Ajker Patrika

হয়রানি রোধে যৌনকর্মকে পেশা হিসেবে স্বীকৃতির দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
Thumbnail image

যৌনপল্লী উচ্ছেদ হওয়ায় ভাসমান যৌনকর্মীর সংখ্যা বাড়ছে। যৌনকর্মীরা আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য, সন্ত্রাসী এমনকি এলাকাবাসীর কাছেও বিভিন্নভাবে নির্যাতিত এবং হয়রানির শিকার হচ্ছে। তাঁদের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। যৌনকর্মকে পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে এই কাজের জায়গাটিকে মানবিক এবং স্বচ্ছ করা প্রয়োজন। 

গতকাল বুধ ও আজ বৃহস্পতিবার (১-২ মে) গাজীপুরের একটি রিসোর্টে অনুষ্ঠিত ‘যৌনকর্ম: পেশা বা কর্ম? নারী আন্দোলনের অমীমাংসিত বিষয়’ শীর্ষক কর্মশালায় আলোচকেরা এসব কথা বলেন। নারী অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন নারীপক্ষ এবং সেক্স ওয়ার্কার্স অ্যান্ড অ্যালাইস সাউথ এশিয়া যৌথভাবে এই কর্মশালার আয়োজন করে। 

কর্মশালায় রংপুর থেকে আসা যৌনকর্মী ইসমত আরা আলো বলেন, ‘রংপুরে কোনো যৌনপল্লী নেই। যৌনকর্মীরা রাস্তায় থাকেন। তাদের নানাভাবে নির্যাতিত হতে হয়। আমরা নিজের আনন্দের জন্য যৌনকর্ম করি না। পেটের টানে করি। ৫০ টাকা পেলে ১০ টাকা দিয়ে কনডম কিনি না। এক কেজি চাল কিনি।’

গবেষক ও নারীপক্ষের সদস্য মাহীন সুলতান বলেন, ‘যৌনকর্মীরা দেশের নাগরিক, তাদেরও মৌলিক অধিকার আছে। যৌনকর্মীদের দাবি আদায়ে যখন আন্দোলন শুরু হলো, তখন যৌনকর্মীদের মধ্যেও এই ধারণাটা ছিল না যে এটা একটা কাজ। তারা ভাবতো তারা নষ্ট। আন্দোলনের একটা বড় অর্জন এখন সবাই বলে এটা যৌনকর্ম। যিনি এই কাজটা করেন, তিনি যৌনকর্মী, পতিতা নন।’

নারীপক্ষের সদস্য অধ্যাপক ফিরদৌস আজীম বলেন, ‘যৌনকর্মীদের সঙ্গে এক প্লেটে খাবো না। এক সঙ্গে বসব না। এই ধারণা ভাঙতে হবে। যৌনকর্মকে ট্রাফিকিংয়ের সঙ্গে মিলিয়ে ফেলা হয়। দুটো ভিন্ন জিনিস। দেশ থেকে যে ছেলেরা যাচ্ছে, তাদের আমরা ট্রাফিকিং বলি না, বলি কাজের সন্ধানে যাচ্ছে। মেয়েদের ক্ষেত্রে বলি ট্রাফিকিং। এই বিষয়গুলো থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।’

নারীপক্ষের সদস্য শিরীন হক বলেন, ‘আমি আর যৌনকর্মী একই জায়গার মানুষ। আমাদের মধ্যে কেবল একটা লাইন আছে। আমি কিছু সুযোগ-সুবিধা নিয়ে জন্মেছি বলে আমি এখানে, আর সে কিছু সুযোগ-সুবিধা নিয়ে জন্মায়নি বলে সে ওখানে। তার জীবনে কিছু দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে সে ওখানে। সেও নারী। আমিও নারী। তাহলে তার সঙ্গে সংহতি জানাতে সমস্যা কোথায়।’ 

উৎস বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক মাহবুবা মাহমুদ বলেন, ‘যৌনকর্মকে পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে এই কাজের জায়গাটাকে মানবিক এবং স্বচ্ছ করা দরকার।’ 

বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট সালমা আলী বলেন, ‘আমাদের যৌনকর্মীদের পাশে দাঁড়াতে হবে। তাঁদের দাবি আদায়ে সোচ্চার হতে হবে।’ 

কর্মশালায় অংশ নেওয়া যৌনকর্মীরা তাঁদের জন্য সরকারের কাছে পৃথক জায়গা বরাদ্দের দাবি জানান। একই সঙ্গে এই কর্মে জড়িত নারীদের স্বাস্থ্যসেবা এবং তাঁদের সন্তানদের জন্য শিশু যত্ন কেন্দ্রের ব্যবস্থা করার আহবান জানান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত