভোল পাল্টেছেন তিনি। ‘চাঁদা বাণিজ্যের’ নতুন কৌশলও উদ্ভাবন করেছেন। এখন তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গাজীপুর ও রাজধানীর বিভিন্ন থানায় মামলা দিয়ে আসামিদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

উত্তরা পূর্ব থানায় ৭ এপ্রিল করা হত্যাচেষ্টা মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে এ মামলার ১৬৫ নম্বর আসামি মুরাদ হোসেন বকুল বলেন, ‘আমি পেশায় দলিল লেখক এবং টঙ্গীর দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক। কয়েক মাস আগে আমি স্থানীয় আওয়ামী লীগ সমর্থক রশিদ মোল্লার জমিসংক্রান্ত বিষয়ে কাজ করে দিই। এর জেরে স্বপন আমার কাছে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দেওয়ায় গত এপ্রিলে আমাকে আওয়ামী লীগ নেতা পরিচয় দিয়ে উত্তরা পূর্ব থানায় মামলাটি করান। টাকা দিলে মামলা থেকে আমার নাম বাদ দেবেন বলে জানিয়েছেন।’

এদিকে শুধু মুরাদ হোসেনই নন, চাঁদা না দেওয়ায় জিয়াউল অনেককেই মামলায় ফাঁসিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তাঁদের একজন টঙ্গীর দত্তপাড়া এলাকার বাসিন্দা কবির হোসেন। পেশায় ঠিকাদার। নতুন আইফোন কিনে দিতে ওই ঠিকাদারকে চাপ দেন জিয়াউল। কবির রাজি হননি। এরপর উত্তরা পূর্ব থানার একটি মামলায় আসামি করা হয় তাঁকে।

টঙ্গীর ব্যবসায়ী হামিদ মোল্লা অভিযোগ করেন, জিয়াউল তাঁর কাছেও চাঁদা দাবি করেছিলেন। না পেয়ে তাঁর সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া ১১ বছরের ছেলে সাদ মোল্লাকে ১৯ বছর বয়সী কলেজশিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ সদস্য বানিয়ে মামলায় ফাঁসিয়েছেন তিনি। হামিদ মোল্লার বিরুদ্ধেও পাঁচটি মামলা হয়েছে।

তবে মামলা দিয়ে চাঁদাবাণিজ্যের অভিযোগ অস্বীকার করে জিয়াউল হক বলেন, ‘টাকা না পেয়ে মামলায় আসামি করার বিষয়টি মিথ্যা। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা চাঁদাবাজির মামলা হয়েছে।’

গাজীপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) হাসিনা আক্তার জাহান বীথি (মোবাইল ফোনে) বলেন, ‘জিয়াউলের বিরুদ্ধে কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেব।’

গাজীপুর মহানগরী পুলিশের অপরাধ (দক্ষিণ) বিভাগের উপকমিশনার এন এম নাসিরুদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মামলায় আসামি করে টাকা আদায়ের বিষয়টি জেনেছি। জিয়াউল হকের বিরুদ্ধে দুটি চাঁদাবাজির মামলা রয়েছে। তিনি জামিনে রয়েছেন। মামলা দুটি তদন্তাধীন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত